Tuesday, 29 September 2015

ফিরে আসি দিন শেষে ফিরে আসি ঘরে
যদিও ফেরে না স্রোত ফেরে না সময়
ফিরে যেতে হয় সব ফুরানোর পরে
সময়ের কড়ি হাতে দাম দিতে হয়
ফিরে আসি স্থিতিতে প্রলয়ের পরে।

ফিরে আসি দূর থেকে ফিরে আসি আমি
যতদূর যেতে চাই তত ফিরে আসা
পথে পথে ফেলে আসি বহু নোংরামি
ক্লান্ত মনেতে থাকে ফেরার পিপাসা
ফিরে আসি হিমাদ্রির ঢালু পথ নামি।

ফিরে আসি গলিতে হাইওয়ে থেকে
লেগে থাকে ফিরবার আলিঙ্গন রেশ
স্পর্ষের গন্ধ গায়ে মেখে মেখে
রেখে আসি চুম্বন, কুন্তল, কেশ
ফিরে আসি বিদায়ের স্মৃতি মনে রেখে।

ফিরে আসি পদ্মার বাঁকে বাঁক ঘুরে
যা দেখার দেখে চোখ কালিন্দীর রুপে
ফিরে আসি নগরের হানি সিং সুরে
একঘেয়ে বেজে যায় অন্তহীন লুপে
ফিরে আসি মাটিতে মেঘে মেঘে উড়ে।

ফিরে আসি নিজের কাছে উত্তর পেতে
কেন এত পথ চলা ফিরে যেতে হলে
ভালো আছি, ভালো আছি- বলে যেতে যেতে
আমিতো জীবন্ত বাঁচি মৃত্যুর কোলে
ফিরে আসি জীবনের ধোঁকা খেতে খেতে...

- অনি
৩০/০৯/১৫
রাত- ১ঃ১২

Saturday, 26 September 2015

আমার রাতের ঘুম চুরি করে নিয়ে গেছে আকাশের তারা;
গৃহস্থের চোখ নিয়ে ছাদে বসে জাগি নিশাচর বিভাবরী,
গুপ্তধনের মতো তারা নিয়ে মহাকাল করে নাড়াচাড়া,
রাতের বাতাসে ফিসফিস করে জ্বীন - ভূত - পরী।
মহাকাল জানে না কাকে বলে কাল- মহাকালের ঘড়ি;
ঘড়ির কাঁটায় আমি মিনিটে, সেকেন্ডে মহা দিশাহারা ,
অনুরাধা, কালপুরুষ, লুব্ধক, হীরের কনার মতো যারা,
ছুটে আসে কিনা হাতে- তাই দেখে রাত-ভোর করি।
আকাশের হয়েছে বয়েস তেরশো কোটি বছরের বেশি;
চিন্তার এই বাইরের সময়ে সে ছিলনা বসে এতদিন ,
আমাদের আবেগের চেয়ে অনেক বেশি ভীষণ আবেশি;
এই আকাশের অঞ্চল পৃথিবীর চেয়েও অনেক প্রবীণ ।
অনেক গোপন কিছু তারা জানে- আমাদের বহু বহু ঋন -
আকাশের নক্ষত্রের কাছে , - আমাদের শিকড়ের বীজ
এইসব তারাদের ধাঁধাঁয় - সত্য রয়েছে আঁধারে অন্তরীণ;
যেমন লুকানো কাদা-মাটি ঘাসের তলে হীরের খনিজ ,
তারার দেশে তেমনি লুকিয়ে তাঁরা আসে দিনের পর দিন;
আমার ঘুম চুরি করে - পলকে ঝলকে এসে হয়েছে বিলীন। 


বাতাসের কানে কানে প্রতিবার দিয়ে গেছে সভ্যতার ধারা
আমাদের সাথে থেকে চুপিচুপি হয় যারা আকাশের তারা।

- অনি।
২৬/০৯/১৫
সন্ধ্যা - ৬ঃ৫২
(আকাশে প্রকান্ড একটি চাঁদ উঠেছে, যার কিনারায় এত ধারালো যে অনেকেরই হৃদয় কেটে জোছনা ক্ষরন হতে পারে। তাই সাবধানে তাকাবেন। আজ চাঁদ ভীষণ ধারালো।)
একদিন ঘুম থেকে উঠে-
আমি বদলে যাবো ঠিক,
বেরসিক জীবনে-
হয়তোবা হবো আমি -
জীবন রসিক।

একদিন ভোর বেলা আকাশের ঘুম ভাঙ্গা আলো
আমাকে করে দেবে পৃথিবীর সবথেকে ভালো ।

আমার অমানুষী যতো-
সেই ভোরের আলোয়
আমার হাতেই হবে - আহত-নিহত।

সেইদিন- সে সকাল বেলা
পুরবের আলো হবে
পশ্চিমের চেলা।

সুর্যের মতো অন্ধকারে উঠে এসে
আলো জ্বেলে দেবো আমি জীবনেরে ভালোবেসে।

নিজের সবটুকু করে দিয়ে ক্ষয়;
রাক্ষসেরে করে যাবো
মানবতাময়।

সেইদিন ভোরবেলা ,
ঘুম ভাঙা চোখ -
হয়তো দেখবে প্রথম ক্ষমার আলোক।

হয়তো সবার ভুল, মানুষের পাপ-
মানুষের হয়ে আমি
করে দেবো মাফ।

আমিইতো হতে পারি সকলের গুরু
আমার সকাল যদি
একদিন আমি করি শুরু।

আমি যদি জেগে উঠি সূর্যের মতো -
কেটে যাবে -
আঁধারের পায়ে লাগা ক্ষত।

আলো পেয়ে ভূবনের ছোট-বড় প্রান
কেউ যদি ছোট হয়,
কেউ বা মহান ,
আমি কেন ছোট হবো মানুষের কুলে ?
নিয়তির দায় নেবো মানুষের ভুলে !

সবাই বলুক কথা,
কথা যতো আছে -
তারপর যাবো আমি শিশুদের কাছে ,
শিশুরা বললে ভালো -
সেই কথা খাঁটি;
শিশুতোষ মনে হবে কথা কাটাকাটি ।

এইদিন- এইদিন
আজ ভোর বেলা-
শিশুটির সাথে হোক মানুষের খেলা ।

- অনি
২৫/০৯/১৫
ভোর- ৭ঃ১৮

Thursday, 17 September 2015

একটি কথা বলবো বলেই এত কথার জাল বিছানো
সেই কথাটি নানান ভাবে বলে গেছে গীতবিতানও ।

এডামও তা বলতে চেয়ে হাওয়ার হাতে ফল খেয়েছে,
লালন বাউল ঘুরে ঘুরে একতারায় সে গান বেঁধেছে ।

ট্রয় পুড়েছে সেই কথাতে, একিলিসের মরন হেলেন;
মমতাজের দুই চোখেতে- শাহজাহান তা দেখেছিলেন ।

মায়ানরাও গড়লো শহর যেই কথাটি আজো আছে ,
চাচাপয়ান ইনকারা যা শুনলো মাচুপিচুর কাছে ।

রাধা-শ্যামের যুগল রুপে যেই কারনে মাথা নোয়াই,
পুর্ব দ্বীপের মাটির ভিতর সেই কারণে গাঁথা মোয়াই।

ইজিপ্টের ঐ পিরামিডে সেই কথাতে ফারাও মমি ,
ঐ কথাটি জেনে গিয়ে শান্ত আছে প্রাচীন রোমই ।

সাতশ কোটি মানুষ বাঁচে একটিবার তা শুনবে বলে ,
চন্দ্র শোনায় আকাশকে যা বলার মতো সময় হলে।

সন্ধ্যা তারা শুকতারা হয় যে কারনে সেই কথাতে ,
ফুলের গন্ধ সুতীব্র হয়- বলতে সেটা মধ্য-রাতে ।

সব কবিরা কাব্য লিখে কথাটিকেই লিখতে চেয়ে ,
সব ছেলেরা সেটাই পড়ে সেটাই খোঁজে সকল মেয়ে ।

যে কথাটি বলতে চাইছি সে কথাটি তুমিও জানো ,
একবার সেটা বলে দিলেই - বদলে যায় অবস্থানও।

- অনি।
১৭/০৯/১৫
দুপুর- ২ঃ১২

Friday, 11 September 2015

মাঝরাতে এসে থামলাম আমি আঙিনার কাছাকাছি কি ?
অন্ধকারে ডাকছে ঝিঝিগুলি, এইতো সেই চেনা জোনাকি!
হারিকেনের আলোটাও অর্ধেক উঠোনটায় জ্বলছে একধারে
দাঁড়িয়ে আছি একটু দূরে- গৃহ প্রাঙ্গনের নিকট অন্ধকারে ...

চন্দ্রহীন নিশীথে - তোমরা সবাই ঘুমিয়ে গেলে ঘরে-ঘরে,
পুকুরের মাছ ঘাই দেয়- সারারাত হাওয়ারাও ফিসফাস করে,
সপ্তর্ষির প্রশ্নে - নক্ষত্রগুলোও যখন খুব ভীষন এলোমেলো,
তার উত্তর খুঁজে পেতে পেতে- আমারো বড্ড দেরি হয়ে গেলো।
ক্লান্ত অবসন্ন পা আমার, দুই চোখ রক্ত জবার মতো লাল,
বুকের পাজরে শেষ দম, ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে মুখ আর গাল,
থেতলানো মাথায়, রক্তাক্ত মগজে - আমি ফিরেছিলাম শেষে;
আমার বাড়ির অনেক কাছে - তোমাদের সবাইকে ভালবেসে,

মাঝরাতে এসে থামলাম আমি আঙিনার কাছাকাছি কি ?
অন্ধকারে ডাকছে ঝিঝিগুলি, এইতো সেই চেনা জোনাকি!
হারিকেনের আলোটাও অর্ধেক উঠোনটায় জ্বলছে একধারে
দাঁড়িয়ে আছি একটু দূরে- গৃহ প্রাঙ্গনের নিকট অন্ধকারে ...

- অনি
১২/০৯/১৫
রাত- ৩ঃ০৩
সকল জবাব রেখে দৃষ্টির সামনেই
অদেখা ভজন করি দৃশ্যের দামনেই?
ভয় লাগে যা তাতে প্রেম কত মিশাবো?
ভক্তির বিছানাকে ভয়ে কেন বিছাবো?
অজানা জানিনা তাই জানাটাও মিথ্যে?
কেমনে সবার হবো ভুগে একাকিত্বে?
সাগরে লবন সেতো নিজ দোষে নোনা নয়
সল্ট আছে বলেতো সে জলধি সাগর হয়
মধু সে কি অপরাধি সাগরের কাছে?
মৌহুল'তো ফোটে না নোনা জল মাছে
লক্ষ জাতের মীন নোনা মিঠা জলে
সবাই ইলিশ হলে জাত যেতো চলে
সবাই ইলিশ নয় সেটা কি মাছের দোষ?
সাগর নিজেই জানে এ্যামিবাতে কটা কোষ
লক্ষ বছর গেছে আরো যাবে অবিরত
সাগরে হবেনা বিচার পুটি কি তিমির মত?
সাগর চাইতো যদি সকলই ইলিশ মাছ
তুলশী না ধুতরা সব হতো খেজুর গাছ

সব যদি আমি হই তোমাকে কোথায় পাই?
ভিন্ন বলেই তুমি- তোমাকেই পেতে চাই।

- অনি
০৯/০৯/১৫
সকাল- ৭:৪৬

Monday, 7 September 2015

মনরে তুই কলেমা পড়
খোদার জাহানে কইরা বসত
খোদার পেয়ারা রসুল ধর
দুনিয়া ছাইড়া তওবা কর।

মানুষ মরে কোন্‌ সিরিয়ায়
হায়াত মোয়ুত রাখছে খোদায়
তুই গোছা তোর আখের ঘর
অযু কইরা কোরান পড়।

গাড়ি বাড়ি সোনা দানা
মুমিন বান্দা কান্দে না না
আখের তোর হইবো ফানা
দোযগ হইবো কবর তর
আল্লাহর পথে জিহাদ কর ।

এই দেশ তোর দেশ নারে
ডাকে মক্কায় মদিনারে
নবীর দেশে গেলে পরে
জুড়াইতাম মন প্রান অন্তর
দেখতাম কাবা খোদার ঘর।

পড়ালেখা কইরা কি লাভ
আছে যে তোর কোরান কিতাব
বিধর্মিদের বিপথ ছাইড়া
নবীর কোরান সুন্না ধর
কলেমা থাকলে কিসের ডর।

মুক্তিযুদ্ধ যুদ্ধ নারে
নফস্‌ দমাইতে কয়জন পারে
আল্লহর পথে শহীদ হবি
বিনা হিসাবে বেহেস্ত র'বি
কারবালারে ইয়াদ কর
আল্লাহু আকবার জিকির কর।  

ডাক্তার বিজ্ঞানী হাবিজাবি
দুইদিন পরে কবরে যাবি
হইতি যদি এক সাহাবী
চোদ্দ জনম ভাগ্যের জোড় 
হাবিয়া হইতো হারাম তর
মনরে দ্বীন এলেম কর।

হারাম কি তা খবর নে
হালালে জের যবর দে
উম্মতে মোহাম্মদি হলে
কোরান সুন্নার পথে চলে
পুলসিরাতের খোরাক ভর
মসজিদ বানা আসল ঘর।

এই দুনিয়া পাপেরই দেশ
হিন্দু খ্রিস্টান সকলে শেষ
কলেমা যার কলবে নাই
পুলসিরাত পাড় হবেনা ভাই
কাঁদবে অনন্ত জীবন ভর
ভাইরে আমায় মুমিন কর
মনরে তুই কলেমা পড়।

মুসলমান আজ বিভিক্ত তাই
তৌহিদি জনতার জাগরণ চাই
ইহুদি নাসারার চক্রান্ত সব
শরিয়ার আইন তোল তোল রব
মানুষের আইন বন্ধ কর
কোরান থেকে ফতোয়া পড় ।

যাস না তোরা মালাউ্নের দেশে
মুসলমানের দেশে থাকি মিলেমিশে 
আমরা ভাই ভাই আর সবাই পর
সুরা আল মায়েদাহ পড়
অশেষ নেকি হাসিল কর।

খোদার প্রেমে ভীত হবি
আশেক খোদার পেয়ারের নবী
নিজের পাপে পুণ্য ভর
অজানা পাপে কান্না কর
সকল ইচ্ছা খোদার হাতে
তবু নিজের করা পাপের সাথে
জ্বলতে হবে জনম ভর
মনরে তুই কলেমা পড়।

- অনি।

০৭/০৯/১৫
বিকেল- ৫ঃ০৯











 

Sunday, 6 September 2015

সারাৎসার অন্ধকারের পর প্রতিদিনই ভোর আসে
মহৎ, শ্বাশত, অসীম, অনন্ত সৃষ্টির চিরন্তন আকাশে
নির্মল, বিশুদ্ধ সেই সুরে গেয়ে ওঠে প্রকৃতির পাখি
অথচ আলোক সাগর কুলে আমরা ঘুমিয়েই থাকি।

- অনি
০২/০৯/১৫
প্রায় ভোর- ৪:৩২
তুমি যাকে পাখি ভেবে বারবার হয়েছিলে বোকা
সেতো পাখি নয় পাখি নয়,
সেছিল এক কুৎসিত তেলাপোকা।
সভ্যতার আনাচে কানাচে
বেঁচে থাকা কোন এক মহা অর্বাচীন,
উচ্ছিষ্ট ময়লা আর কমোডে যার
তৈলাক্ত খয়েরি রঙের কালচে রাতদিন।
তোমার ঘুমন্ত চোখে ঠোটে গালে
সে উড়ে উড়ে এসে চুমায়
বারবার বারবার..
রাতের অন্ধকারে তারারাও যখন একচোখে ঘুমায়।
তোমার নিঃসঙ্গ বিছানায়
সে ঘোরে ফেরে-
তোমার বুকের স্তনে
পেটে, পিঠে
তোমার গহন দ্বারে- সে ঢোকে আনমনে।
বরং তুমি এই কবিতা পড়ে স্নানে যাও
ধুয়ে ফেলো তেলাপোকার সাথে সহবাসের স্মৃতি
মাটির নিচের লুকানো বাদশাহি মুদ্রাও
ধুয়ে দেখো মুছে যাবে বহু বিকৃতি।
তারপর ঘুমিও আবার,
সেইসব গোপন মুদ্রা চকচক করবে সোনালী বিভায়
তেলাপোকা যদিও মরেনা পারমানবিকতায়,
তথাপি তারা আহত হবে স্নানের অপমানে;
মৃত্যুর চেয়েও কী গভীর? - সেটা তারা জানে।


- অনি
৩০/০৮/১৫
রাত- ৮:৫১
আমি তোমাকে পেতে,
প্রতিটি অমূল্য দিন খরচ করে করে - আমাকেই হারাই।
অথচ তুমি বেঁচে থাকো - তোমার ভাতের প্লেটে।
অথবা তুমি মরে যাও - তোমার বিছানায়।
আর আমার বেঁচে থাকা?
সে মরে যায় তোমার অবহেলায়... 


- অনি
২৮/০৮/১৫
প্রায় ভোর - ৪:২৮
আগুনের মনে এত ঘৃনা নেই সব দহনের
আকাশও জানে তারার চিতা সুপারনোভায়
তারাও দেখেছে আকাশ ফুরায় কোন সীমানায়
শুধু অসীম তোমার মনের ধাঁধাঁ অহং মনের।

ফোটন জানে আলোর গতি আর বাড়েনা
রবীন্দ্রনাথও কাব্যে আকেঁন মেধার সীমা
লিটল বয়ই সবুজ বানায় হিরোসিমা
তোমার তুমিই ওসব ভাবার ধার ধারেনা।

ভালবাসার খুব বেদনার কি গান জানো?
বোধ বিবেকের মাপ কাঠিটা কোথায় পাওয়া?
মিরর টাইলস, থাই জানালায় লেলুয়া হাওয়া?
গাওনি বিভাস, আশাবরীর একটি গানও?

সীজার দিয়ে নিজের মাপেই প্যাটার্ন আঁকো
তোমার চোখের চশমাটাও ধ্রুব লেন্স নয়
খালি চোখে যারা মরিচিকা দেখে ভুল তারো হয়
ঈশ্বরেরও ভুল হয় কত - খবর রাখো?

প্রতি রাতে হয় প্রতিটি দিনের স্বপ্ন কবর-
সকালে হুজুরে ঠিক করে দেন জের আর যবর।

-অনি
২৬/০৮/১৫
ভোর রাত - ৪:১৪
সময় তার ব্যাগ প্যাক করছে
জোছনা নিয়েছে গুটিয়ে
সুর্যের আলো ঠান্ডা হলেই ব্যাগে ঢুকবে
কুয়াশা আগেই ব্যাগে
বর্ষাটা সবে ঢুকলো
তোমার সাথে আর দেখা হবেনা
সময় দেবেনা সময়
শৈশবের বাড়ি
বাবার কবর
এখনো জীবন্ত মা
আমার শহর
বন্ধুরা
সব ব্যাগে ঢুকে যাবে তাড়াতাড়ি
অনেক অসমাপ্ত আঁকা ছবিগুলো
রবীন্দ্রনাথের গান
যাক, ব্যাপার না
অন্ধকার থাকলেই হবে
ভাল কথা,
নাকি অন্ধকারো দেখবো না আর
সময় বড় পটু হাতে ব্যাগ গোছাচ্ছে
আমি জানি-
এই ব্যাগটি সময় কাকে দেবে
আমি অপেক্ষা করি...


