আমি খুব সাধারন একটা ছেলের গল্প বলবো। ছেলেটির নামটিও বেশ সাধারন 'সোহেল'। বন্ধুরা যাকে মজা করে বলে সোহেল - গো টু হেল...
একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির রিসিপশান। ভাবসাবই আলাদা। রেড আর হোয়াইটের অদ্ভুদ কম্বিনেশন পুরো রুমে। মিউট করে ওয়ালে টিভি চলছে। ফ্যাশান সো হচ্ছে। কিছু উন্মাদ মনে হয় মডেল। যেমন খুশি তেমন সাজোর ফ্যাশান সোতে প্রায় সবকটি মডেলই মনে হয় মৃত মানুষ সেজেছে। এই ঘরটিতে লাইটিং সোর্সও ইনভিজিবল। এক কোনায় শ্বাশত বাংলার বাশঝার। আমাদের গ্রামের গোয়াল ঘর আর পায়খানার পিছনের বাঁশঝার কোনদিন কি ভেবেছিল কি পরিমান ইজ্জত তার জন্যে সামনে অপেক্ষা করছে? যাইহোক, রিসিপশান টেবিলের পাশে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার জারে রংবেরঙ এর নাম না জানা চকলেট রাখা। গেস্ট রিফ্রেশমেন্ট। সবাই কাজ করছে অথচ কোথাও শব্দ নাই। সাউন্ড ওয়েভ টোটালি কন্ট্রোলড। টেবিলের ঐ পাশে যে মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে যদিও তাকে এই অফিসের সাথে মোটেই মানাচ্ছে না। মেয়েটিকে মহিলা হোস্টেলের সুপারেন্টেন্ডের মতো লাগছে। এদেরকে দেখে অবশ্য কিছু বোঝাও মুশকিল। এরা পাশের কলিগের সাথে তুই তোকারি করে মোস্তফা সরোয়ার ফারুকির নাটকের চরিত্রের মতো করে কথা বলে। শুধু যখনি কোন লোক তাদের কাছে আসে তখন তাদের প্রফেশনাল রুপ বেড়িয়ে আসে। চোস্ত ইংরেজিতে কথা শুরু করে। এদের ইংরেজি শুনলে মনে হয় এরা জন্মসুত্রে বাংগালি কিন্তু বড় হয়েছে বিদেশে। এই অফিসের রিসিপসনিস্ট মেয়েটির নাম রেবেকা। সে সবাইকে বলে রেবা।
রেবা বেশ বিরক্ত। যদিও সে তার চেহারায় একটা ডিপ্লোম্যাটিক ভাব বজায় রাখতে চেষ্টা করছে। রেবার বিরক্তির কারন হচ্ছে তার সামনে বসে থাকা দশ বারোজন ভিজিটর।
আজ এই অফিসে ভাইবার একটি সিডিউল আছে। এই লোকগুলো সম্ভবত সে জন্যই এসেছে। কিন্তু লোকগুলোর নুন্যতম কমনসেন্স নেই। এরা প্রায় সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। একটা মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকা যে মেয়েটির জন্য কতটুকু এম্বারর্সিং এই বোধটুকুও কি এদের নেই। এরা চাকরী করবে কিভাবে?
রেবার বিরক্তি বাড়ছেই। রেবা ঘড়ি দেখলো। ভাইভা টাইম শুরু হয়ে গেছে। অথচ ফার্স্ট ক্যান্ডিডেট এখনো আসেনি। এই অফিসের পাংচুয়ালিটির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স। রেবা নেক্সট ক্যান্ডিডেট কে ভিতরে যেতে বলল।
এর ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই সোহেল ঢুকলো অফিসে। ওর আজ এখানে ইন্টারভিউ। সোহেল ঢুকেই একটু ভেবাচেকা খেয়ে গেল। জটিল অফিস আর অফিসের ভাবসাব। রেবাও লক্ষ্য করলো একটা ছেলে ঢুকেছে। গায়ের রং কালো। চুলগুলি কোকড়া আর এলোমেলো। ঢোলা প্যান্টের সাথে বেমানান টাইট সার্ট পরেছে। হাস্যকর লাগছে দেখতে। ঢোলা প্যান্টের সাথে পরেছে কনভার্স তাও আবার সবুজ রংবেরঙ।
রেবা মনে মনে ভাবলো এই টাইপ লোকজন কিভাবে এইসব অফিসে ইন্টারভিউ দিতে আসে। এদের উচিত থানা অথবা ইউনিয়ন পর্যায় টিকাদান কর্মসূচিতে কাজ করা।
সোহেল রিসিপশানের দিকে এগিয়ে এল।
চোখেমুখে অস্বস্তির ছাপ নিয়ে বলল - এক্সকিউজ মি = আমি সোহেল আমার একটা এপয়েন্টমেন্ট ছিল ভাইবার।
= রেবা বলল কয়টায়?
= সোহেল বলল ১০ টায়
= রেবা বলল এখন কটা বাজে?
= সোহেল লাজুক একটা হাসি দিয়ে ঘড়ি দেখে বলল সাড়ে দশটা।
= রেবা এবার চোস্ত ইংরেজিতে যা বলল তার বাংলা করলে দাড়ায়- আমরা দুক্ষিত। আপনাকে চলে যেতে হবে। আপনি আপনার এপয়েন্টমেন্টটি মিস করেছেন।
= সোহেলের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মনে হল শালি ফাপর মারতাসে। ভাব আরকি। চেহারাটা শাঁকচুন্নির মতো। দামী একটা অফিসের চাকরী কইরা দাম দেখাইতাসে। হেরে একটু তেলাইতে হইবো। সোহেল চেহারাটাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে মুখটা হাসি হাসি করে বলল - ম্যাম, আমি আসলে আগেই রওনা হয়েছিলাম। ঢাকা শহরের জ্যামের অবস্থা জানেনিইতো। মিরপুর থেকে গুলশান বাস পাওয়াও সমস্যা। আপনি একটু এক্সকিউজ করে দেন।
সোহেল মনে মনে ভাবলো কাজ হবে। যতকিছুই হোক বিশ ত্রিশ মিনিটের জন্যেতো আর বাদ দিয়ে দিবে না। আর কাল রাতে ও ঘুমায়নি। ও দেখেছে যে রাতে ও সারারাত জেগে পরেরদিন কোনও কাজে যায় সেটা ওর হয়।
= রেবা সম্পুর্ন ভাবলেশহীন নিরুত্তাপ গলায় বলল- আমাদের কোম্পানি পাংচুয়ালিটিকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেয়। কোন লেম এক্সকিউজ এক্সেপ্ট করেনা। আপনাকে গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে ভিজিটর কার্ড প্রভাইড করা হয়েছে। আপনি সে কার্ড পাঞ্চ করে ইন করেছেন সিসি ক্যামেরা এই রিসিপশানকে কাভার করছে। আপনার রেকর্ড অলরেডি কপিড। বেটার লাক নেক্সট টাইম।
সোহেলের কাছে মনে হল একে আর ঘাটিয়ে কোন লাভ হবেনা। আফসোস এই কথাগুলো নিরিবিলি শুনতে পাইলাম না। এতগুলি লোকের সামনে শুনতে হইল। এইখান থেকে হাঁইটা যাওয়াটাও লজ্জা। একটা সুন্দর মেয়ের থেকে এগুলি শুনলেও নাহয় চলতো। বসাইছে একটা পেত্নি। আর এতগুলি মানুষ একটা শালাও কিছু কইলো না। সোহেল নিজেকে সামলিয়ে বিদায় নিতে কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু ততক্ষনে রেবা ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। এতগুলো লোক এখন সোহেলের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা প্রচন্ড লজ্জার। সোহেল কোনমতে মাথাটা নীচু করে লিফটের কাছে চলে এলো।
লিফট সেকেন্ড ফ্লোর ইন্ডিকেট করছে। সোহেল আছে 18 th ফ্লোরে।