- অনি
২৫/০৮/১৫
ভোর রাত - ৪:১০
এক আশ্চর্য কথা নিয়ে ঘুরছি আমি।
যেই কথায়,
কসমিক এগ থেকে অতিরঞ্জিত বিভা-
দেখেছিলো প্রথম অন্ধকার,
প্রথম সাগরের তলে-
যেই কথা শুনেছে এ্যামিবা।

যে কথা শ্বশ্মান চিতার ছাইয়ে-
বাতাসে বাতাসে ওড়ে,
ধূলার গায়ে গায়ে যে-
ফোটন কনার মনে ঘোরে।
সেই আশ্চর্য কথাটা- কী?
রাতের অন্ধকারে
নিরব জোনাকী-
যেই কথাটি-
গোখরার কানে কানে বলে,
পদ্মগোখরা- তারপর-
তার খোলস পাল্টানোর পর
যে কথা ছড়িয়ে দেয় তার একান্ত অঞ্চলে।
সেই আশ্চর্য কথা আমার হয়না তোমারে বলা,
শরীরে যদিও রমনীয় তুমি অথচ হৃদয়ে বৃহন্নলা।
তোমার কান তুমি পেতেছো দেয়ালে
দুই চোখে প্রথার পরেছে ছানি
ক্যামিকেলের প্রলেপ লাগানো গালে
চুমু খেয়েছে সনাতন দাদি-নানি।
আভিজাত্যের শ্যাওলা ধরা অন্তর প্রকোষ্ঠে ধূলোবালি
কলমের নিবের মতো মন-
স্বাক্ষরে অনপনেয় কালি।
এক আশ্চর্য কথা নিয়ে-
আমি ঘুরছি তবুও একা,
বলতে পারি যাকে- তার সাথে হয়নি যদিও দেখা।
জলের ভিতরে বহুবার সেই কথায় কেঁদেছে সরীসৃপ
ইজিপ্টের পিরামিডে হাড়িয়ে গেছে-
হাজার বছরের সেই পুরাতন হায়ারোগ্লিপ।
যেই কথা পিরামিডের রহস্যের ব্যাখ্যাতিত কারুকার্য
এঁকেছিল দ্রাবিড়, মঙ্গলিয়ড, ককেশীয় অথবা আর্য
সেই কথাটি আমাদের কক্ষপথে -
বারবার হাত বুলিয়েছে আমাদের মৌলিক ক্ষতে
কাটা বিঁধেছিল যতবার সূর্যের গলায়
ততবার শুশ্রূষাকারিণী সে চন্দ্রের কলায়।

- অনি
২৪/০৮/১৫
রাত - ৩:৫৪
আমি মিঠা পানি সাঁতরে শেষে নোনা জলে গিয়ে পরলাম
আমি জীবনের ছায়া ভালবেসে বেসে মৃত্যুর হাত ধরলাম।

- অনি।
২৩/০৮/১৫
রাত- ১:৫৩
সন্ধ্যার সময় হঠাৎ করে বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পরা শুরু হলো।
বাংলাদেশের আবহাওয়ার এখন আর কোন ঠিক ঠিকানা নেই। ভাদ্র মাসের তাল পাকা গরমেও শ্রাবন মাসের ঢল নামছে। আমি বৃষ্টি দেখে দৌড়ে পাশের এক চায়ের দোকানে চট করে ঢুকে গেলাম। ছোট্ট একটি ছাউনির নিচে প্রায় চোদ্দ-পনের জন মানুষ। আমি একটু ঠেলেঠুলে ভিতরের দিকে ঢুকলাম। ঝমঝম না - টাসটাস শব্দে বৃষ্টি পরেছে। পানির ফোটার সাইজও মাশাল্লাহ বয়লার মুরগীর মতো, হাইব্রিড। যারা বাইরের দিকে দাঁড়িয়ে সবার প্যান্ট প্রায় অর্ধেক কাদার ছিটা লাগছে। বৃষ্টির ফোটা কাদা ছিটাচ্ছে। আর তারা মুখ দিয়ে বিচিত্র ভাবে বিরক্তি প্রকাশ করছে। আমি ভিতরে ঢুকে ভেবেছিলাম বেঁচেছি- কাদা ছিটবেনা। এখন দেখছি হালকা ভেজা মানুষের শরীর থেকে পাকস্থলী বের হয়ে আসার মতো চুকা চুকা (টক টক) গন্ধ আসছে। মাথা ঝিমঝিম করছে আমার গন্ধে। মানুষের শরীরের গন্ধে তাহলে সত্যিই নেশা ধরানো ব্যাপার আছে! কবি সাহিত্যিকরা যে একেবারে অনভিজ্ঞ না সেটা বেশ বুঝতে পারলাম। চায়ের দোকানদারটি অর্ডার বোধক দৃষ্টিমেখে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।
চায়ের দোকানদাররা বাংলাদেশে সাধারনত জাতীয় মামা উপাধি ক্যারি করে, তাই আমিও তাকে বললাম - মামা একটা চা দেন। একটু কাঁচা পাত্তি উপরে ছিটা দিয়া দিয়েন। উনি ঘোলা ময়লা পানিতে (গজনি ছবিতে যেমন দেখায়) কাপ চুবিয়ে কাপে লিকার ঢালতে লাগলো। আমার পেট হালকা পাঁক দিয়ে উঠলো {বমির উদ্রেক(সুশীলদের জন্য )}।
মনকে এবার একটু অন্যদিকে ফেরানো দরকার মনে হলো।
লোকজন এখানে পার্লামেন্ট বসিয়ে দিয়েছে। সবাই বিরোধী দল। এখানের পার্লামেন্টে সরকার দল ওয়াক আউট করেছে। সব কিছু নিয়েই সমালচনা হচ্ছে। সেইখানেও কেউ একমত না। মনে হচ্ছে ঐক্যমত এখানে - না ঘার কা না ঘাট কা। আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগলো। বেশ মজার তর্ক জমেছে।
মামা নেন।
আমি চমকে চায়ের দোকানদারের হাত থেকে চায়ের কাপটা হাতে নিলাম। লোকজনের কথা শুনতে শুনতে আনমনে চুমুক দিলাম। আহ্‌ ! চা'টা বেশ লাগছে। আয়েশ করে আরেকটা চুমুক দিয়ে কথা শুনতে লাগলাম।
= এক বুড়ো মুখে পানঃ এমুন দিনে কেউ হালায় এইরম বৃষ্টি দেখছে ? দেশটা যাইতাসে হালায় কোন মিহি- এটা বলতে বলতে পানের পিক বৃষ্টির পানিতে ফেললো। সেই লাল পিক দোকানে দাঁড়ানো লোকের দিকেই ভেসে আসতে লাগলো।
= এক ভদ্রলোক সার্ট ইন করাঃ আরো আওয়ামিলীগেরে ভোট দেন এই কথা বলেই সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁঝালো গলায় বললো- আরে মিয়া এইটা কী করলেন ? কমনসেন্স নাই আপনের। ধুর মিয়া। ধুর। পিক এই দিকে ভাইসসা আসতাসে। ধুর।
= এক লম্বা লোকঃ এটা গ্রীন হাউজ এফেক্ট ভাই। আম্রিকাই এর জন্য দায়ী। দেখেননা কী গরম পরে। দেশে ঝড়-বাদলের ঠিকঠিকানা নাই। বলে চারদিকে সমর্থনের জন্যে তাকাতে লাগলো।
= আরেক লোক চশমা পরাঃ চশমার কাঁচ মুছতে মুছতে - এটার সাথে আওয়ামিলীগের কী সম্পর্ক? আপনারা সব কিছুতেই রাজনীতি টেনে আনেন। এটা ঠিক না মোটেই।
= সার্ট ইন করা ভদ্রলোকঃ এইটা কোনও নির্বাচন হইছে ? আপনেই বলেন? গ্যাসে কেউ ভোট দিতে?
= চশমা পরা ভদ্রলোকঃ ঠোট শক্ত করে বলল- বিএনপি নির্বাচনে গেলো না কেন ভাই ?
= লম্বা লোকটিঃ আমি কোথায় আওয়ামিলীগ টানলাম ?
= চশমা পরা ভদ্রলোকঃ বিরক্ত হয়ে বলল- আরে ভাই আপনাকে বলিনাই।
= এক যুবক টী-সার্ট পরাঃ মাথার ভেজা চুল টানতে টানতে বলল- বিএনপি শেষ। নির্বাচন করুক আর না করুক। এরা যুদ্ধাপরাধীদের সাথে আছে। জামাত না ছাড়লে এই দলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। মুসলিম লীগের মতো হবে।
= এক চাচা মিয়াঁঃ ঐ পোলা, তুমি মুক্তিযুদ্ধের কী জানো ? জন্মইতো হয়নাই তোমার। হোনো, মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামিলীগ করেনাই । বিএনপিই মুক্তিযুদ্ধ করছে। সব আওয়ামি শালারা ভারতের দাদা'দের গোলাম। আর বিএনপির শহীদ জিয়া হচ্ছে সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা।
= শুকনা লোক উনিও চশমাওয়ালাঃ হতভম্ব গলায় বলল- চাচা শেখ মুজিবেরে ভুইলা গেলেন ? আওয়ামিলীগ কোন আন্দোলন করেনাই একাত্তুরে ? মুজিব বাহিনীর নাম শোনেন নাই? সে যে এই দেশটারেই জন্মদিলো ? সে যে জাতির পিতা ভুইলা গেলেন? আপনেতো চাচা রাজাকার। আজব পাবলিক। আজব।
= এক হুজুরঃ আমি কোন রাজনীতি করিনা। কোন রাজনৈতিক কথাও আমি বলতে চাইনা। শুধু একটা কথা বলি- আমাদের জাতির পিতা হচ্ছে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)। শেখ মুজিব আমাদের জাতির পিতা না। এটা নাফরমানি। হিন্দুয়ানি। গান্ধীবাদ। এই কথা কওয়ার সাহস কারো নাই। তবু একজন মুসলমান হিসেবে আমি শেখ মুজিবেরে জাতির পিতা মানুম না। মুসলমানের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)।
= আমিঃ মামা একটা সিগেরেট দেন। ব্যানসন সুইচ। আর কাপটা নেন।
= এক চাচা মিয়াঁঃ (শুকনা চশমাওয়ালাকে) - থুতু ছিটিয়ে- তুমিতো একটা বেয়াদব। শাহবাগি। তোমরাতো ব্লগার। নাস্তিক। দেশ থাইক্যা ধর্ম উঠায়ে দিতে চাও। তোমাগো হিসেবেতো আওয়ামিলীগের বিপক্ষে কিছু কইলেই রাজাকার।
চশমাওয়ালা শুকনা লোকটাঃ আপনে স্যাকুলারিজম বোঝেন? ডেমোক্রেসি বোঝেন? ৭২ এর সংবিধান কী ছিল জানেন ? আন্দাজে পক পক করেন। চুপ থাকেন মিয়া।
= লম্বা লোকটিঃ হুজুরকে- মানে ? আমিতো হিন্দু । আমার জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) হয় কেমনে ? আর হুজুর আপনের পাকিস্তানের জাতির পিতা জিন্নার বেলায় সব ঠিক আছে ?
= সার্ট ইন করা ভদ্রলোকঃ আরে মুক্তযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ করেন , দেশে এখন জালিম সরকার। মুক্তিযুদ্ধ কইরা এদেশটা কি পাইছে ? এর চেয়ে পাকিস্তানই ভালোছিল।
= চশমা পরা ভদ্রলোকঃ পাকিস্তান এক ব্যার্থ রাষ্ট্র। বাংলাদেশটারে যখন চুইস্যা খাইছে তখন আপনে কই আসিলেন ? করাচী ? আমরা ওগো চেয়ে বহুত ভালো আছি। যান দুনিয়ার খবর লইয়া দেখেন।
= হুজুরঃ ইন্ডিয়া আমাগো মুসলমানে-মুসলমানে বিভেদ করছে। রবীন্দ্রনাথ , এই হিন্দু লোকটাও চায় নাই মুসলমানের একটা দ্যাশ হোক। আফসোস হ্যার লেখা গান আমাগো জাতীয় সংগীত। উর্দুতে একটা লাইন লিখতে দিলে পারবো না অথচ হ্যারে দিসে নোবেল প্রাইস।
= চশমাওয়ালা শুকনা লোকটাঃ ভাই কথা বলতে হলে জাইন্যা আসেন আগে। আপনেগরে কিছু কইয়া লাভ নাই। আপনাগো ব্রেন ওয়াশ।
= পান মুখে বুড়োঃ আরে হালায় বাচুম আর কয়দিন। আল্লা আল্লা কইরা দুনারতে যাইতে পারলেই হইছে। আল্লার এবাদত বন্দিগি করুম। আল্লায় দেখবো, প্যাঁচাল বাড়াইয়া লাভ নাইক্কা। থামেন ।
= আমিঃ দেখি মামা আরেকটা সিগেরেট। সুইচ। কত হইছে ?
= এক ফোন ব্যাবহারকারিঃ ফোনে চিৎকার করে কাকে যেন বলছে- হ, আরে হ, না না, বৃষ্টি। দুনিয়ার প্যারা। জ্যাম। দেখি আমু। চায়ের দোকানে আটকা। রাখ রাখ। হ। কল দিমুনে। আইচ্ছা। আইচ্ছা।
সবাই চুপ দেখে চা'ওয়ালা মামা হাসতে হাসতে বলল- আইচ্ছা এত যে সবাই কথা কইলেন পারলে কন দেহি এই দেশটার নাম কী ?
কেউ কোন উত্তর দিলো না। সবার ভাবটা এমন এতো সহজ প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা মুর্খামি।
আমি একেবারেই চুপ ছিলাম তাই হয়তো বললাম কেন- বাংলাদেশ ?
চা'ওয়ালা ভাংতি টাকা দিতে দিতে হাসি মুখে বললো- আপনেরা অনেক শিক্ষিত লোকেই জানেন না। আমারে এক স্কুল পড়ুয়া মামায় টেকার মইদ্দে দেহাইছে।
এই দেশের নাম হইলো- গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
আমি উত্তর শুনে বেকুব হইয়া গেলাম।
বৃষ্টি ধরে এসেছে। একে একে সবাই বাইরে নেমে গেলো...

- অনি।
২০/০৮/১৫
রাত- ১১ঃ৮
তোমার মিথ্যা কথা শোনাও যখন
হাসতে হাসতে মনে হয়ে যাই খুন
যদিও রন্ধ্রে জ্বলে ছাইয়ের আগুন
সে ছাইয়ে খুঁজে পাই লুকানো রতন।

মিথ্যা উলের সুতায় রিস্তা বোনো
মার্কেট প্রাইস রাখো সত্যের হাফ
তোমার বেলায় শুধু সাত খুন মাফ
ইচ্ছে হলেই ডাকো এই ছেলে শোনো।

কথায় কথায় শুনি কত নীতি বাণী
যদিও তোমারো পানি মিনারেল নয়
তুমিও আধাঁরে কর পানি অপচয়
আমিই পাথর খুঁড়ে পানি কিনে আনি।

তোমার দেহের খিদে বেলাবেলি মেটে
যারে পাও ডেকে নাও নির্জন ঘরে
পানির ভিতরে পানি শূন্যতা ভরে
শিশু বুড়ো বেইল দাও সংবিধান ঘেটে।

মন দিয়ে দেহটিকে রেখেছো ধাঁধায়
দেহটিও জাত খোঁজে কোনটি কুলীন
যদিও একই জলে কেলি করে মীন
কিছু মাছ খেলা করে গভীর কাদায়।

-অনি
১৯/০৮/১৫
রাত- ২:৫৬
অসভ্য আমি পেয়েছি তোমায় মানুষের শ্রমে ঘামে;
চুষেছি, চেটেছি, কামড়ে ধরেছি-
রক্তিম রঙে মথিত করেছি,
তোমার আমার মিলন গড়েছি- ভালবাসাহীন কামে,
তোমায় আমি আমার করেছি অন্যের দেয়া দামে।

তোমার বাসর হয়েছে কবর এ বিশ্বের চরাচরে;
মানুষে লাশেতে নেই ভেদাভেদ,
ভোগ করি নাকি হও ব্যাবচ্ছেদ?
বুঝিনা আমি শীতলতা ক্লেদ- ভোগের উষ্ণ জ্বরে;
সুচেতনা তুমি ধর্ষিত হও মৃত্যুরও কিছু পরে।

আমি কী মানুষ? নাকি অমানুষ? মুর্খ বোধের নীতি?
যেই ডালে বসি সেই ডাল কাটি,
হাগি, মুতি, খাই একই থালাবাটি,
এস্কেলেটরের বিপরীতে হাঁটি - সময়ের রাজনীতি;
তোমাকে বাঁচাতে এখনও আমি মানুষ মেরেই জিতি।

- অনি
১৭/০৭/১৫
বিকেল- ৫:১৭
তুমি আজ ঘুমিওনা- যতক্ষন শহরের নেভে বাতি সব;
বৈরাগী হাওয়ারা অন্ধকারে- মিশে আছে শহরে শহরে,
মোতিচূড় নক্ষত্রে- চন্দ্রাবতীও বধু আজ রাতের নহরে,
তুমি আমি দেখবো বলে- মায়াপ্রপঞ্চ রাতের বৈভব,
রাত্রি মিথুনেচর, ফুলের কেশর- গাইছে শশাঙ্কের স্তব;
তুমি আজ জেগে থেকো- আসবে নিমন্ত্রণের চিঠি,
পদ্মশাড়ি জড়িয়ে শঙ্খগায়ে, কাজলে এঁকে নিও দিঠি,
মুখরা শতাব্দী সারাৎসার অন্ধকারে যদিও নিরব ;


তখন জোছনা বলক দিলে মাঝ রাতে চন্দ্রের তাওয়া,
শ্রাবনের বাতাসে তুমি ডুব দিও সে শীতল আলোয় ;
মিথুনের রঞ্জনি কেটে যাবে দু'জনের ভালোয় ভালোয়,
রাতের আঁধার থেকে আস্তে বের হলে শঙ্খচূড় হাওয়া,
তুমি আমি হেঁটে যাবো পিচ্ছিল শহরের ভৌতিক পথে,
জোছনা ঝরবে কেবল আমাদের হৃদয়ের মৌলিক ক্ষতে।

- অনি
১৪/০৮/১৫
রাত- ১:০৯
হে মানুষ তোমার এত দুঃখ কিসের?
কেন এত অস্থিরতা?
কিসের এত ভয়?
এত ক্রোধ কার উপর?
এত হিংসা কেন গো মানুষ?
তোমার বিছানায় কী আসেনাই ঘুম - শৈশবের মতো?
প্রথম সকাল বেলায়,
আরো একটু ঘুমের কাতরতা নেই?
ভোরের আকাশ দেখে-
নির্মল বাতাসে কি তুমি অহিংস্র নও?
তোমার কি মনে হয়না -
আহা কী শান্তি আজ ভোরের বাতাসে আকাশ তলে।
তুমি হাঁসটিকে ভালবাসোনাই - তোমার উঠানের?
তোমার পারাবত যখন নীল আকাশে সাদা ডানায়
তোমার শান্তি ছড়িয়েছে বহুবার-
তুমি কি শান্তি পাওনাই তখন?
তোমার বিড়ালটি - তোমার পৌষের রাতে
তোমার বুকে কাছে স্বস্তি খোঁজেনি?
দাওনি কি তা? - সন্তানের মতো টানোনি তাকে কাছে?
হাতে বসা মশা রক্তাক্ত পেট নিয়ে থমকে গেলে,
তাকে ফু দিয়ে বাঁচাওনি একবারো?
গভীর রাতে বৃষ্টির শব্দ শুনে -
পাশ ফিরে ঘুমাওনি গভীর আবেশে?
পেট ভরে ভাত খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলনি তুমি?
কোন বিকেলে খেলার মাঠ হাতছানি দেয়নি?
সন্ধেবেলা আকাশ দেখে মনে হয়নি- বাহ! সুন্দরতো?
তোমার মাকে অকারনে ডাকোনি কোনদিন?
ঘুমন্ত বাবাকে দেখে মনে হয়নি-
আহা কি অসহায় মুখ তার!
হে মানুষ-
তুমি কি অবিরল ধান ক্ষেত দেখে সুখ পাওনি?
তুমি কি অপলক তাকিয়ে দেখোনি-
হলুদাভ সর্ষে ক্ষেত প্রান্তরের শেষ সীমানায় গাঢ়।
দুপুরের পুকুরের জলে-
মাছের ঘাইয়ে মন কেমন করে ওঠেনি তোমার।
মাছরাঙা, পানকৌড়ি দেখোনি তুমি কোনদিন?
নদীর পাড় ধরে হেঁটে যেতে যেতে-
পাশের সঙ্গীকে বলনি - এই গ্রামটা কী দারুন সুন্দর!
কোন পুরানো শেওলা ধরা বাড়ি দেখতে-
ভালো লাগেনি?
মনে হয়নি- এই রাজপ্রাসাদে কারা থাকতো?
কেমন ছিল সেই রাজকন্যার মুখ, সে রাজপুত্তুর!
কোনও মঠ চোখে পরেনি পুরানো বিশাল বটের পাশে?
তোমার বন্ধুকে বলনি -
জানিস আমি এই পৃথিবীর সবাইকে অনেক ভালবাসি। তোমাকে টানেনি সমুদ্র?
দেখতে যাওনি সমুদ্র?
সমুদ্র দেখে মনে হয়নি আমরা কত ক্ষুদ্র?
তোমার ভাল লাগেনি সমুদ্রকে?
হিমালয়ের গল্প শুনে ভাবনি-
ইস যদি দেখতে পেতাম?
আফ্রিকার জংগল? সাহারার মরুভূমি?
কোন এক বরফের দেশ?
মন ভরে শোননি ছেলেবেলা রুপকথার গল্প?
আরবের কথা, আমেরিকা, ইউরোপ, মিশর,
বারো হাত কাকুড়ের তের হাত বিচির দেশ?
তোমার ইচ্ছে করেনি পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য দেখতে?
তুমি বেড়াতে যাওনি- তোমার আত্মীয়ের বাড়ি
তারাকি তোমাকে কুটুমের আদর দেয়নি?
কেউ ঠিকানা জানতে চাইলে- পথ বলে দাওনি?
বন্ধুর জন্য বারবার অজস্র বার ঠকনি তুমি?
প্রেমিকার জন্য-
বুকের ভিতর টনটন করে ওঠেনি কোন নির্ঘুম রাতে?
কাউকে মার খেতে দেখে থামাতে ইচ্ছে হয়নি?
কাউকে দু দশটাকা দিয়ে সাহায্য করনি কোনদিন?
কারো মৃত্যুর যন্ত্রনায় আমি জানি তুমিও কাঁদো।
হে মানুষ-
তুমি হিন্দু, তুমি মুসলমান, তুমি বৌদ্ধ, তুমি খৃষ্টান,
তুমি নিধর্মি, তুমি বিধর্মী, তুমি নাস্তিক, তুমি শিখ,
তোমার হাজার জাত, তোমার হাজার ভাষা, শত দেশ।
আমি জানি তুমি সাদা, তুমি কালো, তুমি কালারড।
তবুও হে মানুষ-
তোমার হৃদয় কি একটি নয়?
তুমিই কি জন্মদাতা পিতা,
আর জন্মদাত্রী মাতা নও?
আমাদের সবার বুকেই যদি-
ব্যাথা আর ভালবাসা থাকে;
তবে কেন আমরা শুধু ভালইবাসবো না?
এক পৃথিবীর কোলে আমরা কাদের ঘৃনা করি?
বঙ্গোপসাগর এর পাড়ে চল হাতে হাত ধরে দাড়াই,
সবাই সমুদ্রের দিকে তাকাই,
বুক ভরে টেনে নেই টাটকা বাতাস,
মনের সকল ক্রোধ, বিদ্বেষ, লোভ,
ভাসিয়ে দেই সাগরের জলে,
সবাই একসাথে বলি-
আমরা সবাই মানুষ,
সবাই গাই এই গান -