গতকাল যখন সোহেলের কাছে এই অফিস থেকে ফোনটা আসে ( এই শালিই মনে হয় করেছিল) যে আগামীকাল ওর ভাইবা। সোহেলের কাছে কেন যেন মনে হয়েছিল চাকরীটাই হয়ে গেছে। কারন সিভিতে ওর এক্সপেরিয়েন্স ছিল পর্যাপ্ত। আর সবচেয়ে লোভনীয় ছিক সেলারি। ওরা সেলারি উল্লেখ করেছিল ১২০০ ডলার। সোহেল বর্তমানে যে অফিসে চাকরী করে সেখান থেকে ও বাসে বাসায় ফেরে। অথচ যেদিন ও ভাইবার জন্য ফোন পেলো সেদিন ও রিক্সায় ফিরেছিল। মনে মনে ভেবেছিল করিনা কিছু এক্সট্রা খরচ। সবঠিক হয়ে যাবে। এইতো শুরু। চাকরিটা পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। স্ট্রাগলের দিন শেষ। এবার একজোড়া ভাল জুতা কিনতে হবে। যে জুতাটা পরে ও অফিস করে ওটার অবস্থা লোকার বাসের সীটের চেয়েও খারাপ। এবার আর জুতা কেনার প্ল্যান করে একবছর বসে থাকতে হবে না।
টুং করে একটা শব্দে সোহেলের সংবিৎ ফিরে এল। লিফটের দরজাটা খুলছে। দুজন মধ্যে বয়স্কলোক একটি মেয়ে আর দু'জন ফরেনার বের হলো। একজন বিদেশী বুড়া আবার হেলোও বলল। সোহেল কি উত্তর দিবে বুঝতে বুঝতেই তারা চলে গেল। আহ কি চমৎকার পারফিউম এর গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে গেল। বিদেশিটা যখন সোহেলকে হেলো বলছিলো সোহেলের ইচ্ছা করছিলো জুতা খুলে জুতার উপর বসে পরে। যাতে ওর জুতাটি দেখতে না পায়। লিফটের ভিতরে ঢুকে সোহেল G বাটনটাতে চাপ দিয়ে দাড়িয়ে রইল। একেবারে একা ও লিফটে।
আজকে যখন এই বিল্ডিংটার সামনে এসে দাড়ায় তখন ওর মনে হচ্ছিল আরে খাইসে কি জিনিস বানাইসে! জটিল! চরম! গজব! ব্লু কালারের গ্লাস দিয়ে পুরা বাইশতলা ঢেকে দিছে।
এই এলাকাতেই ওর এক চাচাতো ভাইয়ের অফিস। এক বিদেশি ব্যাংকের ম্যানেজার। এই ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ নাই। এবার এখানে চাকরী হলে যোগাযোগটা শুরু করতে হবে। মাঝে মাঝে লাঞ্চটাইমে ওনার অফিসে ঢুকে বলবো - আচ্ছা আপনাদের এখানে ভাল লাঞ্চ কি কি পাওয়া যায়। আজ আমি লাঞ্চ করাবো। এই ভাইটার অনেক ভাব। বড় চাকরী করে দেখে সোহেলদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনা। তবে এইবার পাত্তা না দিয়ে যাবে কই চান্দু? যখন দেখবে সোহেল নিজেও গুলশানে চাকরি করে আর অনেক টাকা বেতনও পায়। সোহেল একবার ভেবেছিল তার ভাইটাকে ফোন দিয়ে এই অফিসের এড্রেসটা জেনে নেয়। পরে আবার মনে হল থাক। যদি চাকরীটা না হয় তখন। তারচেয়ে বরং চাকরীটা হয়ে গেলে একেবারে একটা গজব ড্রেসাপ করে ওর অফিসে গিয়ে বলতে হবে তুমি এইখানে আছো? ভালই হলো। আমার অফিসও এখানেই পাশেই। ভালই হলো। তুমি যেহেতু ব্যাংকে আছো কোন হেল্প লাগলে বলো। এই নাও আমার বিজনেস কার্ড। শালার কিচ্ছু হইলো না।
লিফট থেকে নেমে সোহেল ভিজটিং কার্ডটি জমা দিয়ে রাস্তায় বের হয়ে এল। এখন প্রায় এগারোটা বাজে। গুলশান এলাকায় প্রচন্ড ট্রাফিক। মে মাস। প্রচন্ড গরম। রাস্তায় গাড়িগুলো সব জ্যামে আটকে আছে। গগনচুম্বী সব অট্টালিকা। ঢাকা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে প্রচন্ড সম্ভবনাময় একটি শহর। আর গুলশান এলাকাটি এই শহরের সবচেয়ে বিত্তবানদের এলাকা। ঢাকার মধ্যবিত্ত যারা এ অঞ্চলে চলাফেরা করে বা কাজে আসে তাদের ভিতর একই সংগে আশা ও হীনমন্যতাবোধ কাজ করে। এখানে কোটি কোটি টাকা মুল্যের গাড়ি গাম্ভির্য নিয়ে চলা ফেরা করে। বিলিয়ন বিলিয়ন টাকার কর্পোরেট ব্যাবসার অফিস এখানে। এই এলাকাতেই ডিপ্লোম্যাটিক জোন। এখানে যারা সফল তাদের মধ্যে রংপুরের একটা প্রবাদ বাক্যের প্রতিফলন দেখা যায়- ' মুই কি হনু রে'। যেসব ধনী ব্যাক্তি এখানে রেসিডেন্স হতে চান সেটা কেবল একোমডেশনের জন্যই নয় সেটা আভিজাত্যর জন্যও।
এহেন গুলশান এলাকায় সোহেলের পকেটে আছে শুধু ফিরে যাবার বাস ভাড়া। সোহেল ঢাকার ছেলে হলেও গুলশানে এসে হকচকিয়ে গেছে। সোহেলের কাছে মনে হচ্ছে একটু আগে ওর একটা অপারেশন হয়েছে। স্বপ্ন অপারেশন। একটি চাকরী পাওয়ার স্বপ্ন খারাপ টিউমারের মতো ননম্যালিগ্ল্যান্ট গ্রোথ হয়েছিল। যেটা একটু আগে অপারেশন করে ফেলে দেয়া হয়েছে। তাই যেন শরীরটা দুর্বল। মাথা ঝিমঝিম করছে। মাথা ঝিমঝিম করার অবশ্য আরেকটা কারন আছে। সেটা হচ্ছে সকালে নাস্তা না করা। যদিও ওর মা নাস্তা খাবার জন্য অনেক পিড়াপিড়ি করেছেন। কিন্তু ভাইবা দিতে যাবার উত্তেজনায় খাবার গলা দিয়ে নামতো না। সোহেল তাই নাস্তা না খেয়েই রওনা দেয়।
এই টাইমটায় লোকাল বাসের মধ্যে যে ভীড়! এখানে ওঠা আর আত্মহত্যা করা একই ব্যাপার। এছাড়া প্রচন্ড সিগেরেট খেতে ইচ্ছে করছে। সিগেরট কিনলে আর ফিরে যাবার বাস ভাড়া থাকবে না। আর বাসে গেলে সিগেরট খাওয়া হবে না। এমন দোটানার মধ্যে সোহেলের চোখ পরলো এই এলাকার মেয়েদের দিকে। সবাই যেনো টিভি সিরিয়ালের মেয়েদের মতো। হয় শপিংএ যাচ্ছে আর নয়তো আসছে। এরা কেউ কেউ এত সুন্দর যে সোহেলের কাছে মনে হল বাস্তবে না এদের টিভিতে দেখাচ্ছে। আহা এরা না জানি কত সুখে আছে। এদের মধ্যে একটা মেয়েকে দেখে সোহেলের ভাইবা দিতে না পারার কষ্ট কমে গেল। মেয়েটিকে দেখে সোহেলের মনে হল এদেরকে এতদিন শুধু ম্যাগাজিনেই দেখেছি। এরা সামনা সামনি তাহলে এত সুন্দর হয়!!! এত সুন্দর একটা মেয়েকে সামনা সামনি দেখে সোহেল মনে মনে কবিতা মনে করার চেষ্টা করতে চাইলো। কিন্তু আশ্চর্য! একটা কবিতাও মনে আসছে না। শুধু অদ্ভুত ভাবে মমতাজের ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায় এই লাইনটাই ঘুরঘুর করছে। অথচ অসময়ে কত অপুর্ব লাইন মাথায় আসে।
সোহেল সিদ্ধান্ত নিল সে হেঁটে বাসায় ফিরবে।
এতে আরাম করে সিগেরেট টানতে টানতে যাওয়া যাবে। পথের মধ্যে একবার চা সিগেরেটের ব্রেক। তারপর আবার হাঁটা। চাকরী না হওয়ার কষ্ট, মেয়েটিকে দেখার পর উদাস উদাস ভাব সব মিলিয়ে সোহেল হাঁটাই ঠিক করলো। পাশের এক সিডির দোকান থেকে ভেসে আসছে -
যো ওয়াদা কিয়া ও নিভানা পারেগা,
রোকে জামানা চাহে রোকে খুদাই
তুমকো আনা পারেগা...