আমরা সমুদ্র সন্তান।


-অনি।
১২/০৮/১৫
সন্ধা- ৭:২১
এক শেকড় ছাড়া দেশে আমি জন্মেছি এই ভবে,
যে দেশের স্বাধীনতার মূল- প্রথিত ফুলের টবে।

কাল পুরোহিতে জল দিত, আজ মৌলভি দেয় পানি,
দেহ ঘুরে ফেরে এই দেশে- দিল সাচ্চা পাকিস্তানি।

লালন, হাসন নিষিদ্ধ এখানে- মালাউন রবিঠাকুর;
হারাম এখানে জাতীয় সংগীত- ফতোয়া দেন হুজুর।

জারি-সারি গান নাজায়েজ, সব বাউলরা মুরতাদ,
ভেঙ্গে দিতে হবে নবর্ষের - মুর্তি পুজার বিষদাঁত।

ধর্ষন আজ দর্শন কাজ, চার দর্শক পেলে শাস্তি,
গনিমত মাল- আবতো হালাল- রাফতা হো মাস্তি।

ভারত করেছে মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তান করেছে টুটা,
তিরিশ লক্ষ বাঙালি মরেছে- বিলকুল ইয়ে ঝুটা।

হিন্দু, বৌদ্ধ, উপজাতি যত- মুক্তিযোদ্ধা সবে,
মদিনা সনদের এই দেশে সব- বোম্বাই হাজি হবে।

জানিনা কারা প্রান দিয়েছিলো- কী বলেছিল পিতা?
গোরস্তান হলো তাদের শশ্মান, যারা চড়েছিল চিতা!

সেন, পাল সব বালছাল স্তব, দোযগে যাবেই অতীশ;
অংগ, বঙ্গ, গৌড় সবই - গোখরা সাপের বিষ।

মঠ- মন্দির ভেঙেছি সকলই, যা আছে এখনও বাকী,
মুসলিম দেশে শাঁখের আওয়াজ? শুভংকরের ফাঁকি।

জানিনা যারা হাজার বছর রয়েছে বঙ্গভূমে,
জানিনা তাদের স্বপ্ন কেমন শেষ রাত্রের ঘুমে?

জানিনা যারা গায় ভাটিয়ালি- এই দেশ তার কিনা?
জানিনা যারা ভাওয়াইয়া গায়- কতটুকু তার সীনা।

জানিনা বাউল কয়দিন গাবে- সে বোষ্টম-বোষ্টমি?
হাজার বছরের পল্লীগীতি- পাবে কিনা তার জমি?

পুঁথিপাঠ আজ হারালো কোথায়? জানিনা যাত্রাপালা,
জানিনা আবার মথুরার গানে- গলে দিবে কিনা মালা।

জানিনা কারা কবিয়াল গায়? কে বাজাতো মাঠে বাঁশি!
জানিনা সঙের রঙিন মুখে - আছে কিনা সেই হাসি।

জানিনা বালিকা শালুক তুলবে- কয়দিন ঐ ঝিলে?
জানিনা কবে বোরকায় যাবে- বিবাহের মিছিলে।

নকশী কাথাও ঢেকে দেয়া হবে- বাঙলার গ্রামে গ্রামে,
মদিনা সনদ আসো আসো আসো উদলা গায়ের ঘামে

কেন হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ? স্বাধীনতা দিলে কেন?
যার চিন্তায় আকাশ- তাকে রাস্তা দিয়েছো ন্যানো।

এই দেশটা কি? বলে দাও কেউ- কি তার সংস্কৃতি?
কেন এই দেশ বাংলাদেশ? তার কোথায় সত্য ভীতি?

এইদেশ কার? দাও ফয়সালা, এর শিকড়ের মাটি আনো
যারা খায় এর ফল, লতা, পাতা ঐ তাদের গুষ্টি টানো।

জানাও দেশের সকল লোকেরে- এই দেশটার নাম,
কাদের দেহের রক্তে-রক্তে পেয়েছে দেশের দাম?

এদেশের খায়, এদেশের পরে, ঘুমায় দেশের ঘরে,
সেই কাদের মনেতে- অন্য দেশের পিরিত বসত করে?

যে সয়নাই প্রসব বেদনা- সে হয় নাই মা,
সে সব মাসির চোখ রাঙানোতে- আমিতো ডরবো না।

যে দেশের মা মুখ চেপে ধরে, ভয় আদরের থেকে বড়,
সে দেশ মা নয়- সৎমা, তাকে আবারো স্বাধীন করো।

- অনি।
০৯/০৮/১৫
বিকেল - ৫:৪৫
তুমি আমার ভীমসেন যোশী তুমি মালহারে তান সেন,
তুমি মোৎজার্টের গান শেষে- মুনলিট সোনাটায় বিথোফেন।
শ্যামের মুরলি তুমি, তোমাকে ব্রজের বাঁশিতেও কেউ শুনি,
তুমি রবিশংকরের এস্রাজে- এস্রাজে, বিথোফেন সিম্ফনি।
গিটারে, তানপুরায় তুমি, তোমাকে শুনি বেহালায় অর্গানে,
বেহাগে, ইমনে তুমি তোমাকে খুঁজিয়া পাই আলাপ স্বর-গানে।
জারি-সারি, পালাগানে তুমি, তুমি ভাওয়াইয়া, বাউল, ভাটিয়ালি,
সিরাজ, লালন, গগনে তুমি, কবিয়াল মঞ্চে ভক্তের হাতে তালি।
উকিল, হাসন, রবিতে তুমি, তোমারে ছাড়া নজরুলও লাগে মিছা ;
তুমি হারমোনিয়ামের প্রতিটি রীডে সা রে গা মা পা ধা নি সা।
তুমি শামসাদ বেগম, তুমি নওশাদের গানে, তুমি কিশোর রফিতে, লতায়,
তুমি মেহেদি, তুমি পঞ্চম, তুমি হিন্দি গানে আনন্দবক্সীর গীতি কথায়।
মানবেন্দ্রে তুমি, হেমন্তে তুমি, সলীলে তুমি, আছো তুমি মান্নাদের গানে,
উদিত, হারিহারান, শংকর তুমি, কবিতাকৃষ্ণমুর্তি তুমি এ.আর রাহমানে।
তুমি সন্ধায়, তুমি গীতায়, তুমি চিত্রা - তুমি সাবিনা, রুনাতে, আশায়,
তুমি উচ্চাঙ্গসংগীতের সারগাম গুরু, কন্ঠকে সপ্তম রাগেতে শাসায়।
তুমি সঞ্জীব চৌধুরীর গানে, তুমি নচীকেতায়, তুমি শ্রীকান্ত, অঞ্জনে,
মৌসুমি, লোপার গানে তুমি, মাইলসে, জেমসে বাজো ড্রামের ঝনঝনে।
তুমি আমার প্লে লিস্টের গান, যতক্ষন আমার পিসিটা থাকবে অন,
তুমি আমার বারবার বাজতে থাকা সিংহ নাদের মতো কবির সুমন।


- অনি
০৬/০৮/১৫
রাত- ১:২৪
তোমার সাথে আমার আজো জানি হয় নাই দেখা
অথচ একই চাঁদের আলো
একই আকাশে ছিল
একই জোছনা - তুমি আমি দেখেছি একা একা।
একই সুর্য পশ্চিমের নীল সাগরে দেখেছো একা ডুবে
আমিও দেখেছি তারে
একা একা দক্ষিনের সাগরে
প্রতিদিন অস্ত গিয়েছে পুবে। 
রবীন্দ্রনাথের গান তুমিও শুনেছো একা আমিও তাই
সেইসব গানের কথা মনে
কারনে বা অকারনে
তুমি আমি একা একা সেই একই গান গাই।
তুমিও সুমনের জাতিস্মর গাও নিজেকে জড়াও গানে
লালনকে লালন কর
হুমায়ুনের প্রেমে পরো
নিজেকে লুকিয়ে রাখো আত্মসম্মানের প্রানে।
তুমিও ভিজেছো বৃষ্টিতে একই মেঘে একই মেঘমালায়
আমিও ভিজেছি কত কত
ঝরঝর অবিরত
আষাঢ় শ্রাবনের জল সিক্ত বিরহের বর্ষাধারায়।
তুমিও একলা থাকো আমিও থাকি মানুষের ভীড়ে
তোমার বইয়ের পাতা থাকে বাকী
আমি পড়বো বলে সকল টুকিটাকি
আমরা একলাই ঘুমাই আমাদের পারিবারিক নীড়ে।
তোমার আমার বাশিটি একা রাগীনিতেও এক সুর
মানুষই সত্য মানুষই শেষ
ভালবাসি আমাদের অসহায় এই দেশ
চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ শিকড়ের গভীরে একাত্তুর।
তুমি আমি একসাথে একদিন মিলবো যখন
অনির কবিতা পাবে সেদিন তার সত্য ভূবন।

- অনি।
৫/০৮/১৫
রাত- ২:৩৩
যদি ঘুম না আসে, তবে আমার নাম ধরে ডেকো,
ছাদের কিনারে এসে- ভয় পেলে হাত ধরে থেকো।
বাসায় ফেরার পথে- বাজারের ব্যাগ দিও হাতে,
তোমার রুটের বাসে- আমার সীটটি রেখো সাথে।
তোমার খাবার প্লেটে - না খাওয়া মাছটি দিও আমায়,
কপাল বাড়িয়ে দিও -হেঁটে এসে গা যদি ঘামায়।
গলাটা শুকিয়ে গেলে - এনে দেবো তৃষ্ণার পানি,
কখন ঘুমিয়ে যাবে- সে কথা আমিই যেনো জানি।
শহরে রিক্সা না পেলে; ফোন দিও হাঁটা পথটাতে,
সুর্যে টেনে দিবো মেঘ -তোমার ভোরের বিছানাতে।
শরীর ক্লান্ত হলে- মাথা রেখো আমার লাগানো কাধে,
কিছু খেতে ইচ্ছে হলে, আমাকে বলতে না যেনো বাঁধে
গরমে লোকের ভীড়ে - প্রান যদি ছটফট করে,
রিক্সায় তুলে নিয়ে- তোমাকে পৌছে দিবো ঘরে।
হাওয়া খেতে খেতে- তোমাকে শোনাতে পারি গান,
সিগেরেটও কিনে দিবো- যদি চাও দিবে সুখ টান।
এলোমেলো লাগে যদি- কিছুতেই বসে না যদি মন,
নিচু স্বরে শোনাবো তোমায় -মেঘদূত অথবা লালন।
তোমার অসুখ হলে- নিয়ে যাবো সমুদ্রের কাছে,
যেখানে আকাশ সাগর - একসাথে নীল হয়ে আছে।
তোমার গোসল শেষে -মেখে দেবো ছেকে নেয়া রোদ,
তোমার সকল ঋন- আমি এসে করে দেবো শোধ।
তুমি শুধু পাশে রেখো- কোনদিন আমাকে দিও না বাদ,
আমি যাতে মেটাতে পারি -তোমার অপূর্ণ সব সাধ।


- অনি
০৩/০৮/১৫
প্রায় বিকেল - ৩:৫৮
বন্ধু মানে ফ্রেন্ডলিস্টে, বন্ধু মানে মিউচুয়েল
বন্ধু মানে লাইক কমেন্ট, বন্ধু মানে মাখো তেল।
বন্ধু মানে সেল্ফি ফ্রেমে, বন্ধু মানে কেএফসিতে
বন্ধু মানে বার্সা-রিয়েল, ইউরো লীগের জার্সিতে।
বন্ধু মানে বার্বিকিউ, বন্ধু মানে খামু মাল
বন্ধু মানে পিস মাম্মা, ডেটিং মাইরা পুরাই টাল।
বন্ধু মানে পিনিক করি, হোন্ডা নিয়া গিয়ার ফোর্থ
বন্ধু মানে ভাঙ্গাইয়া খায় হালায় পুরা মাদার চোদ।
বন্ধু মানে অরা অরা, আমরা আমরা আলাদা
বন্ধু মানে পঁচাইয়া লই পুরাই মফিজ শালাডা
বন্ধু মানে খিস্তি বকা, বন্ধু মানে এইট্টিন প্লাস
বন্ধু মানে ফোনের স্ক্রিনে নীলছবিতে রঙিন গ্লাস।
বন্ধু মানে ভাল্লাগেনা, হ্যাংওভার চল বাবা আনাই
বন্ধু মানে টাইম পাসিং ছাদের উপর গাঞ্জা বানাই।
বন্ধু মানে ওরে চিনি উইতো আমার লগেই চলে
বন্ধু মানে ভাইবেরাদর ওরা কিন্তু আমার দলে।
বন্ধু মানে আহা আহা তোর মতো আর বন্ধু নাই
বন্ধু মানে পিছে পিছে হালায় একটা পুরা ভোদাই।
বন্ধু মানে বন্ধু খোঁজা, বন্ধু যত ততই লাভ
বন্ধু মানে বিক্রি করা বিশ্বাসের সব খুচরা পাপ।
বন্ধু মানে একলা থাকা এছাড়া সব পঙ্গুতা
বন্ধু মানে নিজের সাথেই নিজের গড়া বন্ধুতা। 


- অনি
০১/০৮/১৫
রাত - ২:৪০
যে আকাশ দিয়েছিল খুব মেঘ জল,
তাতেই লুকানো ছিল বজ্র অনল।
যে শ্রাবন বরষন মুছে দিত ক্ষত
সেই করেছে মোরে বজ্রাহত।
পদ্ম ঝিলের জলে মীন সন্তরনে
জানেনা বসত করে কমলের বনে।
চন্দ্রাবতীও নামে সেই কুহকের জলে
ঢেউয়ের ভিতরে নাগ বিষ নিয়ে চলে।

- অনি।
৩১/০৭/১৫
রাত- ১:৫৭
কিছু কথা তোমায় নাহয় সহজ করেই বলি,
সত্য যুগ যাওয়ার পরে চলছে এখন কলি।

এই এ যুগে সত্য সেই মিথ্যা যাহার পুঁজি
মাথার চুলে কার্বন তাই উকুনেতে হীরা খুঁজি।

চন্দ্রের বুক সাইদির মুখ মিথ্যার ফেইসবুকে
তেতুলের বিচি চুষছি সবাই লালায় ভর্তি মুখে।

তেতুল আবার অনেক রকম আরবেরটায় মিস্ট্রি
তেতুল পাতায় ন'জন সুজন কাঁঠাল পাতায় হিস্ট্রি।

ছাগল এখন জাতিয় পশু বাঘ উঠেছে জার্সিতে
মইরা গেছে পড়শি আমার বাড়ির পাশের আরশিতে।

ছাগল পাগল ছাইঞ্চ শুনায় বাইট্টা পাঁঠার লাদি
বাংলা ভাষায় জীবন দিয়া আরবী ভাষায় কাঁদি।

কপি পেস্টে দাঁত মাজিয়া সবাই জ্ঞানের হাসি
ইনবক্সে ব্যালট পেপার ' তোমায় ভালবাসি '।

ধনতান্ত্রিক গনতন্ত্রে মনতন্ত্র বোবা
স্ল্যাং হয়েছে জনপ্রিয় কোপা সামসু কোপা।

শিক্ষানীতি দেশের দেহে হরেক রকম ব্লাডে
মুরলী বাজে কৃষ্ণ-রাধার লিটন সাবের ফ্লাটে।

চে' রেখেছে মাওয়ের পাশে লেলিন পাশে রক্ত
সাম্যবাদের বিপ্লবী আজ নামায-রোজার ভক্ত।

গনতান্ত্রিক পত্রিকাতে নাসার সাথেই তান্ত্রিক
জ্যামে গাড়ি থমকে গেলেও সভ্যতাটা যান্ত্রিক।

নাস্তিক কেউ নারীবাদী কেউ আর কেউ আছে বরবাদি
ধড়বাদী যখন ডরবাদী হয় ভীনদেশে গিয়ে ঘরবাঁধি।

এর মাঝে যারা খাটে রোজ ভাড়া দিন খায় আর দিন আনে
মাথাপিছু কত ডলার পেয়েছে সেইসব তার ঋন জানে।

এরপর আছি তুমি আর আমি হাম তুম হ্যায় দিলখোশ
স্বপ্ন দেখার টাইম কই বলো ঘুমের ভিতরে স্বপ্নদোষ ।

-অনি।
২৮/০৭/১৫
রাত- ১১:০২
আরো একটি রাত জানালার ওপাশেই ঝরে যায়
মেঘমন্দ্রিত জলসিঞ্চিত অন্ধকার শ্রাবন নিশায়
এ গভীর মধ্যে রাতে বর্ষাধারার সাথে এ গন্ধ তোমার
অম্বরঅঞ্চলে রিমঝিম ছলছলে মিশ্রিত ভুজঙ্গ হাওয়ার
ফনি সমীরণ চিতে প্রভঞ্জনে আচম্বিতে বিনিদ্রিত ঘরে
কুহেলি কামনা মিশি দিশিদিশি অহর্নিশি অবিশ্রাম ঝরে
কুন্তল শয়নে লুটায় তনুশ্রী রেখেছো গুটায় বিবস্ত্র রাতে
সিক্ত কপোল লোরে তপ্ত প্রনয়ঘোরে সুপ্ত আঁখিপাতে
রয়েছো নিদ্রিতপুরে মালহার-কাজরী সুরে বিরহ মনে
শ্রাবন ঝরছে বনে তোমার তৃষিত মনে শঙ্খসিক্ত স্তনে।