সোহেল এই গানটা গুনগুন করতে করতে হাঁটা দিল।
এই গানের কথার সাথে যদিও সোহেলের বর্তমান বাস্তবতার কোন যোগ নেই। তবুও সোহেলের মনে হচ্ছে - একেবারে আমার নিজের কথা।
যো ওয়াদা কিয়া ও নিভানা পারেগা..
যে কথা তুমি দিয়েছো সেটা তোমাকে রাখতে হবে...
সোহেলের গানের গলা সুন্দর। সে গুনগুন করতে করতে যাচ্ছে। দুর থেকে এখনও কানে ভেসে আসছে -
রোকে জামানা চাহে রোকে খুদাই তুমকো আনা পারেগা...
সোহেলদের বাসা মিরপুরে।
অনেক ভিতরের দিকে।
বহু অলিগলি পাড় হয়ে যেতে হয়।
একটি টিনশেড বাসায় থাকে ওরা।
সাথে কয়েকটি কমন ফ্যামেলি।
সবার জন্যে কমন বাথরুম কমন রান্নাঘর।
সোহেলের বাবা নেই। বছর চারেক আগে হার্ট এটাকে মারা গেছেন।
সোহেলের ছোট বোন আর সোহেলের মাকে নিয়ে সোহেল থাকে একরুমের বাসায়।
ভাড়া তিন হাজার টাকা। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সব এর মধ্যে। সস্তা।
রাতে সোহেল মেঝেতে ঘুমায়।
ওর মা আর বোন ঘুমায় খাটে।
ঝামেলা লেগে যায় যখন কেউ থাকতে আসে। সোহেলের তখন কোননা কোন বন্ধুর বাসায় থাকতে যেতে হয়।
সোহেলের অবশ্য ভালোও লাগে।
সোহেল বর্তমানে যে অফিসে চাকরী করছে সেখানে ওর চার বছর হয়ে এলো।
ওর বাবা মারা যাওয়ার পর পরই ঢুকেছিল।
শুরুতে বেতন ছিল ২০০০ টাকা। এখন ছয় হাজার পাঁচশ টাকা পায়। এই বেতন দিয়ে ওর বাসা ভাড়া খাওয়া দাওয়া চালাতে হয়। ওর ছোট বোনটা অবশ্য টিউশনি করে। এই বাসার বিভিন্ন ঘরের পিচ্চিদেরকে পড়ায়। এই দুইহাজার পনের সালে মাত্র একশ টাকা জন প্রতি। তাও সব মিলিয়ে শ'পাঁচেক টাকা আসে। এই টাকাটাও ওদের সংসারে কাজে লাগে। যদিও সোহেল এই টাকাতেও মাঝে মাঝে ভাগ বসায়। খুবই লজ্জিত ভংগিতে ওর বোনকে বলে - আমাকে ২০ টা টাকা দেয়া যায় রে? আজ অফিসে যাওয়ারও ভাড়া নাই।
সোহেলের মা কিভাবে সংসার চালান সেটা উনিই জানেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের মায়েদের অনেক রকম ম্যাজিক জানতে হয়।
অবর্ণনীয় অভাবের মধ্যেও তিনি তার ছেলেকে মেয়েকে আগলে রাখেন। ওদেরকে বুঝতে দেননা।
প্রায় প্রতিদিনকার খাবারের মেনু দেখে যখন তার ছেলে মেয়ে প্যানাপ্যানি করে- তিনি হতাশ চোখে শুধু তাকিয়ে থাকেন।
কাল যখন সোহেল ওনাকে সোহেলের ভাইবার খবর দেয় তখন তিনি সংগে সংগে পাশের ঘরের এক মহিলার কাছ থেকে দেড়শ টাকা ধার করে আধা কেজি গরুর মাংস কিনে আনান। ছেলে মেয়ে দুইটাই গরুর মাংস বলতে অজ্ঞান। দুই পিস মাংস দিয়ে দুই থাল ভাত খেয়ে ফেলতে পারে। হাঢ় চুশে চুশে একেবারে ফকফকা করে ফেলে। ওদের মা মজা করে বলে- আরে পিপড়ার জন্যে কিছু রাখ।
তিনি এই আধাকেজি মাংস ছোট ছোট টুকরো করে তাহারি রান্না করেছিলেন। আহা খাক একটু ভালমন্দ। কাল ছেলেটির ভাইবা। যদি ভাল কিছু হয়?
এই ভেবে তিনি সার্ট প্যান্ট ইস্ত্রি করে এনেছেন।
টাকা দিতে পারেননি। বলেছেন সামনের মাসে দিবেন। ছেলেটার একটাও ভাল সার্ট প্যান্ট নেই। এক বন্ধুর কাছে থেকে এনেছে সার্ট আরেকজনের থেকে এনেছে প্যান্ট। সার্টটা হয়েছে টাইট আর সার্টের তুলনায় প্যান্টা হয়েছে বেমানান ঢোলা। এই সার্ট প্যান্ট পরেই ছেলেটা অনেক ক্ষন আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেছে। ছোট বোনটা অবশ্য বলেছিল- ভাইয়া তোর এক জোড়া নতুন জুতা হলে বেশ হতো।
সোহেল বলল - জুতা পেলাম না। কারো পায়ের মাপে পা মেলেনা। শোন, আমার জুতোটা পুরানো কিন্তু বিদেশি জিনিস। আর ফরেন অফিসে যাচ্ছি। বিদেশি জুতোর মুল্য ওরাই বুঝবে। সোহেলের জুতাটা আসলেই বাইরের। ওর এক বন্ধু বছর তিনেক আগে দেশে এসেছিল। আবার চলে যাওয়ার আগে সোহেলকে দিয়ে গেছে। সেই জুতার রং টং উঠে একাকার অবস্থা। যদিও ছেড়েনি এখনো। শুধু ছাল বাকড়া উঠে গেছে।
হঠাৎ পিছনে গাড়ির হর্নে সোহেল ঘুরে তাকালো। গাড়িতে ওর এক বন্ধু তানভির। তানভির মাথা বের করে বলল - সোহেল গো টু হেল। where are you going bro? তানভিরের কথায় গাড়ির ভিতরে মেয়েদের হাসির আওয়াজ শোনা গেল। সোহেল বুঝতে পারলো না এই কথায় হাসির কি আছে।
সোহেল মিনমিন করে বলল এখানে একটা কাজে এসেছিলাম।
তানভির ভেতরের দিকে তাকিয়ে বলল দেখছো?
আমি বলছিলাম না? আমার ফ্রেন্ড যায়। সে বিড়াট কাজের মানুষ। গুলশান এলাকার উন্নয়ন এখন সোহেলের হাতে। তুই কই গেছিলি ইউ এস এম্বাসেডর এর সাথে দেখা করতে? কিরে দোস্ত জবাব দে? তোকে দারুন লাগছে রে। আবার মেয়েদের হাসির শব্দ। তানভিরের ততক্ষনে ফ্লো এসে গেছে। দোস্ত তোকে তোকে রাজকাপুরের মতো লাগছে। ঐ যে মেরা জুতা হ্যায় জাপানি ইয়ে পাতলুন ইংলিশতানি ওমন। তুই এই রাজকাপুর সেজে এম্বেসিতে গেলি?
সোহেল মিনমিন করে কি বলল ভালো বোঝা গেল না।
তানভির ওর গাড়িতে বসা মেয়েদের কে বলল এই তোমরা যাকে দেখছো সে কিন্তু গুনধর ছেলে। প্রচুড় পড়ুয়া। আবার নাকি সুরে রবীন্দ্র সংগীতও গায়।
এই কথা শুনে এক মেয়ে নাকি সুরে বলল - রাঁজঁকাঁপুঁরঁ ভাঁইঁয়াঁ একটি রবীন্দ্রসংগীত শুনান না। আবার হাসাহাসির ধুম পরে গেল।
সোহেল বুঝতে পারলো কোন এক বিচিত্র কারনে এই মেয়েগুলো ওকে নিয়ে মজা করছে। সোহেলের খুব অস্বস্তি হচ্ছে। যেতেও পারছেনা। আবার এসব নিতেও পারছে না।
তানভির বলল- এই গাড়িতে ওঠ। আমরা পিৎজ্জা খেতে যাচ্ছি। চল ওঠ।
সোহেল বুঝতে পারলো ওকে পিজা খাওয়ানোটা মুল উদ্দেশ্য না। ওকে ওরা এন্টারটেইনিং এলিমেন্ট হিসেবে নিতে চাচ্ছে।
সোহেল বলল নারে। আজ না। তোরা যা। আমার মহাখালি একটা কাজ আছে।
তানভির বলল চলনা। তুই মহাখালি না গেলে কি রাশিয়া আমেরিকার সাথে সন্ধি করবেনা?
মেয়েরা আবার হাসি শুরু করলো। মেয়েরা একবার কিছুতে হাসি শুরু করলে হাসতেই থাকে।
পিছনে দুইটা গাড়ি হর্ন দিচ্ছে তানভিড় গাড়িটা একটু সামনে বাড়াতেই সোহেল চট করে হেঁটে সামনের এক গলিতে ঢুকে গেল। গলির মোড়ে একটা ভ্যানের উপরে তেলাপোকা মারার ঔষধ বিক্রি করছে। এক লোক মাইক দিয়ে বলছে - 'তেলাপোকা মুক্ত সমাজ চাই'.... 'তেলাপোকা মুক্ত সমাজ চাই'....
সোহেল কিছুক্ষন গলিতে দাড়িয়ে শ্লোগান শুনলো। তারপর উকি দিয়ে দেখে যে না গাড়িটা চলে গেছে।
সোহেল এবার হাঁটা ধরল। একবার ভাবলো ক্যান্টনমেন্ট এর রাস্তাটা ধরবে পর মুহুর্তেই মত পাল্টালো। মন যে পরিমান খারাপ। নিজেকে কষ্ট দিতে ইচ্ছে করছে। বিজয় স্বরনীর রাস্তা দিয়ে ঘুরে যাবে। শুধু মধ্যে একটা চা সিগেরেটের ব্রেক নেবে। থামবে। তারপর আবার বাকী পথটুকু হাটবে।
হাঁটতে হাঁটতে সোহেলের ঘুরে ফিরে কালকের দিনটাকেই মনে পড়ছে। কি সীমাহীন আশাটাইনা ছিল আজকের দিনটিকে নিয়ে।
সোহেল ওর মাকে বলেছিল শোন - এই চাকরীটা হলে আমি বাসা নিবো কোথায় জানো মা?
= কোথায়?
= গুলশানে। হা হা হা। তোমার না দামী রেস্তোরাঁয় খাবার সখ? তোমাকে পিজা হাটে খাওয়াবো। একটা পিজা চোদ্দশ টাকা দাম। প্রথম বেতন পেলে খাওয়াবো ওয়েস্টিনে। এটা আরো অন্য ধরনের ব্যাপার সেপার। আমার এক বন্ধুর বোন ওখানে জব করে। আমাকে চেনে। বলেছে কখনো গেলে যাতে দেখা করি। বুঝছো? আমার ভাল কানেকশন আছে উচু লেভেলে। এইসব আড্ডা যখন চলছিল তখন সোহেলের দুই তিন জন বন্ধুও ছিল ওর বাসায়। আগামিকাল ওর ভাইভা উপলক্ষে সোহেল ওদের রাতে খেতে বলেছে। সোহেলের মা চিন্তিত। চার জন খেতে পারবে কি? আধা কেজি মাংসের তেহেরিতে হবেতো? তিনি শুধু তাদের তিন জনের জন্যেই রেধেছিলেন। এখন ওরা খেলে তিনি আর তার মেয়ের খাবার কিছুই থাকবে না। সোহেল তাকে না বলে ওর বন্ধুদের নিয়ে এসেছে। থাক। কাল ছেলেটার একটা ভাইবা। আমি না হয় মেয়েটিকে নিয়ে একটা মরিচের ভর্তা করে খেয়ে নেব।
সোহেলের এক বন্ধু কবির বলল - তোর চাকরী হলে তোর বোনকে কি দিবি?
সোহেল বলল ওকে প্রতি মাসে দশ হাজার করে টাকা দেব। যদি এই টাকা পেয়ে ও নষ্ট হয়ে যায় তাও সই।
যে অভাব ও দেখেছে এখন টাকা পেয়ে নষ্ট হওয়াতেও সুখ।
সোহেলের ছোট বোন বলল ভাইয়া তোর না বইয়ের সখ? টাকার জন্যে কিনতে পারিস না। তোর না কত সখ এক সেট রবীন্দ্র রচনাবলীর? টাকা পেলে সবার আগে এক সেট রবীন্দ্র রচনাবলী কিনবি।
সোহেলের মা বলল সবার আগে সোহেলের বিয়ে দিতে হবে।
এই কথা শুনে সোহেলের বন্ধুরা হৈহৈ করে উঠল।
সোহেলের মা বলল - এরপর আমার ছুটি।
তোর বউ তোর সংসারের হাল ধরবে।
সোহেল রাগি গলায় হাসি হাসি মুখে বলল- বউ এসে কি বাসার কাজ করবে? আমি কি কাজের বুয়া বিয়ে করবো? লাজুক স্বরে বলল আমি আমার বউকে দিয়ে কোন কাজই করাবো না।
সোহেলের মা বলল বিয়ের আগেই এই অবস্থা? আর শয়তান আমাকে যে বুয়ার মতো খাটাইয়া মারিস।
তোর বিয়ের পরেও আমিই ঘানি টানবো?
আরে চাকরীটা পেতে দাও খালি। বাবুর্চি রাখবো। কুক। শেফ। তুমি খালি অর্ডার দিবা। এটা খাবো। সেটা খাবো। আর বাবুর্চি শুধু টেবিলে খানা লাগিয়ে দিবে। সোহেলের ছোট বোন বলল আমি তিনবেলা গরুর মাংস খাবো।
সোহেলের এক বন্ধু বলল দোস্ত আমাদের কি দিবি?
সোহেল বলল যা তোদের সবাইকে একটা করে দামী মোবাইল ফোন।
সোহেলের আরেক বন্ধু বলল আন্টিকে শাড়ি টারি বেশি করে কিনে দিবি। আন্টির সব পুরানো কাপড় চোপর।
সোহেল বলল আরে আম্মুতো তখন মহেন্দ্রসিং ধনি। আমার সবইতো আম্মুর। আম্মুর ফ্ল্যাটে তখন সারাক্ষন স্টার প্লাসের মতো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজবে। আর আম্মু স্টার প্লাসের মহিলাদের মতো সবসময়ই সেজে গুজে থাকবে।
রাতে সেই আধা কেজি মাংসের তেহারি কি চমৎকার তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া হল। সালাদ বলতে শুধু পেয়াজ আর কাচা মরিচ। একজন আবার খাওয়া শেষ হতেই দৌড় দিয়ে একলিটারের সেভেন আপ নিয়ে এল বাকীতে।
সেটা দেখে সোহেলের মা বলল আহা আহা এসবের আবার কি দরকার ছিল।
ছোট ছোট গ্লাশে করে সেই সেভেন আপ কাড়াকাড়ি করে খাওয়া। হাতাহাতি করতে গিয়ে অনেকখানি পরে গেল। আহ কি চমৎকার রাতটাই না ছিল কাল...
হাঁটতে হাঁটতে সোহেল বিজয় স্বরনী চলে এসেছে। চোখটা কখন যেন ঝাপসা হয়ে গেছে। সোহেলের মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে -
আচ্ছা সুখ কাকে বলে?
দূঃক্ষ কাকে বলে?
কালকেও আমার এই চাকরীটা ছিল না। অথচ কি অসম্ভব আনন্দ ছিল। আজও চাকরিটা আমার নেই কিন্তু সহ্য করতে পারছিনা কেন?