- অনি।
২৬/০৭/১৫
রাত- ১:০২
শ্রাবন নিশায়
এই নাগরিক জীবনে যদিও কবিতার কোনও প্রয়োজন নাই
তবু কিছু অপ্রয়োজনীয় মানুষের জন্যে কবিতাই লিখে যাই।
কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজের মতো জ্যামে ধরা এই শহরে
কবিতা এখানে গাজার নেশার মতো একটু ঝিম ভাব ধরে।
লজ্জিত, পরাজিত, ধর্ষিত, অন্ধ, ভন্ড, অর্থহীন দিনের শেষে
হয়তো কবিতা নিয়ে যেতে পারে কোন এক রুপকথারদেশে।


- অনি।
২৫/০৭/১৫
ভোর - ৬:০২
ঘুম আসেনা-
জানালার ঐ পাশে যখন নিশাচর বৃষ্টি আসে
এইসব গভীর রাতে বৃষ্টির ছাট এলে ঘরে
কেউ কেউ জেগে থাকে ঘুমের অনন্ত অম্বরে
আর কেউ ঘুমিয়ে থাকে তার স্বপনের পাশে।

জানালার কাচে লেগে আছে জলের কনা
হঠাৎ হাওয়া যায় বেড়ে বিদ্যুৎ কাঁদে মেঘে
রাত ফুরিয়ে আসে বর্ষার ব্যথিত আবেগে
আমার মনের ভিতর মালহার লিখে খনা।
ঘুম আসেনা - এইসব বৃষ্টির গন্ধমাখা রাতে
মন চঞ্চল নীপবনে- দেহ ক্লান্ত বিছানাতে।

- অনি
২৪/০৭/১৫
রাত- ৩:৫৯
আমার যা ইচ্ছা আমি তা এখন লিখতে পারি।
শুধু কোথায় বসবে কমা-
জানিনা কোথায় টানবো দাঁড়ি?
তবু এই ব্যাকরণহীন লেখা- তুমি বুঝতে যদি পারো
আমি আকাশের পর আকাশ আর আকাশ আনবো আরো।
আমার ভুলের পরে যে আমি বসিয়া থাকে,
সেই ভুলকে ভুলেছে কে?
কে শুদ্ধির ছবি আঁকে?
সেই তোমাকে খুঁজেছি আমার সকল তুমির লেখায়;
যে অসীম শুন্যে এসে মহা-বিশ্বের গান শেখায়।
আমার শূন্য মনে- আমার কথার দাঁড়ির পরে-
যে চিন্তার ঢেউ আনে শুধু সুখের থরেবিথরে।
আমি সেই তোমারেই খুঁজি যে সীমানার বাইরে বসা
তোমাকে বুঝতে গিয়েই আমার অজানা অংক কষা।
তুমি তোমার হাতটি দিও আমার ক্লান্ত হাতে
স্বপ্ন আনিও চোখে আমার নিদ্রাবিহীন রাতে।
তুমি বিচার করার ঝোকে এখানে এসোনা চন্দ্রাবতী
কৃষ্ণের প্রেমে রাধিকা তাহলে শুধুই পাবে যে রতি।

চন্দ্রাননে জোছনা মাখাও খুঁজনা আলোর মানে
মৃত পাথরের প্রতিবিম্ব সে একথা সকলে জানে।

-অনি
২৩/০৭/১৫
বিকেল- ৫:৫৩
হিমালয়ের মতো আকাশের মেঘের গায়ে লেগে থাকে উড়ন্ত ঈগলের ঘ্রান
ঠোটে তার শবের রক্ত নখে তার লেগে আছে জল কাদা মাটির নিশান...

-অনি
২২/০৭/১৫
রাত- ২:২৩
আসবে তুমি হঠাৎ করে আসার দিন ফুরিয়ে গেলেও
আসবে তুমি এক সকালে আকাশে তোমার ঘর ফেলেও
আসবে তুমি এক আষাঢ়ে সারারাতের বৃষ্টি শেষে
আসবে তুমি লোকাল বাসে, নামবে বাসস্টপে এসে
আসবে তুমি গোলাপ নিয়ে, মেরিন শীপে, সেভেন ফ্লিটে
আসবে তুমি তুমি চাদর নিয়ে, ঘাস বিছাতে এ কংক্রিটে
আসবে তুমি রিক্সা করে, এই শহরের কোনও পাড়াতে
আসবে তুমি হলুদ ক্যাবে, মিটার রিডিং ঠিক ভাড়াতে
আসবে তুমি গোধূলি আলোয়, সাদা-কালো রংধনুতে
আসবে তুমি এই শতকেই- দৈত্য, দানব, পেত্নী, ভুতে
আসবে তুমি অডিতে চড়ে হয়তো হেমার লিমুজিনে
আসবে তুমি স্কুটি হোন্ডায়, বিআরটিসি, মুড়ির টিনে
আসবে তুমি আমার খোঁজে, সাগর পাড়ে নদীর জলে
আসবে তুমি তাদের দেশে- যারা তোমার গল্প বলে
আসবে তুমি সাইকেল নিয়ে হয়তো মিশুক সিএনজিতে
আসবে তুমি প্রাইভেট জেটে, ইউএন চপার আচম্বিতে
আসবে তুমি এসেম্বলিতে বিরোধী দলের সবার সাথে
আসবে তুমি মৌলবাদে- চাপাতি ফেলে কলম হাতে
আসবে তুমি রোদের আলোয়, জোছনা কিবা অমানিশায়
আসবে তুমি আমিন বাজার, টঙ্গী কিংবা আশুলিয়ায়
আসবে তুমি লালন হয়ে ট্রাম্পেটে আর প্রশিক্ষণে
আসবে তুমি ঘনশ্যামে খড়া মাঠের ঈষান কোনে
আসবে তুমি চিটাগাং রোড, সদরঘাট আর এয়ারপোর্টেতে
আসবে তুমি মাদরাসাতে আসবে থানায় হাই কোর্টেতে
আসবে তুমি পাল্কি কাঁধে, বউ কথা কও পাখির ডাকে
আসবে তুমি নাইয়োর নাঁয়ে, পায়েল পায়ে, কলসি কাঁখে
আসবে তুমি হিপহপ গানে, হিন্দি, গজল, বাংলা ব্যান্ডে
আসবে তুমি ছিটমহলে, কাঁটাতারের নোমেনস ল্যান্ডে
আসবে তুমি ঘুমের ঘোরে, একলা পথের পায়ে পায়ে
আসবে তুমি এই শহরে, ঝিল পুকুরের গাঁয়ে-গাঁয়ে
আসবে তুমি পথের ধারে, পলিথিনের বসত ভিটায়
আসবে তুমি ঋন ছুটিয়ে, পুঁজি হাতে দায় মিটায়ে
আসবে তুমি ঐক্যমতে, এক হাওয়াতে সবার প্রানে
আসবে তুমি ভালবাসায় প্রেমের একক আহবানে
আসবে তুমি আসবে জানি, তাইতো আমি কবিতা লিখি
আসবে তুমি তাইতো আমি- তোমার আশার ভাষা শিখি।


- অনি
২০/০৭/১৫
রাত- ৩:০০
১৯৯৬ সনের মাঝামাঝি।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো এক লেখকের লেখা পড়ছি। তার বইয়ের এক চরিত্র তার কল্পনার বেহেস্তের বর্ননা দিচ্ছে...
- নিজের বেহেশত নিজের মত করা গেলে আমার বেহেশত কি রকম হবে তোমাকে বলি - সুন্দর একটা বিছানা থাকবে, বিছানায় বেশ কয়েকটা বালিশ। চারপাশে আলমিরা ভর্তি বই, একদম হাতের কাছে, যেন বিছানা থেকে না নেমেই বই নিতে পারি। কলিং বেল থাকবে - বেল টিপলেই চা আসবে।
' গান শোনার ব্যাবস্থা থাকবে না? '
' ভাল কথা মনে করেছ। অবশ্যই গান শোনার ব্যবস্থা থাকবে। সফট স্টেরিও মিউজিক সারাক্ষন হবে। মিউজিক পছন্দ না হলে আপনা আপনি অন্য মিউজিক বাজা শুরু হবে। হাত দিয়ে বোতাম টিপে ক্যাসেট বদলাতে হবে না।'
' সারাক্ষণ ঘরে বন্দি থাকতে ভাল লাগবে? '
' বন্দি বলছো কেন? বই খোলা মানে নতুন একটা জগৎ খুলে দেয়া। '
' তারপরেও আপনার হয়তো আকাশ দেখতে ইচ্ছা করবে। '
' এটাও মন্দ বলনি। হ্যা থাকবে, বিশাল একটা জানালা আমার ঘরে থাকবে। তবে জানালায় মোটা পর্দা দেয়া থাকবে। যখন আকাশ দেখতে ইচ্ছে করবে - পর্দা সরিয়ে দেব। '....
বইটি পড়ে কিশোর আমি ঘুমিয়ে পরি। এই ভাবতে ভাবতে ঘুমাই ইস আমারো যদি এমন একটি ঘর থাকতো! তখন আমি বাইরের ঘরে থাকি। আমার বিছানার পাশ দিয়ে রান্না ঘরে যাওয়ার রাস্তা। বুয়া, আমার মা, বোন কেউ না কেউ সারাক্ষনই যাচ্ছে আসছে। আমার ঘর দিয়েই বাইরে যাওয়ার দরজা। পাশের বাসার আন্টি, তাদের বাচ্চারা, ফেরিওয়ালা, ভিক্ষুক, কেউ না কেউ আসছেই। দরজা বলতে গেলে খোলাই থাকে। আমার বন্ধুরাও কেউ না কেউ আসছে। এক মহা কোলাহল। কিন্তু মনের কোনে ঠিকই রয়ে গেছে লেখকের ঐ কাল্পনিক বেহেশতের ছবি।
এই গল্প পড়ার প্রায় পনের বছর পরে আমি আমার জন্যে প্রায় এমন একটি বেহেশত বানাই। যেখানে মানুষের যাতায়াত নেই। বই, গান, আকাশ আর নির্জনতা আছে।
তার আরেকটি বইয়ে এক লোক গ্রামে থাকেন। একা একা টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশের তারা দেখেন। তাকে ঘিরে থাকে এক আশ্চর্য রহস্যময়তা। তার ব্যাক্তিগত নিঃস্বংগতা তিনি ছড়িয়ে দেন অনন্ত মহাকাশের অসীম ভ্রম্মান্ডে।
তখন আমি সারাদিন ক্রিকেট খেলি। বিকেলে আড্ডা দেই। রাতে কোন না কোন ফ্রেন্ডের বাসায় থেকে যাই। রাতে তাস খেলা হয়। গান বাজনা হয়। ভোর বেলা নাস্তা খেতে যাই প্রিন্সে - মুরগীর সুপ আর পরটা। বাসায় ফিরে দেই ঘুম। ঘুম থেকে উঠেই আড্ডায় না হয় মাঠে। কিসের তারা দেখা কিসের একা থাকা। বন্ধু আছে আর কি লাগে? বাসা থেকে বকাঝকা দেয়া শেষ। তারা আমাকে খরচের খাতায় পোষ্টং দিয়ে দিয়েছে। ধরেই নিয়েছে একে দিয়ে কিছুই হবেনা।
সেই আমি বইটি পড়ার প্রায় দশ বছর পর একদিন নাসাতে একটি অর্ডার দেয়ার জন্যে আমার এক বন্ধু মহিকে অনুরোধ করে বসি। সেটা একটি টেলিস্কোপের জন্যে। গ্যালিলিও টেলিস্কোপ। খুব সাধারন। তবে মঙ্গলের পৃষ্ঠ দেখা যাবে, চন্দ্র পৃষ্ঠ দেখা যাবে, আরো দেখা যাবে শনির বলয়। অর্ডার দেবার প্রায় একবছর পরে সেটি আমার হাতে আসে। আমাকে এখন প্রায়ই একা একা ছাদে ঘন্টার পর ঘন্টা টেলিস্কোপটি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। সেই সব আড্ডা আর খেলার দিন আজ কোথায় হাড়িয়ে গেছে জানিনা। সেইসব দিন আজ দুরে অনেক দুরে। শুধু সেই দিনের রাত জাগা আকাশের তারাগুলো আরেকটু কাছে নিয়ে আসে এই কালো টেলিস্কোপটি।
একটি সময়ে নিয়ম করে বৃষ্টিতে ভিজতাম। কোন বৃষ্টিই মিস করতাম না। কারন আমার প্রিয় লেখকটি বৃষ্টিতে ভেজেন।
ঢাকার পথে পথে একসময় কত কত হেঁটেছি। রোদ বৃষ্টি কুয়াশায়। কারন তিনি হাঁটার গল্প বলতেন।
আমাকে প্রচুর সিগেরেট টানতে দেখা যায় কারন তিনি চেন স্মোকার ছিলেন। আমার বাসায় যারা আসেন এখনো, আমার খুবিই ঘনিষ্ট দুই একজন বন্ধু - তারা জানেন, আমি সারা ঘরে ঘন্টার পর ঘন্টা পায়চারী করি। কেন? কারন আমার প্রিয় ঐ লেখকটি করতেন।
আমি ছোটবেলা থেকেই খুব দুরন্ত অস্থির টাইপ ছিলাম। এক জায়গায় স্থির হতে পারতাম না দুই মিনিটের জন্যে। কতক্ষনে বাইরে যাবো। যেনো বাইরে গেলেই আমার মুক্তি। ছেলেবেলায় যে কটা জিনিস সবচেয়ে অসহ্য লাগতো সেটা হচ্ছে হচ্ছে নাঁকি গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত আর বই পড়া। বই দেখলেই মনে হতো ছেলেদের জেলখানা। কোন সুস্থ মানুষ কিভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা বই পড়ে সেটা ছিল আমার কাছে এক ধাঁধাঁর বিষয়। সেই বালক আমি তার বই পড়া শুরু করার পর থেকে আজকে অবদি বই পড়া একটি দিনের জন্যে ছাড়তে পারিনাই। আমার শিয়রে বালিসের কাছে বই থাকবেই।
আমি ছোটবেলা থেকেই কোরান খতম, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রোজারাখা এইসব ধর্মিও বিষয়ে অতি উৎসাহি ছিলাম। অথচ আমার প্রিয় লেখকটি আমাকে ফ্রি থিংকার বানিয়ে চলে গেলেন। যদিও মাহফুজ আহমেদের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেকে আস্তিক বলে স্বীকার করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে হয়তো আমি তার পদাঙ্ক অনুসরণ করিনাই। তবুও আমি আজকে যা সেটা তার জন্যেই।
আমি বই মেলায় যাই না। কারন আমার মন এখনো মানতে পারছে না। তিনি আর নতুন বই লিখছেন না। নতুন গল্প লিখবেন না। আমার বুকসেল্ফে তার বই এনে আমি সিরিয়াল লিখে রাখবোনা। নতুন বইয়ের ভূমিকা পড়ে হেসে উঠবো না। কতক্ষনে বাসায় এসে বইটা এক নিঃস্বাসেপড়ে শেষ করবো এই উত্তেজনা আর জীবনে আসবেনা।
আমার মনের ভিতরের মিসির আলী আর নতুন কোন কেস হাতে নেননা। হিমু আর রুপার জন্যে কোন গভীর রাতে রাস্তায় এসে দাড়ায় না।
অথচ আজ সেই শ্রাবন মেঘের দিন। আষাঢ় মাইসসা ভাসা পানি... বাংলার প্রান্তরে প্রান্তরে।
তিনি নেই। তিনি আর তৃতীয় মাত্রায় নেই। কিন্তু অনন্ত মাত্রায় তিনি রয়েগেছেন তার পাঠকের মনের জগতে। কি প্রচন্ড তার স্বপ্ন ছড়িয়ে দেবার ক্ষমতা। তাকে ধারন করে আছে আজ বাংলায় তার কোটি ভক্তকুল। তিনি যেখানে থেমেছেন সেখান থেকেই তিনি আমাদের সবার মাঝে মিলিয়ে গেলেন। আজ আমরা তার ভক্তরা সবাই হুমায়ুনাইজড। যতদিন মানুষের স্বপ্ন দেখা ফুরাবেনা। ততদিন হুমায়ূন আহমেদ ফুরাবেন না।
যেহেতু বাইরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে তাই আমার ঘরে বাজাচ্ছি একটার পর একটা বর্ষার গান।
এখন শুনছি...
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বর্ষায়
এসো ঝরঝর বৃষ্টিতে জলভরা দৃষ্টিতে
এসো কোমল শ্যামল ছায়-
চলে এসো তুমি চলে এসো এক বর্ষায়...





- অনি
কোথাকার আলেকজান্দ্রিয়া থেকে-
ঘোড়ায় চড়ে এসেছিলো সেনাপতি,
কালিন্দী, কীর্তিনাশা, হয়তো বা সরস্বতী-
সেদিনও চলেছিলো বয়ে- বঙ্গের বনে বনে
কবেকার গঙ্গারেড্ডিতে- এমন আষাঢ়-শ্রাবনে,
সেনাপতির ঘোড়া ভিজে থেমেছিল-
এই আঙ্গিনাতে;
জল এনে দিয়েছিলে তুমি-
ধান, খুঁদ, খই তোমার চাল ধোয়া হাতে।

আজ সেই পাহাড় নদী পার হয়ে কত হাজার বছর পরে
আকাশে আষাঢ়-শ্রাবন মনে মনে ব্যাকুল বাদল ঝরে...

- অনি
১৫/০৭/১৫
রাত- ৮:৫২
তোর শরীরের প্রতিটি আঘাতে-
আজ আমার রক্তক্ষরণ।
তোর সাথেই মরি রে আমি-
এই বাংলার রাজশ্রীর বেটা
তুই বাংলাদেশের রাজন।

তুই'ই ছিলি শৈশব আমার,
ছিলি আরেকটু বাঁচার স্বপন।
হাউমাউ করে কেঁদেছি আমিও,
বাঁচাতে তোর জীবন রে- বালক
বাঁচাতে তোর জীবন-
আজ তোর মরনে মরি রে আমিও-
তোর চরনে লুটায় মনুর সহস্র জীবন।
পীড় আউলিয়ার দেশে আমি, জানিনা ওদের কি বলে?
মারলো যারা তোকে হে রাজা- শয়তান বেঁধে শিকলে!
হায়াত মউত খোদার হাতে, ওরে বিচার চাইবো কই?
বিচার হবে শেষ বিচারে - আজ পুতুল হয়ে রই।
শিক্ষা নাই গো রাজন আমার, অভিশাপ আছে বুকে
তোর ব্যাথায় নিহত চেতনা, কাঁদছি ঘৃনায় দুঃখে।
জন্মেতো তোর হাত ছিলনা এলিরে বঙ্গ দেশে
এখানে সব আবাল মুর্খ, অন্ধ থাকে ভন্ড বোবায় মিশে।
এরাই তোকে ঘাম খেতে কয় দেয়না পানি ভিডিও করে
এরাই আছে ফেসবুকেতে এরাই দেশের ঘরে ঘরে।
আর জানি আসবি না তুই, যদি বা আসিস অন্য দেশে
মানুষ সবাই মরবো এদেশে- শুধু মানুষ ভালবেসে।
আজ ক্ষমা চাইবো না রে- ক্ষমা হবে মহাঅন্যায়
শুধু বলি বাংলা মা তোর, আঁচল গুঁজে রুখে দাঁড়ায়।

- অনি
১২/০৭/১৫
রাত- ১২:২৬



ভালবাসি আমার রাগ আমার ঘৃনা আমার ক্রোধ
আমার সকল অহংকার আর আত্মসম্মান বোধ।
কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল, সাপের সাথে করি বসত
দেয়না তারা মিথ্যা, ধোকা, হয়না তারা ভন্ড, অসৎ।
আমার রুচি আমার বিবেক আমার নীতি শিক্ষামান
আমার আদর্শটাই বড় আমার স্বপ্ন আমার প্রান।
জ্বলি, পুড়ি, না খাই, না পাই, না থাকে ঘুম, ঘর-বাড়ি
তারচেয়ে ভালো শান্তি মনের, স্বস্তি অনেক দরকারি।
চাইনা প্রেম আর চাইনা খোদা চাইনা অমন ভালবাসা
ফিরতি পথে যে কীর্তি ভাঙ্গে, ডুবায় ভাসায় কীর্তিনাশা।
ভালবাসি আমার রাগ আমার ঘৃনা আমার ক্রোধ
আমার সকল অহংকার আর আত্মসম্মান বোধ।