বাসায় গিয়ে কি বলবো? মাত্র বিশ মিনিট দেরী হওয়ার কারনে ভাইবাটাই দিতে পারিনি। একটা ছোট স্বপ্ন আমাদের বাসাটাকে কাল কিভাবেইনা বদলে দিয়েছিল। অথচ আজ আমার মতো ব্যার্থ কে আছে।
ঠিক এমন সময় হঠাৎ একটা হ্যাচকা টান। কানের পর্দা ফাটানো হর্ন। কোন কিছু বোঝার আগেই সোহেল ছিটকে পড়লো ফুটপাথে। একটা লোক সোহেলকে গালি দিয়ে বলল চক্ষু কি মিয়া গোয়ার তলে ঢুকাইয়া হাঁটেন? মিয়া কানা। আমি যদি আপনেরে টান না দিতাম এতক্ষনে গাড়ির চাক্কার তলে থাকতেন।
বুকে ছেপ দেন। দোকানডায় বহেন। দোকানের ছেলেটা পানি দিয়ে বলল নেন পানি খান।
অনেকেই তাকিয়ে আছে সোহেলের দিকে। ছোট খাট একটা জটলার মতো। এক লোক বললো মাথা নিচা কইরা হাঁটলে গাড়ির তলেতো পরবোই। একজন বলল দোষ আমাগো আমাগো। আমরা আন্ধার মতো চলি তাই এক্সিডেন্ট হয়। আরেক লোক বলল বাস অলাগোও দোষ আছে। সিগনাল পার হইলে অরা বেহুশ হইয়া গাড়ি টানে।
সোহেল স্থানু হয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে। ওর মনে পড়ছে একদিন এক বুড়ি এক পিচ্চি মেয়েকে নিয়ে রাস্তা পার হতে নিয়েছিল। হঠাৎ এমন একটা বাস এসে বুড়িটাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। পুরো ঘটনাটা ঘটেছিল সোহেলের চোখের সামনে। বুড়ির মগজ ফেটে অনেকটা দুরে ছিটকে গিয়ে কাঁপছিল।
সেইরকম একটা অপ্রস্তুত মৃত্যু ওকে হালকা বাতাস দিয়ে গেল?
জীবন এত পলকা?
সোহেল লম্বা একটা শ্বাস নিল।
আস্তে আস্তে ওকে ঘিরে ভিড় পাতলা হয়ে এসেছে। সোহেল দোকানের ছেলেটিকে একটা সিগেরেট দিতে বলল। সিগেরেট ধরাতে গিয়ে লক্ষ্য করলো দুই হাতই কাঁপছে। দোকানদার ছেলেটা বলল মামা চা দেই একটা কাঁচা পাত্তি দিয়া। গরম গরম চুমুক দেন। ভাল লাগবোনে।
সোহেল চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আর সিগেরেটে টান দিয়ে চোখ বড় বড় করে চারপাশ দেখছে।
আকাশ চকচকে নীল।
এখনো গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া।
আইল্যান্ডের উপর একটা ভিক্ষুক মা তার কোলের বাচ্চাটিকে ফেলে দেওয়া পপকর্নের প্যাকেট থেকে পপকর্ন খাওয়াচ্ছে। জ্যামে আটকে পরা গাড়িতে একটা পিচ্চি মেয়ে বেলি ফুল বিক্রি করছে। মেয়েটির মুখ ভর্তি হাসি।
বাসের কন্ট্রাক্টর ড্রাইভারকে বলছে ওস্তাদ বায়ে প্লাস্টিক।
এক সার্ট প্যান্ট ইন করা লোক চন্দ্রিমার গাছের আড়ালে খুব তৃপ্তি নিয়ে হালকা হচ্ছে। এক পাগল দেয়ালে হেলান দিয়ে মাটিতে বসে আছে। ঠোটের কোনে ঘাঁ। নখ কালো কালো ময়লা। হলুদ দাত। একটা পলিথিনের থেকে তরকারি নিয়ে মাটিতে রাখা পাউরুটি দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। আবার ঝোলা থেকে বোতল বের করে পানিতে চুমুক দেয়।
সোহেল উঠে দাড়ায়। আবার হাঁটা শুরু করতে হবে। মিরপুর এখনো অর্ধেক পথ বাকী...
- অনি
একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির রিসিপশান। ভাবসাবই আলাদা। রেড আর হোয়াইটের অদ্ভুদ কম্বিনেশন পুরো রুমে। মিউট করে ওয়ালে টিভি চলছে। ফ্যাশান সো হচ্ছে। কিছু উন্মাদ মনে হয় মডেল। যেমন খুশি তেমন সাজোর ফ্যাশান সোতে প্রায় সবকটি মডেলই মনে হয় মৃত মানুষ সেজেছে। এই ঘরটিতে লাইটিং সোর্সও ইনভিজিবল। এক কোনায় শ্বাশত বাংলার বাশঝার। আমাদের গ্রামের গোয়াল ঘর আর পায়খানার পিছনের বাঁশঝার কোনদিন কি ভেবেছিল কি পরিমান ইজ্জত তার জন্যে সামনে অপেক্ষা করছে? যাইহোক, রিসিপশান টেবিলের পাশে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার জারে রংবেরঙ এর নাম না জানা চকলেট রাখা। গেস্ট রিফ্রেশমেন্ট। সবাই কাজ করছে অথচ কোথাও শব্দ নাই। সাউন্ড ওয়েভ টোটালি কন্ট্রোলড। টেবিলের ঐ পাশে যে মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে যদিও তাকে এই অফিসের সাথে মোটেই মানাচ্ছে না। মেয়েটিকে মহিলা হোস্টেলের সুপারেন্টেন্ডের মতো লাগছে। এদেরকে দেখে অবশ্য কিছু বোঝাও মুশকিল। এরা পাশের কলিগের সাথে তুই তোকারি করে মোস্তফা সরোয়ার ফারুকির নাটকের চরিত্রের মতো করে কথা বলে। শুধু যখনি কোন লোক তাদের কাছে আসে তখন তাদের প্রফেশনাল রুপ বেড়িয়ে আসে। চোস্ত ইংরেজিতে কথা শুরু করে। এদের ইংরেজি শুনলে মনে হয় এরা জন্মসুত্রে বাংগালি কিন্তু বড় হয়েছে বিদেশে। এই অফিসের রিসিপসনিস্ট মেয়েটির নাম রেবেকা। সে সবাইকে বলে রেবা।
রেবা বেশ বিরক্ত। যদিও সে তার চেহারায় একটা ডিপ্লোম্যাটিক ভাব বজায় রাখতে চেষ্টা করছে। রেবার বিরক্তির কারন হচ্ছে তার সামনে বসে থাকা দশ বারোজন ভিজিটর।
আজ এই অফিসে ভাইবার একটি সিডিউল আছে। এই লোকগুলো সম্ভবত সে জন্যই এসেছে। কিন্তু লোকগুলোর নুন্যতম কমনসেন্স নেই। এরা প্রায় সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। একটা মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকা যে মেয়েটির জন্য কতটুকু এম্বারর্সিং এই বোধটুকুও কি এদের নেই। এরা চাকরী করবে কিভাবে?
রেবার বিরক্তি বাড়ছেই। রেবা ঘড়ি দেখলো। ভাইভা টাইম শুরু হয়ে গেছে। অথচ ফার্স্ট ক্যান্ডিডেট এখনো আসেনি। এই অফিসের পাংচুয়ালিটির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স। রেবা নেক্সট ক্যান্ডিডেট কে ভিতরে যেতে বলল।
এর ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই সোহেল ঢুকলো অফিসে। ওর আজ এখানে ইন্টারভিউ। সোহেল ঢুকেই একটু ভেবাচেকা খেয়ে গেল। জটিল অফিস আর অফিসের ভাবসাব। রেবাও লক্ষ্য করলো একটা ছেলে ঢুকেছে। গায়ের রং কালো। চুলগুলি কোকড়া আর এলোমেলো। ঢোলা প্যান্টের সাথে বেমানান টাইট সার্ট পরেছে। হাস্যকর লাগছে দেখতে। ঢোলা প্যান্টের সাথে পরেছে কনভার্স তাও আবার সবুজ রংবেরঙ।
রেবা মনে মনে ভাবলো এই টাইপ লোকজন কিভাবে এইসব অফিসে ইন্টারভিউ দিতে আসে। এদের উচিত থানা অথবা ইউনিয়ন পর্যায় টিকাদান কর্মসূচিতে কাজ করা।
সোহেল রিসিপশানের দিকে এগিয়ে এল।
চোখেমুখে অস্বস্তির ছাপ নিয়ে বলল - এক্সকিউজ মি = আমি সোহেল আমার একটা এপয়েন্টমেন্ট ছিল ভাইবার।
= রেবা বলল কয়টায়?
= সোহেল বলল ১০ টায়
= রেবা বলল এখন কটা বাজে?