-অনি।
১১/০৭/১৫
রাত- ২:২১
খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার।
শরীর জুড়ে ক্লান্তি আলস্য। শরীর ঝিমঝিম করছে। মুখ থেকে আপনিতেই একটা বিরক্তির শব্দ হলো। শব্দটা মুখে করে শোনানো যায়। বানান করা যায় না। মাথার কাছ থেকে মোবাইল ফোন টেনে নিয়ে সময় দেখলাম- পাঁচটা বাজে। এত ভোরে কেন ঘুম ভেঙেছে ভাবতেই প্রচন্ড জোড়ে বাজ পরলো। কেঁপে উঠলাম। বুঝলাম এর আগেরটাই ঘুমটা ভাঙিয়েছে। ঘরের মধ্যে আশ্চর্য কোমল আলো। এই আলোয় উত্তাপ নেই আদর আছে। জানালার কাচে বৃষ্টির অজস্র ফোটা গলে গলে নামছে। কান্না ভরা চোখে বাইরেটা দেখতে যেমন ঝাপসা ঝাপসা লাগে জানলা দিয়ে ঠিক তেমনি দেখাচ্ছে বাহিরটা এখন। আমি সিগেরেট জ্বালালাম। বেশ হালকা একটা টান দিলাম। দিনের প্রথম সিগেরেটের প্রথম টানটা হালকা দিতে হয়। শিশুর কপালে চুমু খাওয়ার মতো। আর দিনের শেষ সিগেরেটে দিতে হয় খোরের মতো টান। গাজায় দম দেয়া টান। বারান্দায় এসে দেখি চেয়ারটা ভিজে আছে বৃষ্টিতে। সেই ভেজা চেয়ারেই বসলাম। পা তুলে দিলাম রেলিংএ। বেশ একটা আয়েশি ভঙ্গি। আমার ঘরটা ছ'তলায় তাই বারান্দায় বসলে চারপাশটা বেশ একটু চোখে পরে। স্প্রের মতো বৃষ্টি হচ্ছে। মিহি বৃষ্টি। এটাকেই কি ড্রিজলিং বলে? সকালের পরিবেশটা অসম্ভব সতেজ। ঘরের বউ যেমন ভোর বেলায় উঠে স্নান সেরে ভেজা চুলে একটা সতেজ নির্মল রুপে নিজেকে প্রকাশ করে। আজকের সকালের পরিবেশটাও তেমনি। ভেজা, সতেজ, সজীব, নির্মল।
আমার ভেতরটাও যেনো একটু গাঢ় হয়ে উঠলো।
আমার পাশের বিল্ডিংটার বারান্দায় এক মুরব্বি গোছের লোক এসে দাড়ালেন। হাতে মেসওয়াক। সেন্ডো গেঞ্জি গায়ে। লুঙ্গি পরা। আমাকে সিগেরেট টানতে দেখে মনে হলো মাইন্ড করছেন। ভদ্রলোক বেশ গোলগাল দেখতে। ওনার পেটে যতটুকু মাংস ওনার মুখেও সেই অনুপাতেই মাংস। দারুন ব্যাপার। ওনার গায়ে মাংসের একটা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটে গেছে। উনি নিজেও জানেননা উনি একটি জীবন্ত বিপ্লবের প্রতীক। উনি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা রাজশাহির টানে বললো-
- শিগেরেট টানছেন? এটা রোজার মাশ জানেন না?
- আমি প্রথমে একটু অবাক হলাম। এই বয়সের মানুষ কেন যে মনের কথা চেপে রাখতে পারেনা কে জানে!
আমি একটু মুচকি হেসে উত্তর দিলাম - রোজা রেখে মেসওয়াক করা যায় কি?
- উনি বিরবির করে কি যেনো বললেন। হয়তো গালাগাল। এর পর ভিতরে চলে গেলেন।
আমি বসে বসে ভাবছি। এত সুন্দর একটি সকালের পরিবেশটাকেতো আর নষ্ট করা যায় না। এক কাজ করি রবীন্দ্র সংগীত বাজাই।
আমার দরজায় ঠকঠক আওয়াজ। দরজা খুলে দেখি মা।
- কিরে এত সকালে গান বাজাচ্ছিস কেন? মানুষের ঘুম নাই? লোকজন সেহরী খেয়ে ঘুমায়। সাউন্ড কমা।
- আমি বললাম মা, দেখো কী অসাধারণ একটা সকাল। আর জাগো মোহন মঙ্গললোকে... শুনতে কি চমৎকার লাগছে। এমন কর কেন? আমি তোমার একমাত্র ছেলে।
- মা বলল হইছে। নাস্তা খাবি?
- আমি বললাম না। বাইরে খেয়ে নেবো।
- মা বলল একটা ডিম হাফ বয়েল্ড করে দেই আর এক গ্লাস দুধ?
- আমি বললাম দাও। দেশি মুরগির ডিম দিও।
ঘরে এখন বাজছে -

একতারাটির একটি তারে
গানের বেদন বইতে নারে
তোমার সাথে বারেবারে
হার মেনেছি এই খেলাতে...
আমি আর একটি সিগেরেট ধরিয়েছি। বাইরে রিমঝিম আষাঢ়ের ধারা জল।
আমার দিন শুরু হয়...

- অনি।
০৯/০৭/১৫
রাত- ১১:৩৭
তোমার কলমের খোঁচায়- আজ আমার দু'চোখে পানি,
হে সূত্রধর, কি করে জানলে তুমি- আমার গল্পখানি?
আমিতো আড়াল করেছি যত- আমার সাধের স্বপন
তোমার লেখার খাতায়- তুমি কিভাবে করেছো বপন?
সে সব না বলা কথা- তুমি কখন বুনেছো মাঠে?
কি ভাবে দেখেছো জোছনা নিশিথে মাটির বক্ষ ফাটে?


- অনি।
০৮/০৭/১৫
রাত-১১:৫২
তুমি আমার কবিতা হও ভরা পেটের চাঁদে
তুমি আমার চেতনা হও সকল বাদ বিবাদে
তুমি আমার প্রেমিকা হও তুই তোকারি প্রেমে
তুমি আমার ধর্ম ধাম হও আকাশ থেকে নেমে
তুমি আমার একলা রাতে বাজতে থাকা গানে
তুমিই আমার একতারা হও একতারাটি জানে।


তুমি আমার বিধাতা হও ছেলেবেলার মাঠে
তুমি আমার গৃহিণী হও বৈতরণীর ঘাটে
তুমি আমার সাধনা হও দিব্যজ্ঞানের স্কুলে
তুমি আমার পাঠিকা হও মনের পোষাক খুলে
তুমি আমার আদিম সঙ্গী উড়নচণ্ডী নাচে
তুমি আমার সভ্যতা হও গন্ধম ফলের গাছে।

- অনি।
০৭/০৭/১৫
রাত- ১০:৩১
কালের কন্ঠ আজ আমার একটি কবিতা ছেপেছে। কবিতাটির নাম নারী।
আর যেই নারী এই কবিতাটি ছাপার জন্যে কালের কন্ঠে পাঠান সে আমার বন্ধু তন্বী। তিনি একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। যতটুকু তার কাছে শুনেছি আমার এই কবিতাটি তিনি তার কলেজ ফাংশানেও আবৃত্তি করিয়েছেন।
কবিতাটির কিছু অংশ পত্রিকাটি আপন মনে কেটে ছোট করে দিয়েছে। এতে তন্বীর মন বিষন্ন। এই সমাজে নারীর গায়ে একটু হাত পরেই। কবিতাটি ছোট হয়েছে কেটে ছেটে তাতে কী? নারীর প্রতি আমাদের সম্মানতো ছোট হয়নি।
তন্বীকে কৃতজ্ঞতা।
https://mobile.facebook.com/Shuvosangho/timeline/story…

- অনি
হাতে একটা টাইম মেশিন নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছি। নাড়াচাড়া করছি। টাইম মেশিনটা ভাল। তবে মেরাযে যাবার মতো অতো ভাল না। নবী মেরাজে গিয়েছিলেন শুনি বোররাকে চড়ে। আর আমার হাতের টাইম মেশিন হচ্ছে একটা প্রাচীন সাহিত্যের বই। যেটা পড়ে হালকা পাতলা অতীত ভ্রমন করা যায়।
এই বড়জোর পাঁচশ হাজার বছর। এতে আরেকটা সুবিধা হচ্ছে ইফতারির আগে আগেই ফিরে আসা যায়।
বইটির একটি ইন্টারেস্টিং দিক হচ্ছে - এই বইটির একজন পাঠক আমার বেশ প্রিয়। তিনিও এই বইটি পড়েছেন এবং খুশি হয়ে একটি ভূমিকা রচনা করেছেন। ভূমিকাটি আবার বইটিতে সংযোজন করে দেয়া হয়েছে। পাঠকটি আমার সমকালিন নন। অসমকালীন। এই অসমকালীন পাঠকের নাম হচ্ছে শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আপনারা অনেকেই তাকে নামে চেনেন।
আমি তার স্বহস্তে রচিত ভূমিকাটি পড়লাম। মনে মনে আপ্লুত হলাম। উনি ভূমিকাটির নিচে তারিখ লিখেছেন ১/১২/৩৯ প্রায় ছিয়াত্তুর বছর আগে। এতে তার সেই ছিয়াত্তুর বছর পুর্বের হস্তলিপি আমার চোখের সামনে।
ভদ্রলোকের হাতের লেখা মেয়েলি তবে ভালোই লাগে খারাপ না। কবি কবি ভাব আছে একটা।
বর্তমানে আমাদের দেশের যে সমস্ত তরুন কবিরা কবিতা লিখছেন তাদের কবিতা সাধারনত আমার মাথার উপর দিয়ে যায়। কবিতা পড়ার পর কিছুক্ষনের জন্যে ভুলে যাই এখন কোন বেলা? সকাল সন্ধা রাত নাকি দূপুর? তাই সাধারনত আমি একটু প্রাচীন সাহিত্যের কাব্যগুলোতেই কবিতা খুঁজতে যাই। মেসি আর রোনালদো যতই ভালো খেলুক পেলে আর মেরাডোনার খেলা যেমন ক্ল্যাসিক তেমনি জীবনানন্দ বা রবীন্দ্রনাথে যে তৃপ্তিটা আনন্দটা পাই সেটা বর্তমান কবিদের কবিতায় পাইনা। কেউ বলতে পারেন নতুনকে গ্রহন করার মন আমার নেই। হতে পারে। আমি মেনে নেবো। প্রাচীন দোতলা একটি ভবনকে ভেঙে নতুন টিনশেড ঘর দেখতে আমার কম ভাল লাগে। যাই হোক। তর্ক থাক। এটা ভিন্ন আলোচনার বিষয়।
আমার কাছে যেমন রবীন্দ্র, জীবনানন্দ। জয়দেব আর বিদ্যাপতি তাদের কাছে ঠিক তেমন ছিলেন। আর সেই প্রাচীন কবি জয়দেব আর বিদ্যাপতি পড়েছেন তাদের যেই পুর্বসূরিদের রচনা সেই কবিরা হলেন শ্রীধর, চৈতন্য, কাশীনাথ, কঙ্ক। যারা কেউ রচতা করেছেন কলিকা মঙ্গল, মনসা মঙ্গল, কেউ বা বিদ্যা-সুন্দর। এদের লেখা পড়ছি আর ভাবছি এরা আজকের ইয়ো ইয়ো হানি সিং এর সময়ে থাকলে কেমন হতো? মনে হচ্ছে আল্লায় যা করে ভালোর জন্যই করে।
আমি প্রাচীন বাঙলার সময়কে উল্লেখ করে আমার বিভিন্ন কবিতায় এক কাল্পনিক প্রেমিকার বিরহে ভুগি। আমার এই প্রাচীন বাঙলার সেই প্রেমিকা দেখতে কেমন ছিল সেটা আমার জানা নেই। তবে সে ঢ়াড়, হরিকেল, গৌড়, পুন্ড্র, সূক্ষ্ম, সমতট কোন এক অঞ্চলে যে ছিল সেটা নিশ্চিত। তাই এই বইটি পড়তে পড়তে আমি সেই প্রাচীন বঙ্গের সমাজে ঢুকে পরেছিলাম।
সেখানে এক রাজ্যের নাম গৌড়। সেই রাজ্যের এক সভাকবি নাম তার শ্রীধর। তিনি বিদ্যা আর সুন্দর নামের দুই চরিত্র নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। সেখানে তিনি বিদ্যার ছবি এঁকেছেন তার কবিতায়।
তিনি বলেছেন -

নবীন ঘনের পুঞ্জ যেন কেশভার।
ধরনী বিলোটায় সে লম্বিত অপার।।
বিদ্যার বদনশশী যেন অববান্ধা।
খঞ্জন জিনিয়া দুই নয়নের ছন্দা।।
উহার ললাট যেন আধশশীখন্ড।
অধর বান্ধুলী যেন মুখ রসভান্ড।।
দশন মুকুতা পাঁতি বাক্য মধুপান।
ভুরুভঙ্গে কামদেব ধনুর সমান।।
গ্রাবাখন্ড দেখি শঙ্খ জলধি প্রবেশ।
মদন-মোহন-বিদ্যা যৌবন বিশেষ।।
কহত মাধব ভাট স্বরুপ উহার।
শ্রুতি নাসা কুচযুগ কিরুপ আকার।।
কুচযুগ মধ্যদেশ কুহরের ছন্দ।
উরুযুগ নিতন্ব কেমন প্রবন্ধ।।
।। মাধব ভাট কথয়তি।।
একমন হই শুন কহি যুবরাজ।
শ্রবন গৃধিনী দেখি পাইলেক লাজ।।
ফাটিল তাল পয়োধর দেশ।
কমল-কলিকা জলে করিল প্রবেশ।।
সমুখে কমলনাসা যেন তিল ফুল।
এ রামকদলী ভূজ নিতন্ব বিপুল।।
দেখিয়াছি কুমারীর বাহু ভুজঙ্গ।
সুবর্ণ মৃনালবর পদ্মএ সুরঙ্গ।।
ক্ষীণ মাঝা দেখি সিংহ পাই উপহাস।
লজ্জায় করিল গিরি কোটরেতে বাস।।
রক্ত-পদ্মসম পদযুগ সুকোমল।
নবশশী জিনি পদ-নথ নিরমল।।
চরনে মল সাজে গমন লীলায়।
চলিতে চলএ যেন রাজহংস যায়।।

বর্ননা পড়ে আমি বাক রুদ্ধ। ফেসবুকের কল্যানে বাঙলার কিছু এনসিয়েন্ট ফোটো দেখেছি। আঠারো সালের মাঝামাঝি আর কিছু উনিশ শতকের গোড়ার। সেইসব ছবিতে বাঙলার যে কয়টা রমনী দেখেছি সবগুলোকেই ভিক্ষুকের মতো লেগেছে। এখন বিদ্যা-সুন্দর পড়ে পুরো চিত্রটাই পাল্টে গেলো। মনে একটু আশা জাগছে যে যাক সানিলিয়নেরো প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে বেইল নাই।
পাঠক যারা ধৈর্য ধরে এই তলাবিহীন লেখাটা পড়েছেন তাদেরকে শাহবাগ পুরস্কার। অর্থাৎ শাহবাগের জ্যামে বসে থাকার অভিজ্ঞতার পুরস্কার। আর ভাল কথা। আমি নিজেও সমকালিন অকবি। সো কোন কিছু জানতে চাহিয়া আমাকে সনাতন করিবেন না।

- অনি।
০৪/০৭/১৫
সন্ধা- ৭:৪৯
এ যে মুগ্ধতা নয় প্রেম তাই মনের ছিল মানা
আকাশ ছিল অন্য পাখির
মেনে নিলাম শূন্য এ নীড়
খাঁচার দুয়ার খুলেও তাই গুটিয়ে ফেলি ডানা।

প্রেমের শিখর ছিল অন্যদেশে শিকড় ছিল জানা
সে আকাশে ভোরের খেলা
আমার খাঁচায় সন্ধাবেলা
সন্ধা তারায় লুকাই আমার সুখ তারাটির ডানা।

নীলিমায় তাঁর তারার চাদর শেষ সীমানায় টানা
সেই চাদরে নিশিথের ঘুম
বন্ধ চোখে রজনী নিঝুম
তাঁর স্বপ্ন ভাঙার ভয়ে আমি ডাঙায় লুকাই ডানা।

আকাশে ওড়ার স্বপ্ন চোখে তবু বুকের খাঁচায় না না
চোখের সামনে খোলা আকাশ
বুকে চাপা দীর্ঘ নিঃশ্বাস
আমার ভালবাসার পাখির আহা শুকায় দুটি ডানা।

সিদ্ধার্থের আকাশে আজ সাইয়ের মনের মানুষ ফানা
শ্রীকৃষ্ণ আজ কৃষ্ণ শিলায়
অচীন পাখির গন্ধ বিলায়
আগুন লাগা আকাশের গায় দগ্ধ বোররাকের ডানা।

ভালবাসার প্রেমের কারাভান দেয় ছোট্ট বুকে হানা
আমি তোমাকে ভালবাসি
তাই বারবার ফিরে আসি
তুমিই আমার মনের আকাশে লুকিয়ে রাখা ডানা।

গরুর মুখের ভিতর
গ্রামের ডাগর কচুরীর পানা- শিশুগাছে বাবুইয়ের ঘর
শিশুর হাতে ঝাপসা অচল পয়সা ময়লা দুই এক আনা,
ঘানিটানা বলদের পাশে- বাছুরের শৈশব মধুকুপি ঘাসে
হলুদ সর্ষের সতেজ দানা-হলুদের মাস যায় আর আসে
বাজারের বটের নীচে নিশ্চল একা বাউল নিতাই কানা,
অজানা পথের শেষে বেদের চোখে ঐ বাড়ির নীশানা,
একটি মৃত পাখি আশ্বিনের ঝরে কাল ভেঙ্গে গেছে ঘর
তার মেঘের মতো পালক-

লোহীত কনায় ভিজে গেছে রক্তিম ডানা...

- অনি।
০২/০৭/১৫
বিকেল - ৬: ০১
জীবনের হরেক অপমান নানান দুঃখ কষ্টের ফাঁকে
আমাদের ক্লান্ত মনের গহীন কোনে গোপন মায়া থাকে
সেই মায়াতেই বিষাদ ভুলি, স্বপ্ন দেয় বাঁচার আশা
ভুলগুলো সব মায়ায় ঢাকি- ঘৃনায় ফোটাই ভালবাসা।

-অনি।
খেলতে খেলতে তোমার সাথে
আপন ভোলা মনে,
চলে এলাম কখন যেনো
গভীর ব্যাথার বনে।
আলোর টানে ছুটে ছুটে সন্ধা হলো পার
সবুজ বনের কোনে কোনে ভীষন অন্ধকার।
..........................................................

ঢের ভালো এই প্রধান আঁধার
কোলাহল চাইনা;
আলো এসে নিভে যাক এই পৃথিবীর পাড়
পরে থাকি একা- এই নির্জন ধরনীর কোনে,
আরো এক মহা একাকী- আমির অন্বেষণে।

-অনি
রচনা কালঃ ২০০৭
সেই সব রুপকথার দিনগুলিতে।
আমার গ্রামের বাড়ির
পানা ডোবার পুকুর জলে,
গুগলি শামুক মাটির চাড়ায়
পা কেটেছে কাদার তলে।

থুয়ে এসেছি কসকো সাবান
হাতের ঘড়ি তোমার স্মৃতি,
ঝিনুক জোঁক আর-
সাপের সাথে সে সম্প্রীতি।

চাকা মেরে গাছের থেকে
আম ফালানো ভীষন সোজা,
জলের থেকে আম উঠিয়ে
কাটবো কিসে ঝিনুক খোঁজা।

এত টক আম আর খাবো না;
খাওয়াস কেনো পল্টিমারা।
ভর দুপুরে ঝিঝির ডাক আর-
ঘুঘুর ডাকে ঘুমায় পাড়া।

কত্তবড় কচুরী ফুল ঐ ডোবাতে-
চালতা গাছের অন্ধকারে;
গা ছমছমে গুইসাপগুলো
কুমিরের মতো চুপটি করে ঘাপটি মারে।

ঝিঝির খোলস দুই পকেটে,
হাতের ভিতর কঞ্চি বাঁশের;
লাউয়ের ডগায় সুতা সাপ আর-
আকাশটাতে রং ধরেছে তালের শাঁসের।

তুমি আমার পিছন পিছন
পেত্নি বসা মাদার গাছের নিচে এসে,
গোখরা সাপের খোলস দেখা
পুরান বাড়ির দেয়াল ঘেসে।

কাঁঠাল গাছের মুছি নিয়ে
ডেফল খোঁজা ছাড়া বাড়ির পুরান ভিটায়,
মাটির ঘরের দেয়াল জুড়ে-
রতন কাকার আম্মা গরুর গোবর ছিটায়।

রাজহাঁসগুলো একেকটা প্রায়-
তোমার সমান অনেক বড়,
তখন আমি থ্রিতে বোধহয়
তুমি তখন প্রাইমারিতে টুতে পড়ো।

তোমার বাড়ি আমার বাড়ি
মদ্দিখানে কচুপাতার সবুজ বেড়া,
একটি বেলা দেরি হলে-
শৈশবের ঐ সে সংসারের অবুঝ জেরা।

আজকে তুমি কোথায় থাকো?
গ্রামে নাকি ঢাকায় নাকি অন্যদেশে?
জোলাভাতির খাবার খাওয়াও-
মুখে তুলে কোন ছেলেকে ভালবেসে?