= সোহেল লাজুক একটা হাসি দিয়ে ঘড়ি দেখে বলল সাড়ে দশটা।
= রেবা এবার চোস্ত ইংরেজিতে যা বলল তার বাংলা করলে দাড়ায়- আমরা দুক্ষিত। আপনাকে চলে যেতে হবে। আপনি আপনার এপয়েন্টমেন্টটি মিস করেছেন।
= সোহেলের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মনে হল শালি ফাপর মারতাসে। ভাব আরকি। চেহারাটা শাঁকচুন্নির মতো। দামী একটা অফিসের চাকরী কইরা দাম দেখাইতাসে। হেরে একটু তেলাইতে হইবো। সোহেল চেহারাটাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে মুখটা হাসি হাসি করে বলল - ম্যাম, আমি আসলে আগেই রওনা হয়েছিলাম। ঢাকা শহরের জ্যামের অবস্থা জানেনিইতো। মিরপুর থেকে গুলশান বাস পাওয়াও সমস্যা। আপনি একটু এক্সকিউজ করে দেন।
সোহেল মনে মনে ভাবলো কাজ হবে। যতকিছুই হোক বিশ ত্রিশ মিনিটের জন্যেতো আর বাদ দিয়ে দিবে না। আর কাল রাতে ও ঘুমায়নি। ও দেখেছে যে রাতে ও সারারাত জেগে পরেরদিন কোনও কাজে যায় সেটা ওর হয়।
= রেবা সম্পুর্ন ভাবলেশহীন নিরুত্তাপ গলায় বলল- আমাদের কোম্পানি পাংচুয়ালিটিকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেয়। কোন লেম এক্সকিউজ এক্সেপ্ট করেনা। আপনাকে গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে ভিজিটর কার্ড প্রভাইড করা হয়েছে। আপনি সে কার্ড পাঞ্চ করে ইন করেছেন সিসি ক্যামেরা এই রিসিপশানকে কাভার করছে। আপনার রেকর্ড অলরেডি কপিড। বেটার লাক নেক্সট টাইম।
সোহেলের কাছে মনে হল একে আর ঘাটিয়ে কোন লাভ হবেনা। আফসোস এই কথাগুলো নিরিবিলি শুনতে পাইলাম না। এতগুলি লোকের সামনে শুনতে হইল। এইখান থেকে হাঁইটা যাওয়াটাও লজ্জা। একটা সুন্দর মেয়ের থেকে এগুলি শুনলেও নাহয় চলতো। বসাইছে একটা পেত্নি। আর এতগুলি মানুষ একটা শালাও কিছু কইলো না। সোহেল নিজেকে সামলিয়ে বিদায় নিতে কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু ততক্ষনে রেবা ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। এতগুলো লোক এখন সোহেলের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা প্রচন্ড লজ্জার। সোহেল কোনমতে মাথাটা নীচু করে লিফটের কাছে চলে এলো।
লিফট সেকেন্ড ফ্লোর ইন্ডিকেট করছে। সোহেল আছে 18 th ফ্লোরে।
গতকাল যখন সোহেলের কাছে এই অফিস থেকে ফোনটা আসে ( এই শালিই মনে হয় করেছিল) যে আগামীকাল ওর ভাইবা। সোহেলের কাছে কেন যেন মনে হয়েছিল চাকরীটাই হয়ে গেছে। কারন সিভিতে ওর এক্সপেরিয়েন্স ছিল পর্যাপ্ত। আর সবচেয়ে লোভনীয় ছিক সেলারি। ওরা সেলারি উল্লেখ করেছিল ১২০০ ডলার। সোহেল বর্তমানে যে অফিসে চাকরী করে সেখান থেকে ও বাসে বাসায় ফেরে। অথচ যেদিন ও ভাইবার জন্য ফোন পেলো সেদিন ও রিক্সায় ফিরেছিল। মনে মনে ভেবেছিল করিনা কিছু এক্সট্রা খরচ। সবঠিক হয়ে যাবে। এইতো শুরু। চাকরিটা পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। স্ট্রাগলের দিন শেষ। এবার একজোড়া ভাল জুতা কিনতে হবে। যে জুতাটা পরে ও অফিস করে ওটার অবস্থা লোকার বাসের সীটের চেয়েও খারাপ। এবার আর জুতা কেনার প্ল্যান করে একবছর বসে থাকতে হবে না।
টুং করে একটা শব্দে সোহেলের সংবিৎ ফিরে এল। লিফটের দরজাটা খুলছে। দুজন মধ্যে বয়স্কলোক একটি মেয়ে আর দু'জন ফরেনার বের হলো। একজন বিদেশী বুড়া আবার হেলোও বলল। সোহেল কি উত্তর দিবে বুঝতে বুঝতেই তারা চলে গেল। আহ কি চমৎকার পারফিউম এর গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে গেল। বিদেশিটা যখন সোহেলকে হেলো বলছিলো সোহেলের ইচ্ছা করছিলো জুতা খুলে জুতার উপর বসে পরে। যাতে ওর জুতাটি দেখতে না পায়। লিফটের ভিতরে ঢুকে সোহেল G বাটনটাতে চাপ দিয়ে দাড়িয়ে রইল। একেবারে একা ও লিফটে।
আজকে যখন এই বিল্ডিংটার সামনে এসে দাড়ায় তখন ওর মনে হচ্ছিল আরে খাইসে কি জিনিস বানাইসে! জটিল! চরম! গজব! ব্লু কালারের গ্লাস দিয়ে পুরা বাইশতলা ঢেকে দিছে।
এই এলাকাতেই ওর এক চাচাতো ভাইয়ের অফিস। এক বিদেশি ব্যাংকের ম্যানেজার। এই ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ নাই। এবার এখানে চাকরী হলে যোগাযোগটা শুরু করতে হবে। মাঝে মাঝে লাঞ্চটাইমে ওনার অফিসে ঢুকে বলবো - আচ্ছা আপনাদের এখানে ভাল লাঞ্চ কি কি পাওয়া যায়। আজ আমি লাঞ্চ করাবো। এই ভাইটার অনেক ভাব। বড় চাকরী করে দেখে সোহেলদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনা। তবে এইবার পাত্তা না দিয়ে যাবে কই চান্দু? যখন দেখবে সোহেল নিজেও গুলশানে চাকরি করে আর অনেক টাকা বেতনও পায়। সোহেল একবার ভেবেছিল তার ভাইটাকে ফোন দিয়ে এই অফিসের এড্রেসটা জেনে নেয়। পরে আবার মনে হল থাক। যদি চাকরীটা না হয় তখন। তারচেয়ে বরং চাকরীটা হয়ে গেলে একেবারে একটা গজব ড্রেসাপ করে ওর অফিসে গিয়ে বলতে হবে তুমি এইখানে আছো? ভালই হলো। আমার অফিসও এখানেই পাশেই। ভালই হলো। তুমি যেহেতু ব্যাংকে আছো কোন হেল্প লাগলে বলো। এই নাও আমার বিজনেস কার্ড। শালার কিচ্ছু হইলো না।
লিফট থেকে নেমে সোহেল ভিজটিং কার্ডটি জমা দিয়ে রাস্তায় বের হয়ে এল। এখন প্রায় এগারোটা বাজে। গুলশান এলাকায় প্রচন্ড ট্রাফিক। মে মাস। প্রচন্ড গরম। রাস্তায় গাড়িগুলো সব জ্যামে আটকে আছে। গগনচুম্বী সব অট্টালিকা। ঢাকা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে প্রচন্ড সম্ভবনাময় একটি শহর। আর গুলশান এলাকাটি এই শহরের সবচেয়ে বিত্তবানদের এলাকা। ঢাকার মধ্যবিত্ত যারা এ অঞ্চলে চলাফেরা করে বা কাজে আসে তাদের ভিতর একই সংগে আশা ও হীনমন্যতাবোধ কাজ করে। এখানে কোটি কোটি টাকা মুল্যের গাড়ি গাম্ভির্য নিয়ে চলা ফেরা করে। বিলিয়ন বিলিয়ন টাকার কর্পোরেট ব্যাবসার অফিস এখানে। এই এলাকাতেই ডিপ্লোম্যাটিক জোন। এখানে যারা সফল তাদের মধ্যে রংপুরের একটা প্রবাদ বাক্যের প্রতিফলন দেখা যায়- ' মুই কি হনু রে'। যেসব ধনী ব্যাক্তি এখানে রেসিডেন্স হতে চান সেটা কেবল একোমডেশনের জন্যই নয় সেটা আভিজাত্যর জন্যও।