সেকি জানে-
পুতুল বিদায় খেলায় তোমার কে সে আমি?
তুমি আমার প্রথম বিয়ে;
আমি ছিলাম তোমার কাছে প্রথম স্বামী?

-অনি
২৯/০৬/১৫
রাত- ১:০৪
আমি ফেসবুকে এসেছিলাম তোমাকে খুঁজতে
আমি তোমাকে এখানেই পেয়েছি।
আমার ফেসের বুকে চোখে এখন তাই
কেবলই তুমি আর তুমি
যার মুখই দেখি
আমার তোমাকেই দেখতে ইচ্ছে করে।
তোমার খনিজের মতো পোষ্টগুলো
বারবার বারবার উল্টেপাল্টে দেখি।
ভাবি।
পড়ি।
আনমনা হই, উদাস হই, হাসি।
আমার ইচ্ছে করে
তোমার পাশে বসে তোমাকে লিখতে দেখি।
অদৃশ্য হয়ে বসবো পাশে তুমি মাথা নিচু করে লিখবে।

আমার তোমার প্রতি মুগ্ধতা
আমাকে ঋনগ্রস্থ করে।
তুমি এত মুগ্ধতা ছড়াও যে হলিউড মুভিও এতোটা পারেনি
স্বর্গের প্রলোভনও নয়
এত মুগ্ধ প্রথম পৃথিবী দেখেও হইনি বোধহয়
আমার সমস্ত অনুভূতি যেন তোমাকে দেখার আগে
অসার আর নিস্তেজ হয়ে পরেছিল।
আমার ইন্দ্রিয় আমাকে এত সুখ এর আগে কখনো দেয়নি
তোমাকে দেখার আগে-
আমার প্রেম আমার ভালবাসার পরিমান
আমার জানাছিল না।
তোমার লেখাতে আমি প্রতিবার আমাকে দেখি
যেনো তুমি আমার মনের কথাগুলো
একজন যমজ আত্মার মতো বোঝ
অথবা জাতিস্মরের মতো।
তোমার কথাও আমি আমার কবিতায় বলেছি বারংবার বৈদিকের হাওয়ায়,
দক্ষিন সমুদ্র পাড়ে গৌড়ে, বংগে
সমতট, হরিকেলের গান
আমার বিগত জন্মের দয়িতার কথায়।
হ্যা তোমার সাথে আমার আলাপ হয়তো অল্প দিনের
কিন্তু জানো, পরিচয় অল্পদিনের নয়
সেটা হাজার হাজার বছর পুর্বের।
আমি তোমার চোখে পরতে চাই
এর বেশি আর দাবি রাখিনা এই জন্মে
আজকের সময়ে তুমি কোনও অধিকারেই আর আমার নও
হবেওনা।
সার্থক প্রেম আমাদের হবে না কোনদিন আর
আর আমিতো তোমার চোখেই পরিনা।
কেন পরি না?
এ আমারই দৈনতা।
আমি ফেবু সেলিব্রেটি নই
এখনও ফ্রেন্ড লিস্ট পাঁচশোও ছোঁয়নি
হাজার হাজার ফলোয়ার নেই
শতশত লাইক নেই
নাস্তিকতাকে আমার কাছে মুকুটে পালক মনে হয়
মুকুট নয়
নারীবাদ আমার কাছে প্রাসংগিক
তবে মূল ধারা নয়
আমি কিভাবে তোমার চোখে পরবো
আমার জানা নেই।
তবে কি জানো,
তোমার ভিতরে একটা প্রান আছে যেটাতে আমার অধিকার।
অধিকার ভালবাসার।
আমার কোনও সক্ষমতা নেই শুধু তোমাকে ভালবাসা ছাড়া
তবে তুমি নিশ্চিত থেকো
আমার চেয়ে বেশি তোমাকে কেউ কোনদিন বুঝবেনা।
আরেকটা কথা বলি -
আমি একা থাকি
আর একা থাকি সেটা তুমি নেই বলেই।
তোমার কাল্পনিক সংগও যত্রতত্র সংগের চেয়ে গভীর।
যে বোধ তোমাকে লেখার খোরাক যোগায়
সেই বোধের খনির দেশে বাস করি।
তাই বড্ড তোমার চোখে পরতে চাই
তোমাকে বলতে চাই -
মিলন হবে কত দিনে
আমার মনের মানুষের সনে....

-অনি
২৭/০৬/১৫
রাত- ১১:০৯
সারাদিনমান বর্ষার গান শুধু অবিরাম বারিধারা
শুনবো না কোন গান আজ রবি বাবুর গান ছাড়া
আলস্যশয়নে ঘরে বর্ষনমন্দ্রিত স্বরে মালহার সুরে
বর্ষার দল ঝরিবে কেবল প্লে লিষ্ট ঘুরে ঘুরে।
অবিরাম ধারাপাতে নির্মল টলটলে বর্ষার জল
গানের বানীতে মিশে অসুস্থ মনকে করিবে নির্মল
কোথাও দুঃখ নাই আজ নাই কোন মিথ্যার পিছুটান
আজ শুশ্রূষার তরে ব্যাকুল বাদল ঝরে
বাজে ঘরে আষাঢ়ের গান।
এই মহানগরে
মানুষের ছোট ছোট ঘরে
নির্বোধ নিশ্চেতন মনে।
বিশ্বের ঐকতানধারা
কোরাসের বারিধারা
ঝরুক বিমিশ্র বরিষনে।
আমার এ তপ্ত প্রানে
রবি ঠাকুরের গানে
বাজুক তেমন বাঁশি
বর্ষাধারার মতো
একতালে অবিরত
তোমাদের সকলেরে ভালবাসি।
আষাঢ়ের আকাশের গায় এমন ঘনঘোর বর্ষায়
বাজে একই সনাতন গান
এমন বাদল ধারায় ভিজবি কে আয় আয়
শুনে বর্ষার আহবান।

-অনি
২৬/০৬/১৫
দুপুর - ১:২৮
আমি আরেকটি পৃথিবী চাই;
যেখানে অফুরান ঘনশ্যাম অরন্যের গাঢ় সবুজে,
প্রান্তরের ঘাসে ঘাসে কোন মানুষের পদ চিহ্ননাই।
বধুর ভারী স্তনের মতো জলভারনত মেঘ
তালের শাঁসের মতো রং- ঝুলে আছে অরন্যের মুখে
বুনো হাওয়া উথালি পাথালি বয়-
ঘাসের গন্ধ শুকে শুকে;
অচেনা বুনো হরিন, সাদা নেকড়ে, টাইটান বোয়া
মৎসকুমারীর বিস্মিত দুই চোখ নির্মল জলে ধোয়া।
আমার চারপাশে এক অন্তহীন নির্জন পৃথিবী
অরন্যে, শ্বাপদ, হাওয়া, আর মেঘ ঘনশ্যাম
কোনদিন ডাকবে না কেউ- পিছনে
ডাকার মতো আমার থাকবে না কোন নাম। 


- অনি
২৪/০৬/১৫
রাত- ১০:৪৭
যতবার ছুঁতে গিয়েছি ওগো শংখমালা
অন্য এক ছায়া দেখেছি তোমার ঐ গালে
ধরতে তোমার হাত বারবার-
লুকিয়েছো কুহেলি পর্দার অস্পৃশ্য আড়ালে।

তুমি মন বেঁধেছো পথহারা মেঘের সাথে
নগরে অরন্যে পাহাড়ের ঘাত প্রতিঘাতে। 


তুমি মিথ্যা,
যতটা আমাদের স্বপ্ন হয়;
তুমি মায়া- মৃত্যুর পর
তুমি ঐন্দ্রজালিক ভাবে কুহেলিকাময়।


তুমি দিগন্তরেখার মতো- পথ মিশাও গগনে
প্রেম উড়াও পথে পথে- বাতাসের মনে মনে
তুমি অরন্যে বন্য প্রেম- কাম কামনায় থাকো মত্ত
তুমি তোমার পুজারির মনে- নিষ্কাম দ্বিধাবিভক্ত
তুমি মিথ্যা- যেমন নীল আকাশ দেখে এই চোখ
তুমি বালিকার প্রেমের মতো-
ব্যাথাতুর কুহক।

আমি তোমার হাতের নখে দেখেছি অন্য চিহ্ন
তুমি কাগজের নৌকা
প্রভঞ্জনে করেছো ছিন্নভিন্ন।

সাদা নেকড়ে ঘুম পারিয়ে আসো তুমি আমাদের গাঁয়ে
উঠানে চাঁদের আলো -
পদ্মের ফুলে ফুলে চাঁদনী ঝরায়ে।

তোমার হাসিতে বেজে ওঠে
মাঝ রাতে কিষানের বাঁশি
তোমাকে ধরবো তাই-
নিশিপাওয়া পাগলের মতো ছুটে আসি।

যতবার আমি ছুতে গেছি তোমায়
আমার মৃত্যু দেখেছি তোমার চোখে।

যে মৃত্যুকে শহস্র শহস্র মহিমায়
মহান লোভনীয় করেছো অনন্ত কুহকে।

ওগো প্রিয় শংখমালা,
স্বপ্নে শব্দ নেই তাই সে মৌনি নিরালা
আমি জেনে গেছি তাই তুমি মিথ্যে মহা মিথ্যে

নক্ষত্র মিথ্যে যেমন কৃষ্ণ গহব্বরের কালো বৃত্তে।

- অনি।
২৩/০৬/১৫
রাত- ৯:২১
আমি একদিন রোদ হবো
ভোরের কর্ম ব্যাস্ত রোদ নয়

হয়তো বিকেলের ছুটির রোদ
ক্লান্ত নরম অবসরের রৌদ্দুর।

শহরের মলিন ধুসর ইমারতে
ছুটির আমেজ ছড়ানো স্বর্নালী বিভা

মহাকালের সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার আগে
শেষ মূহুর্তের কন্যাসুন্দর আলো ,

তোমাদের আকাশে আকাশে
অর্থহীন অজস্র রঙিন এবেস্ট্রাক্ট পেইন্টিং।

অর্থহীন কাজের জীবনে
আমি একদিন রোদ হতে চাই,

অর্থহীন এক নির্জন বিকেলে...

তোমার বারান্দায় চায়ের পিরিচে
তোমার পায়ের পাতায় লুটিয়ে থাকা
সোনালী রোদ।

তোমার অমোঘ সন্ধার আগে
আকাশের ক্যানভাসে-

মহাকালের সবচেয়ে অপুর্ব মাস্টার পিস;

অর্থহীন-
অথচ তোমার মনকে ভালো করে দেবার মতো রৌদ্দুর।


- অনি
বিকেল - ৬:৪৭
২০/০৬/১৫
তুমি রানী মহারানী,
তোমার সীথান শয়ন পদ্ম পালংকে।
আমি তব দাসানুদাস
আমার নিবাস-
ধুলায় মেঝেতে পংকে।

-অনি
রাত- ১২:১৬
১৯/০৬/১৫
আমি খুব সাধারন একটা ছেলের গল্প বলবো। ছেলেটির নামটিও বেশ সাধারন 'সোহেল'। বন্ধুরা যাকে মজা করে বলে সোহেল - গো টু হেল...

একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির রিসিপশান। ভাবসাবই আলাদা। রেড আর হোয়াইটের অদ্ভুদ কম্বিনেশন পুরো রুমে। মিউট করে ওয়ালে টিভি চলছে। ফ্যাশান সো হচ্ছে। কিছু উন্মাদ মনে হয় মডেল। যেমন খুশি তেমন সাজোর ফ্যাশান সোতে প্রায় সবকটি মডেলই মনে হয় মৃত মানুষ সেজেছে। এই ঘরটিতে লাইটিং সোর্সও ইনভিজিবল। এক কোনায় শ্বাশত বাংলার বাশঝার। আমাদের গ্রামের গোয়াল ঘর আর পায়খানার পিছনের বাঁশঝার কোনদিন কি ভেবেছিল কি পরিমান ইজ্জত তার জন্যে সামনে অপেক্ষা করছে? যাইহোক, রিসিপশান টেবিলের পাশে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার জারে রংবেরঙ এর নাম না জানা চকলেট রাখা। গেস্ট রিফ্রেশমেন্ট। সবাই কাজ করছে অথচ কোথাও শব্দ নাই। সাউন্ড ওয়েভ টোটালি কন্ট্রোলড। টেবিলের ঐ পাশে যে মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে যদিও তাকে এই অফিসের সাথে মোটেই মানাচ্ছে না। মেয়েটিকে মহিলা হোস্টেলের সুপারেন্টেন্ডের মতো লাগছে। এদেরকে দেখে অবশ্য কিছু বোঝাও মুশকিল। এরা পাশের কলিগের সাথে তুই তোকারি করে মোস্তফা সরোয়ার ফারুকির নাটকের চরিত্রের মতো করে কথা বলে। শুধু যখনি কোন লোক তাদের কাছে আসে তখন তাদের প্রফেশনাল রুপ বেড়িয়ে আসে। চোস্ত ইংরেজিতে কথা শুরু করে। এদের ইংরেজি শুনলে মনে হয় এরা জন্মসুত্রে বাংগালি কিন্তু বড় হয়েছে বিদেশে। এই অফিসের রিসিপসনিস্ট মেয়েটির নাম রেবেকা। সে সবাইকে বলে রেবা।
রেবা বেশ বিরক্ত। যদিও সে তার চেহারায় একটা ডিপ্লোম্যাটিক ভাব বজায় রাখতে চেষ্টা করছে। রেবার বিরক্তির কারন হচ্ছে তার সামনে বসে থাকা দশ বারোজন ভিজিটর।
আজ এই অফিসে ভাইবার একটি সিডিউল আছে। এই লোকগুলো সম্ভবত সে জন্যই এসেছে। কিন্তু লোকগুলোর নুন্যতম কমনসেন্স নেই। এরা প্রায় সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। একটা মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকা যে মেয়েটির জন্য কতটুকু এম্বারর্সিং এই বোধটুকুও কি এদের নেই। এরা চাকরী করবে কিভাবে?
রেবার বিরক্তি বাড়ছেই। রেবা ঘড়ি দেখলো। ভাইভা টাইম শুরু হয়ে গেছে। অথচ ফার্স্ট ক্যান্ডিডেট এখনো আসেনি। এই অফিসের পাংচুয়ালিটির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স। রেবা নেক্সট ক্যান্ডিডেট কে ভিতরে যেতে বলল।
এর ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই সোহেল ঢুকলো অফিসে। ওর আজ এখানে ইন্টারভিউ। সোহেল ঢুকেই একটু ভেবাচেকা খেয়ে গেল। জটিল অফিস আর অফিসের ভাবসাব। রেবাও লক্ষ্য করলো একটা ছেলে ঢুকেছে। গায়ের রং কালো। চুলগুলি কোকড়া আর এলোমেলো। ঢোলা প্যান্টের সাথে বেমানান টাইট সার্ট পরেছে। হাস্যকর লাগছে দেখতে। ঢোলা প্যান্টের সাথে পরেছে কনভার্স তাও আবার সবুজ রংবেরঙ।
রেবা মনে মনে ভাবলো এই টাইপ লোকজন কিভাবে এইসব অফিসে ইন্টারভিউ দিতে আসে। এদের উচিত থানা অথবা ইউনিয়ন পর্যায় টিকাদান কর্মসূচিতে কাজ করা।
সোহেল রিসিপশানের দিকে এগিয়ে এল।
চোখেমুখে অস্বস্তির ছাপ নিয়ে বলল - এক্সকিউজ মি = আমি সোহেল আমার একটা এপয়েন্টমেন্ট ছিল ভাইবার।
= রেবা বলল কয়টায়?
= সোহেল বলল ১০ টায়
= রেবা বলল এখন কটা বাজে?
= সোহেল লাজুক একটা হাসি দিয়ে ঘড়ি দেখে বলল সাড়ে দশটা।
= রেবা এবার চোস্ত ইংরেজিতে যা বলল তার বাংলা করলে দাড়ায়- আমরা দুক্ষিত। আপনাকে চলে যেতে হবে। আপনি আপনার এপয়েন্টমেন্টটি মিস করেছেন।
= সোহেলের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মনে হল শালি ফাপর মারতাসে। ভাব আরকি। চেহারাটা শাঁকচুন্নির মতো। দামী একটা অফিসের চাকরী কইরা দাম দেখাইতাসে। হেরে একটু তেলাইতে হইবো। সোহেল চেহারাটাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে মুখটা হাসি হাসি করে বলল - ম্যাম, আমি আসলে আগেই রওনা হয়েছিলাম। ঢাকা শহরের জ্যামের অবস্থা জানেনিইতো। মিরপুর থেকে গুলশান বাস পাওয়াও সমস্যা। আপনি একটু এক্সকিউজ করে দেন।
সোহেল মনে মনে ভাবলো কাজ হবে। যতকিছুই হোক বিশ ত্রিশ মিনিটের জন্যেতো আর বাদ দিয়ে দিবে না। আর কাল রাতে ও ঘুমায়নি। ও দেখেছে যে রাতে ও সারারাত জেগে পরেরদিন কোনও কাজে যায় সেটা ওর হয়।
= রেবা সম্পুর্ন ভাবলেশহীন নিরুত্তাপ গলায় বলল- আমাদের কোম্পানি পাংচুয়ালিটিকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেয়। কোন লেম এক্সকিউজ এক্সেপ্ট করেনা। আপনাকে গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে ভিজিটর কার্ড প্রভাইড করা হয়েছে। আপনি সে কার্ড পাঞ্চ করে ইন করেছেন সিসি ক্যামেরা এই রিসিপশানকে কাভার করছে। আপনার রেকর্ড অলরেডি কপিড। বেটার লাক নেক্সট টাইম।
সোহেলের কাছে মনে হল একে আর ঘাটিয়ে কোন লাভ হবেনা। আফসোস এই কথাগুলো নিরিবিলি শুনতে পাইলাম না। এতগুলি লোকের সামনে শুনতে হইল। এইখান থেকে হাঁইটা যাওয়াটাও লজ্জা। একটা সুন্দর মেয়ের থেকে এগুলি শুনলেও নাহয় চলতো। বসাইছে একটা পেত্নি। আর এতগুলি মানুষ একটা শালাও কিছু কইলো না। সোহেল নিজেকে সামলিয়ে বিদায় নিতে কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু ততক্ষনে রেবা ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। এতগুলো লোক এখন সোহেলের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা প্রচন্ড লজ্জার। সোহেল কোনমতে মাথাটা নীচু করে লিফটের কাছে চলে এলো।
লিফট সেকেন্ড ফ্লোর ইন্ডিকেট করছে। সোহেল আছে 18 th ফ্লোরে।
গতকাল যখন সোহেলের কাছে এই অফিস থেকে ফোনটা আসে ( এই শালিই মনে হয় করেছিল) যে আগামীকাল ওর ভাইবা। সোহেলের কাছে কেন যেন মনে হয়েছিল চাকরীটাই হয়ে গেছে। কারন সিভিতে ওর এক্সপেরিয়েন্স ছিল পর্যাপ্ত। আর সবচেয়ে লোভনীয় ছিক সেলারি। ওরা সেলারি উল্লেখ করেছিল ১২০০ ডলার। সোহেল বর্তমানে যে অফিসে চাকরী করে সেখান থেকে ও বাসে বাসায় ফেরে। অথচ যেদিন ও ভাইবার জন্য ফোন পেলো সেদিন ও রিক্সায় ফিরেছিল। মনে মনে ভেবেছিল করিনা কিছু এক্সট্রা খরচ। সবঠিক হয়ে যাবে। এইতো শুরু। চাকরিটা পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। স্ট্রাগলের দিন শেষ। এবার একজোড়া ভাল জুতা কিনতে হবে। যে জুতাটা পরে ও অফিস করে ওটার অবস্থা লোকার বাসের সীটের চেয়েও খারাপ। এবার আর জুতা কেনার প্ল্যান করে একবছর বসে থাকতে হবে না।
টুং করে একটা শব্দে সোহেলের সংবিৎ ফিরে এল। লিফটের দরজাটা খুলছে। দুজন মধ্যে বয়স্কলোক একটি মেয়ে আর দু'জন ফরেনার বের হলো। একজন বিদেশী বুড়া আবার হেলোও বলল। সোহেল কি উত্তর দিবে বুঝতে বুঝতেই তারা চলে গেল। আহ কি চমৎকার পারফিউম এর গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে গেল। বিদেশিটা যখন সোহেলকে হেলো বলছিলো সোহেলের ইচ্ছা করছিলো জুতা খুলে জুতার উপর বসে পরে। যাতে ওর জুতাটি দেখতে না পায়। লিফটের ভিতরে ঢুকে সোহেল G বাটনটাতে চাপ দিয়ে দাড়িয়ে রইল। একেবারে একা ও লিফটে।
আজকে যখন এই বিল্ডিংটার সামনে এসে দাড়ায় তখন ওর মনে হচ্ছিল আরে খাইসে কি জিনিস বানাইসে! জটিল! চরম! গজব! ব্লু কালারের গ্লাস দিয়ে পুরা বাইশতলা ঢেকে দিছে।
এই এলাকাতেই ওর এক চাচাতো ভাইয়ের অফিস। এক বিদেশি ব্যাংকের ম্যানেজার। এই ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ নাই। এবার এখানে চাকরী হলে যোগাযোগটা শুরু করতে হবে। মাঝে মাঝে লাঞ্চটাইমে ওনার অফিসে ঢুকে বলবো - আচ্ছা আপনাদের এখানে ভাল লাঞ্চ কি কি পাওয়া যায়। আজ আমি লাঞ্চ করাবো। এই ভাইটার অনেক ভাব। বড় চাকরী করে দেখে সোহেলদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনা। তবে এইবার পাত্তা না দিয়ে যাবে কই চান্দু? যখন দেখবে সোহেল নিজেও গুলশানে চাকরি করে আর অনেক টাকা বেতনও পায়। সোহেল একবার ভেবেছিল তার ভাইটাকে ফোন দিয়ে এই অফিসের এড্রেসটা জেনে নেয়। পরে আবার মনে হল থাক। যদি চাকরীটা না হয় তখন। তারচেয়ে বরং চাকরীটা হয়ে গেলে একেবারে একটা গজব ড্রেসাপ করে ওর অফিসে গিয়ে বলতে হবে তুমি এইখানে আছো? ভালই হলো। আমার অফিসও এখানেই পাশেই। ভালই হলো। তুমি যেহেতু ব্যাংকে আছো কোন হেল্প লাগলে বলো। এই নাও আমার বিজনেস কার্ড। শালার কিচ্ছু হইলো না।
লিফট থেকে নেমে সোহেল ভিজটিং কার্ডটি জমা দিয়ে রাস্তায় বের হয়ে এল। এখন প্রায় এগারোটা বাজে। গুলশান এলাকায় প্রচন্ড ট্রাফিক। মে মাস। প্রচন্ড গরম। রাস্তায় গাড়িগুলো সব জ্যামে আটকে আছে। গগনচুম্বী সব অট্টালিকা। ঢাকা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে প্রচন্ড সম্ভবনাময় একটি শহর। আর গুলশান এলাকাটি এই শহরের সবচেয়ে বিত্তবানদের এলাকা। ঢাকার মধ্যবিত্ত যারা এ অঞ্চলে চলাফেরা করে বা কাজে আসে তাদের ভিতর একই সংগে আশা ও হীনমন্যতাবোধ কাজ করে। এখানে কোটি কোটি টাকা মুল্যের গাড়ি গাম্ভির্য নিয়ে চলা ফেরা করে। বিলিয়ন বিলিয়ন টাকার কর্পোরেট ব্যাবসার অফিস এখানে। এই এলাকাতেই ডিপ্লোম্যাটিক জোন। এখানে যারা সফল তাদের মধ্যে রংপুরের একটা প্রবাদ বাক্যের প্রতিফলন দেখা যায়- ' মুই কি হনু রে'। যেসব ধনী ব্যাক্তি এখানে রেসিডেন্স হতে চান সেটা কেবল একোমডেশনের জন্যই নয় সেটা আভিজাত্যর জন্যও।
এহেন গুলশান এলাকায় সোহেলের পকেটে আছে শুধু ফিরে যাবার বাস ভাড়া। সোহেল ঢাকার ছেলে হলেও গুলশানে এসে হকচকিয়ে গেছে। সোহেলের কাছে মনে হচ্ছে একটু আগে ওর একটা অপারেশন হয়েছে। স্বপ্ন অপারেশন। একটি চাকরী পাওয়ার স্বপ্ন খারাপ টিউমারের মতো ননম্যালিগ্ল্যান্ট গ্রোথ হয়েছিল। যেটা একটু আগে অপারেশন করে ফেলে দেয়া হয়েছে। তাই যেন শরীরটা দুর্বল। মাথা ঝিমঝিম করছে। মাথা ঝিমঝিম করার অবশ্য আরেকটা কারন আছে। সেটা হচ্ছে সকালে নাস্তা না করা। যদিও ওর মা নাস্তা খাবার জন্য অনেক পিড়াপিড়ি করেছেন। কিন্তু ভাইবা দিতে যাবার উত্তেজনায় খাবার গলা দিয়ে নামতো না। সোহেল তাই নাস্তা না খেয়েই রওনা দেয়।
এই টাইমটায় লোকাল বাসের মধ্যে যে ভীড়! এখানে ওঠা আর আত্মহত্যা করা একই ব্যাপার। এছাড়া প্রচন্ড সিগেরেট খেতে ইচ্ছে করছে। সিগেরট কিনলে আর ফিরে যাবার বাস ভাড়া থাকবে না। আর বাসে গেলে সিগেরট খাওয়া হবে না। এমন দোটানার মধ্যে সোহেলের চোখ পরলো এই এলাকার মেয়েদের দিকে। সবাই যেনো টিভি সিরিয়ালের মেয়েদের মতো। হয় শপিংএ যাচ্ছে আর নয়তো আসছে। এরা কেউ কেউ এত সুন্দর যে সোহেলের কাছে মনে হল বাস্তবে না এদের টিভিতে দেখাচ্ছে। আহা এরা না জানি কত সুখে আছে। এদের মধ্যে একটা মেয়েকে দেখে সোহেলের ভাইবা দিতে না পারার কষ্ট কমে গেল। মেয়েটিকে দেখে সোহেলের মনে হল এদেরকে এতদিন শুধু ম্যাগাজিনেই দেখেছি। এরা সামনা সামনি তাহলে এত সুন্দর হয়!!! এত সুন্দর একটা মেয়েকে সামনা সামনি দেখে সোহেল মনে মনে কবিতা মনে করার চেষ্টা করতে চাইলো। কিন্তু আশ্চর্য! একটা কবিতাও মনে আসছে না। শুধু অদ্ভুত ভাবে মমতাজের ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায় এই লাইনটাই ঘুরঘুর করছে। অথচ অসময়ে কত অপুর্ব লাইন মাথায় আসে।
সোহেল সিদ্ধান্ত নিল সে হেঁটে বাসায় ফিরবে।
এতে আরাম করে সিগেরেট টানতে টানতে যাওয়া যাবে। পথের মধ্যে একবার চা সিগেরেটের ব্রেক। তারপর আবার হাঁটা। চাকরী না হওয়ার কষ্ট, মেয়েটিকে দেখার পর উদাস উদাস ভাব সব মিলিয়ে সোহেল হাঁটাই ঠিক করলো। পাশের এক সিডির দোকান থেকে ভেসে আসছে -
যো ওয়াদা কিয়া ও নিভানা পারেগা,
রোকে জামানা চাহে রোকে খুদাই
তুমকো আনা পারেগা...
সোহেল এই গানটা গুনগুন করতে করতে হাঁটা দিল।
এই গানের কথার সাথে যদিও সোহেলের বর্তমান বাস্তবতার কোন যোগ নেই। তবুও সোহেলের মনে হচ্ছে - একেবারে আমার নিজের কথা।
যো ওয়াদা কিয়া ও নিভানা পারেগা..
যে কথা তুমি দিয়েছো সেটা তোমাকে রাখতে হবে...
সোহেলের গানের গলা সুন্দর। সে গুনগুন করতে করতে যাচ্ছে। দুর থেকে এখনও কানে ভেসে আসছে -
রোকে জামানা চাহে রোকে খুদাই তুমকো আনা পারেগা...
সোহেলদের বাসা মিরপুরে।
অনেক ভিতরের দিকে।
বহু অলিগলি পাড় হয়ে যেতে হয়।
একটি টিনশেড বাসায় থাকে ওরা।
সাথে কয়েকটি কমন ফ্যামেলি।
সবার জন্যে কমন বাথরুম কমন রান্নাঘর।
সোহেলের বাবা নেই। বছর চারেক আগে হার্ট এটাকে মারা গেছেন।
সোহেলের ছোট বোন আর সোহেলের মাকে নিয়ে সোহেল থাকে একরুমের বাসায়।
ভাড়া তিন হাজার টাকা। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সব এর মধ্যে। সস্তা।
রাতে সোহেল মেঝেতে ঘুমায়।
ওর মা আর বোন ঘুমায় খাটে।
ঝামেলা লেগে যায় যখন কেউ থাকতে আসে। সোহেলের তখন কোননা কোন বন্ধুর বাসায় থাকতে যেতে হয়।
সোহেলের অবশ্য ভালোও লাগে।
সোহেল বর্তমানে যে অফিসে চাকরী করছে সেখানে ওর চার বছর হয়ে এলো।
ওর বাবা মারা যাওয়ার পর পরই ঢুকেছিল।
শুরুতে বেতন ছিল ২০০০ টাকা। এখন ছয় হাজার পাঁচশ টাকা পায়। এই বেতন দিয়ে ওর বাসা ভাড়া খাওয়া দাওয়া চালাতে হয়। ওর ছোট বোনটা অবশ্য টিউশনি করে। এই বাসার বিভিন্ন ঘরের পিচ্চিদেরকে পড়ায়। এই দুইহাজার পনের সালে মাত্র একশ টাকা জন প্রতি। তাও সব মিলিয়ে শ'পাঁচেক টাকা আসে। এই টাকাটাও ওদের সংসারে কাজে লাগে। যদিও সোহেল এই টাকাতেও মাঝে মাঝে ভাগ বসায়। খুবই লজ্জিত ভংগিতে ওর বোনকে বলে - আমাকে ২০ টা টাকা দেয়া যায় রে? আজ অফিসে যাওয়ারও ভাড়া নাই।
সোহেলের মা কিভাবে সংসার চালান সেটা উনিই জানেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের মায়েদের অনেক রকম ম্যাজিক জানতে হয়।
অবর্ণনীয় অভাবের মধ্যেও তিনি তার ছেলেকে মেয়েকে আগলে রাখেন। ওদেরকে বুঝতে দেননা।
প্রায় প্রতিদিনকার খাবারের মেনু দেখে যখন তার ছেলে মেয়ে প্যানাপ্যানি করে- তিনি হতাশ চোখে শুধু তাকিয়ে থাকেন।
কাল যখন সোহেল ওনাকে সোহেলের ভাইবার খবর দেয় তখন তিনি সংগে সংগে পাশের ঘরের এক মহিলার কাছ থেকে দেড়শ টাকা ধার করে আধা কেজি গরুর মাংস কিনে আনান। ছেলে মেয়ে দুইটাই গরুর মাংস বলতে অজ্ঞান। দুই পিস মাংস দিয়ে দুই থাল ভাত খেয়ে ফেলতে পারে। হাঢ় চুশে চুশে একেবারে ফকফকা করে ফেলে। ওদের মা মজা করে বলে- আরে পিপড়ার জন্যে কিছু রাখ।
তিনি এই আধাকেজি মাংস ছোট ছোট টুকরো করে তাহারি রান্না করেছিলেন। আহা খাক একটু ভালমন্দ। কাল ছেলেটির ভাইবা। যদি ভাল কিছু হয়?
এই ভেবে তিনি সার্ট প্যান্ট ইস্ত্রি করে এনেছেন।
টাকা দিতে পারেননি। বলেছেন সামনের মাসে দিবেন। ছেলেটার একটাও ভাল সার্ট প্যান্ট নেই। এক বন্ধুর কাছে থেকে এনেছে সার্ট আরেকজনের থেকে এনেছে প্যান্ট। সার্টটা হয়েছে টাইট আর সার্টের তুলনায় প্যান্টা হয়েছে বেমানান ঢোলা। এই সার্ট প্যান্ট পরেই ছেলেটা অনেক ক্ষন আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেছে। ছোট বোনটা অবশ্য বলেছিল- ভাইয়া তোর এক জোড়া নতুন জুতা হলে বেশ হতো।
সোহেল বলল - জুতা পেলাম না। কারো পায়ের মাপে পা মেলেনা। শোন, আমার জুতোটা পুরানো কিন্তু বিদেশি জিনিস। আর ফরেন অফিসে যাচ্ছি। বিদেশি জুতোর মুল্য ওরাই বুঝবে। সোহেলের জুতাটা আসলেই বাইরের। ওর এক বন্ধু বছর তিনেক আগে দেশে এসেছিল। আবার চলে যাওয়ার আগে সোহেলকে দিয়ে গেছে। সেই জুতার রং টং উঠে একাকার অবস্থা। যদিও ছেড়েনি এখনো। শুধু ছাল বাকড়া উঠে গেছে।
হঠাৎ পিছনে গাড়ির হর্নে সোহেল ঘুরে তাকালো। গাড়িতে ওর এক বন্ধু তানভির। তানভির মাথা বের করে বলল - সোহেল গো টু হেল। where are you going bro? তানভিরের কথায় গাড়ির ভিতরে মেয়েদের হাসির আওয়াজ শোনা গেল। সোহেল বুঝতে পারলো না এই কথায় হাসির কি আছে।
সোহেল মিনমিন করে বলল এখানে একটা কাজে এসেছিলাম।
তানভির ভেতরের দিকে তাকিয়ে বলল দেখছো?
আমি বলছিলাম না? আমার ফ্রেন্ড যায়। সে বিড়াট কাজের মানুষ। গুলশান এলাকার উন্নয়ন এখন সোহেলের হাতে। তুই কই গেছিলি ইউ এস এম্বাসেডর এর সাথে দেখা করতে? কিরে দোস্ত জবাব দে? তোকে দারুন লাগছে রে। আবার মেয়েদের হাসির শব্দ। তানভিরের ততক্ষনে ফ্লো এসে গেছে। দোস্ত তোকে তোকে রাজকাপুরের মতো লাগছে। ঐ যে মেরা জুতা হ্যায় জাপানি ইয়ে পাতলুন ইংলিশতানি ওমন। তুই এই রাজকাপুর সেজে এম্বেসিতে গেলি?
সোহেল মিনমিন করে কি বলল ভালো বোঝা গেল না।
তানভির ওর গাড়িতে বসা মেয়েদের কে বলল এই তোমরা যাকে দেখছো সে কিন্তু গুনধর ছেলে। প্রচুড় পড়ুয়া। আবার নাকি সুরে রবীন্দ্র সংগীতও গায়।
এই কথা শুনে এক মেয়ে নাকি সুরে বলল - রাঁজঁকাঁপুঁরঁ ভাঁইঁয়াঁ একটি রবীন্দ্রসংগীত শুনান না। আবার হাসাহাসির ধুম পরে গেল।
সোহেল বুঝতে পারলো কোন এক বিচিত্র কারনে এই মেয়েগুলো ওকে নিয়ে মজা করছে। সোহেলের খুব অস্বস্তি হচ্ছে। যেতেও পারছেনা। আবার এসব নিতেও পারছে না।
তানভির বলল- এই গাড়িতে ওঠ। আমরা পিৎজ্জা খেতে যাচ্ছি। চল ওঠ।
সোহেল বুঝতে পারলো ওকে পিজা খাওয়ানোটা মুল উদ্দেশ্য না। ওকে ওরা এন্টারটেইনিং এলিমেন্ট হিসেবে নিতে চাচ্ছে।
সোহেল বলল নারে। আজ না। তোরা যা। আমার মহাখালি একটা কাজ আছে।
তানভির বলল চলনা। তুই মহাখালি না গেলে কি রাশিয়া আমেরিকার সাথে সন্ধি করবেনা?
মেয়েরা আবার হাসি শুরু করলো। মেয়েরা একবার কিছুতে হাসি শুরু করলে হাসতেই থাকে।
পিছনে দুইটা গাড়ি হর্ন দিচ্ছে তানভিড় গাড়িটা একটু সামনে বাড়াতেই সোহেল চট করে হেঁটে সামনের এক গলিতে ঢুকে গেল। গলির মোড়ে একটা ভ্যানের উপরে তেলাপোকা মারার ঔষধ বিক্রি করছে। এক লোক মাইক দিয়ে বলছে - 'তেলাপোকা মুক্ত সমাজ চাই'.... 'তেলাপোকা মুক্ত সমাজ চাই'....
সোহেল কিছুক্ষন গলিতে দাড়িয়ে শ্লোগান শুনলো। তারপর উকি দিয়ে দেখে যে না গাড়িটা চলে গেছে।
সোহেল এবার হাঁটা ধরল। একবার ভাবলো ক্যান্টনমেন্ট এর রাস্তাটা ধরবে পর মুহুর্তেই মত পাল্টালো। মন যে পরিমান খারাপ। নিজেকে কষ্ট দিতে ইচ্ছে করছে। বিজয় স্বরনীর রাস্তা দিয়ে ঘুরে যাবে। শুধু মধ্যে একটা চা সিগেরেটের ব্রেক নেবে। থামবে। তারপর আবার বাকী পথটুকু হাটবে।
হাঁটতে হাঁটতে সোহেলের ঘুরে ফিরে কালকের দিনটাকেই মনে পড়ছে। কি সীমাহীন আশাটাইনা ছিল আজকের দিনটিকে নিয়ে।
সোহেল ওর মাকে বলেছিল শোন - এই চাকরীটা হলে আমি বাসা নিবো কোথায় জানো মা?
= কোথায়?
= গুলশানে। হা হা হা। তোমার না দামী রেস্তোরাঁয় খাবার সখ? তোমাকে পিজা হাটে খাওয়াবো। একটা পিজা চোদ্দশ টাকা দাম। প্রথম বেতন পেলে খাওয়াবো ওয়েস্টিনে। এটা আরো অন্য ধরনের ব্যাপার সেপার। আমার এক বন্ধুর বোন ওখানে জব করে। আমাকে চেনে। বলেছে কখনো গেলে যাতে দেখা করি। বুঝছো? আমার ভাল কানেকশন আছে উচু লেভেলে। এইসব আড্ডা যখন চলছিল তখন সোহেলের দুই তিন জন বন্ধুও ছিল ওর বাসায়। আগামিকাল ওর ভাইভা উপলক্ষে সোহেল ওদের রাতে খেতে বলেছে। সোহেলের মা চিন্তিত। চার জন খেতে পারবে কি? আধা কেজি মাংসের তেহেরিতে হবেতো? তিনি শুধু তাদের তিন জনের জন্যেই রেধেছিলেন। এখন ওরা খেলে তিনি আর তার মেয়ের খাবার কিছুই থাকবে না। সোহেল তাকে না বলে ওর বন্ধুদের নিয়ে এসেছে। থাক। কাল ছেলেটার একটা ভাইবা। আমি না হয় মেয়েটিকে নিয়ে একটা মরিচের ভর্তা করে খেয়ে নেব।
সোহেলের এক বন্ধু কবির বলল - তোর চাকরী হলে তোর বোনকে কি দিবি?
সোহেল বলল ওকে প্রতি মাসে দশ হাজার করে টাকা দেব। যদি এই টাকা পেয়ে ও নষ্ট হয়ে যায় তাও সই।
যে অভাব ও দেখেছে এখন টাকা পেয়ে নষ্ট হওয়াতেও সুখ।
সোহেলের ছোট বোন বলল ভাইয়া তোর না বইয়ের সখ? টাকার জন্যে কিনতে পারিস না। তোর না কত সখ এক সেট রবীন্দ্র রচনাবলীর? টাকা পেলে সবার আগে এক সেট রবীন্দ্র রচনাবলী কিনবি।
সোহেলের মা বলল সবার আগে সোহেলের বিয়ে দিতে হবে।
এই কথা শুনে সোহেলের বন্ধুরা হৈহৈ করে উঠল।
সোহেলের মা বলল - এরপর আমার ছুটি।
তোর বউ তোর সংসারের হাল ধরবে।
সোহেল রাগি গলায় হাসি হাসি মুখে বলল- বউ এসে কি বাসার কাজ করবে? আমি কি কাজের বুয়া বিয়ে করবো? লাজুক স্বরে বলল আমি আমার বউকে দিয়ে কোন কাজই করাবো না।
সোহেলের মা বলল বিয়ের আগেই এই অবস্থা? আর শয়তান আমাকে যে বুয়ার মতো খাটাইয়া মারিস।
তোর বিয়ের পরেও আমিই ঘানি টানবো?
আরে চাকরীটা পেতে দাও খালি। বাবুর্চি রাখবো। কুক। শেফ। তুমি খালি অর্ডার দিবা। এটা খাবো। সেটা খাবো। আর বাবুর্চি শুধু টেবিলে খানা লাগিয়ে দিবে। সোহেলের ছোট বোন বলল আমি তিনবেলা গরুর মাংস খাবো।
সোহেলের এক বন্ধু বলল দোস্ত আমাদের কি দিবি?
সোহেল বলল যা তোদের সবাইকে একটা করে দামী মোবাইল ফোন।
সোহেলের আরেক বন্ধু বলল আন্টিকে শাড়ি টারি বেশি করে কিনে দিবি। আন্টির সব পুরানো কাপড় চোপর।
সোহেল বলল আরে আম্মুতো তখন মহেন্দ্রসিং ধনি। আমার সবইতো আম্মুর। আম্মুর ফ্ল্যাটে তখন সারাক্ষন স্টার প্লাসের মতো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজবে। আর আম্মু স্টার প্লাসের মহিলাদের মতো সবসময়ই সেজে গুজে থাকবে।
রাতে সেই আধা কেজি মাংসের তেহারি কি চমৎকার তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া হল। সালাদ বলতে শুধু পেয়াজ আর কাচা মরিচ। একজন আবার খাওয়া শেষ হতেই দৌড় দিয়ে একলিটারের সেভেন আপ নিয়ে এল বাকীতে।
সেটা দেখে সোহেলের মা বলল আহা আহা এসবের আবার কি দরকার ছিল।
ছোট ছোট গ্লাশে করে সেই সেভেন আপ কাড়াকাড়ি করে খাওয়া। হাতাহাতি করতে গিয়ে অনেকখানি পরে গেল। আহ কি চমৎকার রাতটাই না ছিল কাল...
হাঁটতে হাঁটতে সোহেল বিজয় স্বরনী চলে এসেছে। চোখটা কখন যেন ঝাপসা হয়ে গেছে। সোহেলের মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে -
আচ্ছা সুখ কাকে বলে?
দূঃক্ষ কাকে বলে?
কালকেও আমার এই চাকরীটা ছিল না। অথচ কি অসম্ভব আনন্দ ছিল। আজও চাকরিটা আমার নেই কিন্তু সহ্য করতে পারছিনা কেন?
বাসায় গিয়ে কি বলবো? মাত্র বিশ মিনিট দেরী হওয়ার কারনে ভাইবাটাই দিতে পারিনি। একটা ছোট স্বপ্ন আমাদের বাসাটাকে কাল কিভাবেইনা বদলে দিয়েছিল। অথচ আজ আমার মতো ব্যার্থ কে আছে।
ঠিক এমন সময় হঠাৎ একটা হ্যাচকা টান। কানের পর্দা ফাটানো হর্ন। কোন কিছু বোঝার আগেই সোহেল ছিটকে পড়লো ফুটপাথে। একটা লোক সোহেলকে গালি দিয়ে বলল চক্ষু কি মিয়া গোয়ার তলে ঢুকাইয়া হাঁটেন? মিয়া কানা। আমি যদি আপনেরে টান না দিতাম এতক্ষনে গাড়ির চাক্কার তলে থাকতেন।
বুকে ছেপ দেন। দোকানডায় বহেন। দোকানের ছেলেটা পানি দিয়ে বলল নেন পানি খান।
অনেকেই তাকিয়ে আছে সোহেলের দিকে। ছোট খাট একটা জটলার মতো। এক লোক বললো মাথা নিচা কইরা হাঁটলে গাড়ির তলেতো পরবোই। একজন বলল দোষ আমাগো আমাগো। আমরা আন্ধার মতো চলি তাই এক্সিডেন্ট হয়। আরেক লোক বলল বাস অলাগোও দোষ আছে। সিগনাল পার হইলে অরা বেহুশ হইয়া গাড়ি টানে।
সোহেল স্থানু হয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে। ওর মনে পড়ছে একদিন এক বুড়ি এক পিচ্চি মেয়েকে নিয়ে রাস্তা পার হতে নিয়েছিল। হঠাৎ এমন একটা বাস এসে বুড়িটাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। পুরো ঘটনাটা ঘটেছিল সোহেলের চোখের সামনে। বুড়ির মগজ ফেটে অনেকটা দুরে ছিটকে গিয়ে কাঁপছিল।
সেইরকম একটা অপ্রস্তুত মৃত্যু ওকে হালকা বাতাস দিয়ে গেল?
জীবন এত পলকা?
সোহেল লম্বা একটা শ্বাস নিল।
আস্তে আস্তে ওকে ঘিরে ভিড় পাতলা হয়ে এসেছে। সোহেল দোকানের ছেলেটিকে একটা সিগেরেট দিতে বলল। সিগেরেট ধরাতে গিয়ে লক্ষ্য করলো দুই হাতই কাঁপছে। দোকানদার ছেলেটা বলল মামা চা দেই একটা কাঁচা পাত্তি দিয়া। গরম গরম চুমুক দেন। ভাল লাগবোনে।
সোহেল চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আর সিগেরেটে টান দিয়ে চোখ বড় বড় করে চারপাশ দেখছে।
আকাশ চকচকে নীল।
এখনো গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া।
আইল্যান্ডের উপর একটা ভিক্ষুক মা তার কোলের বাচ্চাটিকে ফেলে দেওয়া পপকর্নের প্যাকেট থেকে পপকর্ন খাওয়াচ্ছে। জ্যামে আটকে পরা গাড়িতে একটা পিচ্চি মেয়ে বেলি ফুল বিক্রি করছে। মেয়েটির মুখ ভর্তি হাসি।
বাসের কন্ট্রাক্টর ড্রাইভারকে বলছে ওস্তাদ বায়ে প্লাস্টিক।
এক সার্ট প্যান্ট ইন করা লোক চন্দ্রিমার গাছের আড়ালে খুব তৃপ্তি নিয়ে হালকা হচ্ছে। এক পাগল দেয়ালে হেলান দিয়ে মাটিতে বসে আছে। ঠোটের কোনে ঘাঁ। নখ কালো কালো ময়লা। হলুদ দাত। একটা পলিথিনের থেকে তরকারি নিয়ে মাটিতে রাখা পাউরুটি দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। আবার ঝোলা থেকে বোতল বের করে পানিতে চুমুক দেয়।
সোহেল উঠে দাড়ায়। আবার হাঁটা শুরু করতে হবে। মিরপুর এখনো অর্ধেক পথ বাকী...