এহেন গুলশান এলাকায় সোহেলের পকেটে আছে শুধু ফিরে যাবার বাস ভাড়া। সোহেল ঢাকার ছেলে হলেও গুলশানে এসে হকচকিয়ে গেছে। সোহেলের কাছে মনে হচ্ছে একটু আগে ওর একটা অপারেশন হয়েছে। স্বপ্ন অপারেশন। একটি চাকরী পাওয়ার স্বপ্ন খারাপ টিউমারের মতো ননম্যালিগ্ল্যান্ট গ্রোথ হয়েছিল। যেটা একটু আগে অপারেশন করে ফেলে দেয়া হয়েছে। তাই যেন শরীরটা দুর্বল। মাথা ঝিমঝিম করছে। মাথা ঝিমঝিম করার অবশ্য আরেকটা কারন আছে। সেটা হচ্ছে সকালে নাস্তা না করা। যদিও ওর মা নাস্তা খাবার জন্য অনেক পিড়াপিড়ি করেছেন। কিন্তু ভাইবা দিতে যাবার উত্তেজনায় খাবার গলা দিয়ে নামতো না। সোহেল তাই নাস্তা না খেয়েই রওনা দেয়।
এই টাইমটায় লোকাল বাসের মধ্যে যে ভীড়! এখানে ওঠা আর আত্মহত্যা করা একই ব্যাপার। এছাড়া প্রচন্ড সিগেরেট খেতে ইচ্ছে করছে। সিগেরট কিনলে আর ফিরে যাবার বাস ভাড়া থাকবে না। আর বাসে গেলে সিগেরট খাওয়া হবে না। এমন দোটানার মধ্যে সোহেলের চোখ পরলো এই এলাকার মেয়েদের দিকে। সবাই যেনো টিভি সিরিয়ালের মেয়েদের মতো। হয় শপিংএ যাচ্ছে আর নয়তো আসছে। এরা কেউ কেউ এত সুন্দর যে সোহেলের কাছে মনে হল বাস্তবে না এদের টিভিতে দেখাচ্ছে। আহা এরা না জানি কত সুখে আছে। এদের মধ্যে একটা মেয়েকে দেখে সোহেলের ভাইবা দিতে না পারার কষ্ট কমে গেল। মেয়েটিকে দেখে সোহেলের মনে হল এদেরকে এতদিন শুধু ম্যাগাজিনেই দেখেছি। এরা সামনা সামনি তাহলে এত সুন্দর হয়!!! এত সুন্দর একটা মেয়েকে সামনা সামনি দেখে সোহেল মনে মনে কবিতা মনে করার চেষ্টা করতে চাইলো। কিন্তু আশ্চর্য! একটা কবিতাও মনে আসছে না। শুধু অদ্ভুত ভাবে মমতাজের ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায় এই লাইনটাই ঘুরঘুর করছে। অথচ অসময়ে কত অপুর্ব লাইন মাথায় আসে।
সোহেল সিদ্ধান্ত নিল সে হেঁটে বাসায় ফিরবে।
এতে আরাম করে সিগেরেট টানতে টানতে যাওয়া যাবে। পথের মধ্যে একবার চা সিগেরেটের ব্রেক। তারপর আবার হাঁটা। চাকরী না হওয়ার কষ্ট, মেয়েটিকে দেখার পর উদাস উদাস ভাব সব মিলিয়ে সোহেল হাঁটাই ঠিক করলো। পাশের এক সিডির দোকান থেকে ভেসে আসছে -
যো ওয়াদা কিয়া ও নিভানা পারেগা,
রোকে জামানা চাহে রোকে খুদাই
তুমকো আনা পারেগা...
সোহেল এই গানটা গুনগুন করতে করতে হাঁটা দিল।
এই গানের কথার সাথে যদিও সোহেলের বর্তমান বাস্তবতার কোন যোগ নেই। তবুও সোহেলের মনে হচ্ছে - একেবারে আমার নিজের কথা।
যো ওয়াদা কিয়া ও নিভানা পারেগা..
যে কথা তুমি দিয়েছো সেটা তোমাকে রাখতে হবে...
সোহেলের গানের গলা সুন্দর। সে গুনগুন করতে করতে যাচ্ছে। দুর থেকে এখনও কানে ভেসে আসছে -
রোকে জামানা চাহে রোকে খুদাই তুমকো আনা পারেগা...
সোহেলদের বাসা মিরপুরে।
অনেক ভিতরের দিকে।
বহু অলিগলি পাড় হয়ে যেতে হয়।
একটি টিনশেড বাসায় থাকে ওরা।
সাথে কয়েকটি কমন ফ্যামেলি।
সবার জন্যে কমন বাথরুম কমন রান্নাঘর।
সোহেলের বাবা নেই। বছর চারেক আগে হার্ট এটাকে মারা গেছেন।
সোহেলের ছোট বোন আর সোহেলের মাকে নিয়ে সোহেল থাকে একরুমের বাসায়।
ভাড়া তিন হাজার টাকা। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সব এর মধ্যে। সস্তা।
রাতে সোহেল মেঝেতে ঘুমায়।
ওর মা আর বোন ঘুমায় খাটে।
ঝামেলা লেগে যায় যখন কেউ থাকতে আসে। সোহেলের তখন কোননা কোন বন্ধুর বাসায় থাকতে যেতে হয়।
সোহেলের অবশ্য ভালোও লাগে।
সোহেল বর্তমানে যে অফিসে চাকরী করছে সেখানে ওর চার বছর হয়ে এলো।
ওর বাবা মারা যাওয়ার পর পরই ঢুকেছিল।
শুরুতে বেতন ছিল ২০০০ টাকা। এখন ছয় হাজার পাঁচশ টাকা পায়। এই বেতন দিয়ে ওর বাসা ভাড়া খাওয়া দাওয়া চালাতে হয়। ওর ছোট বোনটা অবশ্য টিউশনি করে। এই বাসার বিভিন্ন ঘরের পিচ্চিদেরকে পড়ায়। এই দুইহাজার পনের সালে মাত্র একশ টাকা জন প্রতি। তাও সব মিলিয়ে শ'পাঁচেক টাকা আসে। এই টাকাটাও ওদের সংসারে কাজে লাগে। যদিও সোহেল এই টাকাতেও মাঝে মাঝে ভাগ বসায়। খুবই লজ্জিত ভংগিতে ওর বোনকে বলে - আমাকে ২০ টা টাকা দেয়া যায় রে? আজ অফিসে যাওয়ারও ভাড়া নাই।
সোহেলের মা কিভাবে সংসার চালান সেটা উনিই জানেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের মায়েদের অনেক রকম ম্যাজিক জানতে হয়।
অবর্ণনীয় অভাবের মধ্যেও তিনি তার ছেলেকে মেয়েকে আগলে রাখেন। ওদেরকে বুঝতে দেননা।
প্রায় প্রতিদিনকার খাবারের মেনু দেখে যখন তার ছেলে মেয়ে প্যানাপ্যানি করে- তিনি হতাশ চোখে শুধু তাকিয়ে থাকেন।
কাল যখন সোহেল ওনাকে সোহেলের ভাইবার খবর দেয় তখন তিনি সংগে সংগে পাশের ঘরের এক মহিলার কাছ থেকে দেড়শ টাকা ধার করে আধা কেজি গরুর মাংস কিনে আনান। ছেলে মেয়ে দুইটাই গরুর মাংস বলতে অজ্ঞান। দুই পিস মাংস দিয়ে দুই থাল ভাত খেয়ে ফেলতে পারে। হাঢ় চুশে চুশে একেবারে ফকফকা করে ফেলে। ওদের মা মজা করে বলে- আরে পিপড়ার জন্যে কিছু রাখ।
তিনি এই আধাকেজি মাংস ছোট ছোট টুকরো করে তাহারি রান্না করেছিলেন। আহা খাক একটু ভালমন্দ। কাল ছেলেটির ভাইবা। যদি ভাল কিছু হয়?