- অনি
আমি নারী
আমার গর্ভে জন্ম তোমার জন্ম সভ্যতারই
আমিই ধারক আমিই বাহক আমিই তোমার মাতা
আমার কাছেই শিখেছো কোথায় আকাশ স্বাধীনতা
আমিই তোমায় শেখাই ভাষা শেখাই কথা বলা
আমার হাতটি ধরেই তোমার প্রথম হাঁটা চলা
তোমার মুখের প্রথম আহার আমার বুকের স্তন্য
আমিই প্রথম বিদ্যা শেখাই বানাই তোমায় ধন্য
আমার কোলেই শুয়ে তোমার প্রথম স্বপ্ন দেখা
আমার কাছেই পূর্নিতা পাও যখন থাকো একা
তোমার যখন বয়েস বাড়ে শক্তি ফুরায় দেহে
আমিই তোমার সেবিকা হই কন্যাসম স্নেহে
আমিই তোমার হাতের লাঠি শেষ বয়েসের সেবা
আমার মতো করে তোমায় বুঝলো কবে কেবা
যখন তুমি যৌবনে যাও আমিই থাকি সংগে
তোমায় আমিই মানুষ বানাই শহস্র বিভংগে
আমিই তোমায় পিতা বানাই, বানাই বিশ্বনেতা
আমার প্রেমেই অমর তুমি স্মরণ রাখে কে তা
তোমার যত দোষ-ত্রুটি আর সকল অক্ষমতা
আমিই রাখি আড়াল করে দেখাই পতিব্রতা
আমার আমি বিলিন করি তোমায় গড়ার ত্যাগে
তোমার স্বপ্ন সফল করি আমার রাত্রি জেগে
সেই আমাকে বাঁধো তুমি পুরুষ তুমি অন্ধ?
আমায় কেন আটকে রেখে দুয়ার কর বন্ধ?
আমায় কেন মারো পিটাও কাপড়ে রাখ ঢেকে?
কি দিতে চাও আমায় তুমি রান্না ঘরে রেখে?
মাঠে, ঘাটে, বন-বাদাড়ে, পাহাড়, সাগর, মরু
তোমার করে বানাও আমায় গৃহস্থালি গরু?
স্বর্গ নরক লোভ দেখিয়ে ধম্ম শাস্রের ভয়?
যে আকাশে বেড়াও ঘুরে সে কি আমার নয়?
আমার জন্য স্বামীর চরন তোমার জন্য হুর?
আমার জন্য চিনির পিপড়া তোমার লাভের গুড়?
শোন পুরুষ ধম্ম কম্ম আল্লাহ খোদার ভয়?
৪:১ কখনো সমান বিচার নয়
আমি নারী মানি বলেই তোমার এত বাড়
তুমিও পুরুষ কাইট্টা যাইবা দেখাই যদি ধার
আমার ত্যাগের ভালবাসার বিচার করার মন
হবেনা তোমার স্বর্গের লোভ থাকবে যতক্ষন
তোমায় ছাড়া চলতে পারি ভুলেছো সত্য যুগ?
শিকার করেছি যুদ্ধ করেছি হারিনিতো এতটুক
একই গর্ভে জন্ম নিয়া কেমনে কর গো ভিন্ন?
তোমার আমার রক্তে যখন একই মায়ের চিহ্ন?
তোমার সকল দুক্ষ ব্যাথা আমিই ঘোচাতে পারি
মনে রেখো শুধু আমিই তোমার জন্মদাত্রী নারী।

                                           - অনি
                                          ১৪/০৬/১৫
                                          বিকেল - ৪:৩৫
* আমি এখন পর্যন্ত কাউকে কোন কবিতা উৎসর্গ করিনি। সেই হিসেবে এটা আমার প্রথম উৎসর্গ।
আমার খুব প্রিয় পাঠিকা বন্ধু দেবশ্রী।
আমি চাই ওর জীবন ওর অন্তরের মতো সুন্দর হোক।

সে শোনে তাই পাখি পাখি গায়
সে বনে বনে ছায়া ছায়া
সে পাহাড়ে অরন্যে ময়ুর
সে নির্ঝরে কাকন কেয়ুর
সে মেঘলামতির মায়া
সে দেখে তাই
সে আকাশে স্বপ্ন উড়াই
সে আকাশে বানাই ঘর
সে জোছনা পুকুরে চাঁদ
সে মেটায় দেখার সাধ
সে পুলকিত অনন্ত অম্বর
সে ভাবে তাই
সে বিশ্বে আনন্দপাই
সে শুভবোধ রুপ রুপসী
সে ক্ষুদ্রে মহান হয়
সে পরমানু অনুতে রয়
সে বিন্দুতে অসীমে থাকে বসি
সে তার ব্যাথার পরে
সে মনের কৃষ্ণ- গহব্বরে
সে শুষিয়া লয় সে বিশ্ব
সে ঐ জগত তারে
সে মেয়ে বলে বারেবারে
সে নিজেরে বিলিয়ে হয় নিঃস্ব
সে বানী আর সুরে
সে রয়ে যেতো দুরে
সে যদি তার না হতো কান
সে গায় তাই কথারা
সে প্রানের ভিতর দোতরা
সে গায় তাই হয় গান।

সে কবিতার শ্লোক কাব্য তার ভাষায়
সে কাব্য নীড়ের মতো কাব্যকে ভালবাসায়
সে কাঁদে তাই কাঁদে রাধা শ্যাম গোকুলের বন
সে হাসে তাই হাসে জীবন্ত শিশুর ভূবন
সে ছোবে তাই ফুল পাতা ঘাস গংগাফরিং
সে যাবে তাই কোলকাতা শিলিগুড়ি দার্জিলিং
সে চলে তাই তিস্তা চলে আপন বেগে
সে শ্রীমন্ত দেবশ্রী তার নামে আছে লেগে।

- অনি।
১৩/০৬/১৫
রাত- ৯:৩৯
সে দাড়িয়েছিল ঐ বাড়িটির আংগিনায়
এক পুরানো দেয়ালের পাশে
সিদ্ধার্থের জোছনায়।

তার ছায়া পরেছিল উঠোনে ভীষন চাঁদের আলোয়
পিছনে সাদা বাড়ি অন্ধকার ভৌতিক
শব্দ শুনি তবু সে বাতাসের শব্দ নয়।

এত নির্জন এত নির্জন ঐ রাত
ঝিঝি পোকাও নিশ্বাস বন্ধ করে আছে
স্তব্ধ মন্দিরে নিস্তব্ধ নিশানাথ। 


বাতাস নেই তবু হাওয়া লাগে গায়
যে দেখে-
কিছু ধুলো তার পায়ের কাছে ঘোরে পায়ে পায়
নিঃশব্দ ঢেউয়ের মতো জোছনা তার ছায়া দুলিয়ে যায়
আশ্চর্য স্তব্ধ তবু সে একা -
দাড়িয়ে আছে এ কেমন পূর্নিমায়? 


এইখানে বাড়ি কই? 

এতো এক ভৌতিক প্রাসাদের কোন,
নিষিদ্ধ প্রাংগন নিষিদ্ধ চাতালে অন্যভূবনের নিষিদ্ধ সম্মোহন।


সে দাড়িয়ে আছে অনড় সাদা বিভার মতো
সেখানে বাদুরের ডানায় নির্জনতার ক্ষত
তার ছায়া কাজলের মতো কালো
সে উপরে দিকে চেয়ে..
যেটুকু দেখি তার বেশি না দেখা ভালো।


সে কোনও মানুষ নয় সে কেমন যেনো এক আলো...
জমাট অন্ধকার চারপাশে শুধু উঠানে চাঁদের আলো
সে সফেদ ভৌতিক তবু তার ছায়া ঘন কালো
পেছনে সে রাজবাড়ি পরিত্যাক্ত ভাংগা সাদা
এইখানে কে যেনো দাড়িয়ে থাকে
সিদ্ধার্থের রাতে,
সবাই শুনেছে সেই গল্প যে দেখে তার কাছে ধাঁধা..


- অনি
রাত - ৯:১৪
১১/০৬/১৫
কবি তুমি আর এসোনা ফিরে এই বাংলার তীরে..
তুমি থাকো তোমার প্রানের দেবতার সাথে সুচেতনার দ্বীপে। আমরা এই বাংলাকে মাদ্রাসার জন্য তৈরি করছি। তুমি এসব বুঝবে না।
মধুকুপি ঘাস নেই অবিরল এই সবুজ করুন ডাংগায়।
শেয়াল শকুনের উচ্ছিষ্ট আর বিষ্টা ভরা এই ধানসিঁড়িটির তীর।
যে আঁধারের কথা তুমি বলে গিয়েছিলে আজ আমরা সবাই সেই আঁধারের সন্তান।


অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই - প্রীতি নেই - করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব'লে মনে হয়
মহত্‍‌ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।
- জীবনান্দ দাশ
আমার ইচ্ছে করে ভাবের খোলস থেকে বেরিয়ে এসে
একটি গদগদ প্রেম করতে তোমার সাথে
সবার চোখে সস্তা একটি প্রেম
যেখান সকাল বিকাল তোমাকে ভালবাসি না বললে
তুমি ঠোট ফোলাও গাল ফোলাও
আমার ইচ্ছে করে হাতের সব কাজটাজ ফেলে
সারাদিন তোমার সাথে কথা বলি।
খাওয়া ঘুম বাদ দিয়ে সারাদিন খালি কথা।
তোমার কথার থাকবে না কোন সুত্রপাত
আমার কথার থাকবে না মাথামুণ্ড।
আমার ইচ্ছে করে তোমার মাথার উকুন বেছে দিতে
যদিও তোমার শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার চুলে সে নেই
তবু তোমাকে আদর করার উছিলা।
আমার ইচ্ছা করে তোমার আংগুল ফুটায়ে দেই
শুধু হাতের না পায়েরও।
আমার ইচ্ছে করে বিজয় স্বরনীর মোড় থেকে
তোমার জন্য এক জোড়া বেলি ফুলের মালা কিনি।
ইচ্ছে করে ইডেনের সামনের ফুটপাথে বসে সিংগারা খাই।
আমার ইচ্ছে করে সেন্টজোন্সের পাশে বিশ টাকা প্লেট চটপটি খাই
যেই চটপটিতে খুব ঝাল উপরে লাল সবুজ বোম্বাই মরিচ।
আমার তোমাকে নিয়ে ঘন্টা চুক্তি রিক্সায় ঘুরতে ইচ্ছা করে
আমি আয়েস করে সিগেরেট টানবো
আর তুমি বলবা একটা টান দেই।
হঠাৎ বৃষ্টি নামবে
আমরা আনন্দে তারাহুরো করে হুড উঠায়ে দিব
বাকীটা তোমার ইচ্ছা।
আমার ইচ্ছা করে তোমাকে নিয়ে একদিন রাত জাগি
সারারাত হাটি, রাতের ঢাকায়।
সাতরাস্তায় গিয়ে পরটা আর ডিম ভাজি খাওয়াই।
একদিন সারারাত ফোনে কথা বলতে ইচ্ছা হয় খুব।
ফোনের টাকা ফুরাবে না চার্জ শেষ হবে না ব্যাটারির।
আমার তোমাকে গাউছিয়া থেকে স্যান্ডেল কিনে দিতে ইচ্ছে করে
কিংবা একটা ব্যাগ।
গাউছিয়ায় মাত্র দেড়শ টাকায় কি সুন্দর সুন্দর স্যান্ডেল পাওয়া যায়!
আর ব্যাগগুলাও ফাইন, অনেক ফাইন।
ইচ্ছা করে তোমাকে নিয়ে নীলক্ষেতে যাই
কোন সস্তা লেখকের একটা সস্তা প্রেমের বই কিনে দেই
আমার ইচ্ছা করে তোমাকে নিয়ে একদিন যমুনা ফিউচার পার্ক যাবো
না কিছু কিনবো না জাস্ট ঘুরতে
যায়তো অনেকেই
অনেক বড় নাকি!
দারুন সব ব্যাপার সেপার।
আমার তোমার হাত ধরে রাখতে ইচ্ছে করে
মাঝে মাঝে জড়িয়েও ধরতে ইচ্ছে করে
আসলে সবসময় জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে
মাঝে মাঝে হাত ধরতে।
আমার তোমাকে শুধু চুম্মা দিতে ইচ্ছে করে
ঐ যে ইংরেজি ছবিতে যেমন দেখায়
ঐ যে টাইটানিকের মতো
বোঝেনা।
তুমি ঐ নায়িকাটার চেয়েও সুন্দর
এই কথাটা খুব বলতে ইচ্ছে করে।
আমার তোমাকে নিয়ে আরো অনেক অনেক ইচ্ছে আছে
যদিও আমার সামর্থ খুবি কম।
আমার খুব সাধারন একজন প্রেমিক হতে ইচ্ছা করে
যে জানে না কাকে বলে রোমান্টিসিজম।


- অনি
রচনা কাল
(গুলিস্তান থেকে মিরপুর শিকড় বাসে)
রাত- ৮:০৮
০৯/০৬/১৫