এই ভেবে তিনি সার্ট প্যান্ট ইস্ত্রি করে এনেছেন।
টাকা দিতে পারেননি। বলেছেন সামনের মাসে দিবেন। ছেলেটার একটাও ভাল সার্ট প্যান্ট নেই। এক বন্ধুর কাছে থেকে এনেছে সার্ট আরেকজনের থেকে এনেছে প্যান্ট। সার্টটা হয়েছে টাইট আর সার্টের তুলনায় প্যান্টা হয়েছে বেমানান ঢোলা। এই সার্ট প্যান্ট পরেই ছেলেটা অনেক ক্ষন আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেছে। ছোট বোনটা অবশ্য বলেছিল- ভাইয়া তোর এক জোড়া নতুন জুতা হলে বেশ হতো।
সোহেল বলল - জুতা পেলাম না। কারো পায়ের মাপে পা মেলেনা। শোন, আমার জুতোটা পুরানো কিন্তু বিদেশি জিনিস। আর ফরেন অফিসে যাচ্ছি। বিদেশি জুতোর মুল্য ওরাই বুঝবে। সোহেলের জুতাটা আসলেই বাইরের। ওর এক বন্ধু বছর তিনেক আগে দেশে এসেছিল। আবার চলে যাওয়ার আগে সোহেলকে দিয়ে গেছে। সেই জুতার রং টং উঠে একাকার অবস্থা। যদিও ছেড়েনি এখনো। শুধু ছাল বাকড়া উঠে গেছে।
হঠাৎ পিছনে গাড়ির হর্নে সোহেল ঘুরে তাকালো। গাড়িতে ওর এক বন্ধু তানভির। তানভির মাথা বের করে বলল - সোহেল গো টু হেল। where are you going bro? তানভিরের কথায় গাড়ির ভিতরে মেয়েদের হাসির আওয়াজ শোনা গেল। সোহেল বুঝতে পারলো না এই কথায় হাসির কি আছে।
সোহেল মিনমিন করে বলল এখানে একটা কাজে এসেছিলাম।
তানভির ভেতরের দিকে তাকিয়ে বলল দেখছো?
আমি বলছিলাম না? আমার ফ্রেন্ড যায়। সে বিড়াট কাজের মানুষ। গুলশান এলাকার উন্নয়ন এখন সোহেলের হাতে। তুই কই গেছিলি ইউ এস এম্বাসেডর এর সাথে দেখা করতে? কিরে দোস্ত জবাব দে? তোকে দারুন লাগছে রে। আবার মেয়েদের হাসির শব্দ। তানভিরের ততক্ষনে ফ্লো এসে গেছে। দোস্ত তোকে তোকে রাজকাপুরের মতো লাগছে। ঐ যে মেরা জুতা হ্যায় জাপানি ইয়ে পাতলুন ইংলিশতানি ওমন। তুই এই রাজকাপুর সেজে এম্বেসিতে গেলি?
সোহেল মিনমিন করে কি বলল ভালো বোঝা গেল না।
তানভির ওর গাড়িতে বসা মেয়েদের কে বলল এই তোমরা যাকে দেখছো সে কিন্তু গুনধর ছেলে। প্রচুড় পড়ুয়া। আবার নাকি সুরে রবীন্দ্র সংগীতও গায়।
এই কথা শুনে এক মেয়ে নাকি সুরে বলল - রাঁজঁকাঁপুঁরঁ ভাঁইঁয়াঁ একটি রবীন্দ্রসংগীত শুনান না। আবার হাসাহাসির ধুম পরে গেল।
সোহেল বুঝতে পারলো কোন এক বিচিত্র কারনে এই মেয়েগুলো ওকে নিয়ে মজা করছে। সোহেলের খুব অস্বস্তি হচ্ছে। যেতেও পারছেনা। আবার এসব নিতেও পারছে না।
তানভির বলল- এই গাড়িতে ওঠ। আমরা পিৎজ্জা খেতে যাচ্ছি। চল ওঠ।
সোহেল বুঝতে পারলো ওকে পিজা খাওয়ানোটা মুল উদ্দেশ্য না। ওকে ওরা এন্টারটেইনিং এলিমেন্ট হিসেবে নিতে চাচ্ছে।
সোহেল বলল নারে। আজ না। তোরা যা। আমার মহাখালি একটা কাজ আছে।
তানভির বলল চলনা। তুই মহাখালি না গেলে কি রাশিয়া আমেরিকার সাথে সন্ধি করবেনা?
মেয়েরা আবার হাসি শুরু করলো। মেয়েরা একবার কিছুতে হাসি শুরু করলে হাসতেই থাকে।
পিছনে দুইটা গাড়ি হর্ন দিচ্ছে তানভিড় গাড়িটা একটু সামনে বাড়াতেই সোহেল চট করে হেঁটে সামনের এক গলিতে ঢুকে গেল। গলির মোড়ে একটা ভ্যানের উপরে তেলাপোকা মারার ঔষধ বিক্রি করছে। এক লোক মাইক দিয়ে বলছে - 'তেলাপোকা মুক্ত সমাজ চাই'.... 'তেলাপোকা মুক্ত সমাজ চাই'....
সোহেল কিছুক্ষন গলিতে দাড়িয়ে শ্লোগান শুনলো। তারপর উকি দিয়ে দেখে যে না গাড়িটা চলে গেছে।
সোহেল এবার হাঁটা ধরল। একবার ভাবলো ক্যান্টনমেন্ট এর রাস্তাটা ধরবে পর মুহুর্তেই মত পাল্টালো। মন যে পরিমান খারাপ। নিজেকে কষ্ট দিতে ইচ্ছে করছে। বিজয় স্বরনীর রাস্তা দিয়ে ঘুরে যাবে। শুধু মধ্যে একটা চা সিগেরেটের ব্রেক নেবে। থামবে। তারপর আবার বাকী পথটুকু হাটবে।
হাঁটতে হাঁটতে সোহেলের ঘুরে ফিরে কালকের দিনটাকেই মনে পড়ছে। কি সীমাহীন আশাটাইনা ছিল আজকের দিনটিকে নিয়ে।
সোহেল ওর মাকে বলেছিল শোন - এই চাকরীটা হলে আমি বাসা নিবো কোথায় জানো মা?
= কোথায়?
= গুলশানে। হা হা হা। তোমার না দামী রেস্তোরাঁয় খাবার সখ? তোমাকে পিজা হাটে খাওয়াবো। একটা পিজা চোদ্দশ টাকা দাম। প্রথম বেতন পেলে খাওয়াবো ওয়েস্টিনে। এটা আরো অন্য ধরনের ব্যাপার সেপার। আমার এক বন্ধুর বোন ওখানে জব করে। আমাকে চেনে। বলেছে কখনো গেলে যাতে দেখা করি। বুঝছো? আমার ভাল কানেকশন আছে উচু লেভেলে। এইসব আড্ডা যখন চলছিল তখন সোহেলের দুই তিন জন বন্ধুও ছিল ওর বাসায়। আগামিকাল ওর ভাইভা উপলক্ষে সোহেল ওদের রাতে খেতে বলেছে। সোহেলের মা চিন্তিত। চার জন খেতে পারবে কি? আধা কেজি মাংসের তেহেরিতে হবেতো? তিনি শুধু তাদের তিন জনের জন্যেই রেধেছিলেন। এখন ওরা খেলে তিনি আর তার মেয়ের খাবার কিছুই থাকবে না। সোহেল তাকে না বলে ওর বন্ধুদের নিয়ে এসেছে। থাক। কাল ছেলেটার একটা ভাইবা। আমি না হয় মেয়েটিকে নিয়ে একটা মরিচের ভর্তা করে খেয়ে নেব।
সোহেলের এক বন্ধু কবির বলল - তোর চাকরী হলে তোর বোনকে কি দিবি?
সোহেল বলল ওকে প্রতি মাসে দশ হাজার করে টাকা দেব। যদি এই টাকা পেয়ে ও নষ্ট হয়ে যায় তাও সই।
যে অভাব ও দেখেছে এখন টাকা পেয়ে নষ্ট হওয়াতেও সুখ।
সোহেলের ছোট বোন বলল ভাইয়া তোর না বইয়ের সখ? টাকার জন্যে কিনতে পারিস না। তোর না কত সখ এক সেট রবীন্দ্র রচনাবলীর? টাকা পেলে সবার আগে এক সেট রবীন্দ্র রচনাবলী কিনবি।
সোহেলের মা বলল সবার আগে সোহেলের বিয়ে দিতে হবে।
এই কথা শুনে সোহেলের বন্ধুরা হৈহৈ করে উঠল।
সোহেলের মা বলল - এরপর আমার ছুটি।
তোর বউ তোর সংসারের হাল ধরবে।
সোহেল রাগি গলায় হাসি হাসি মুখে বলল- বউ এসে কি বাসার কাজ করবে? আমি কি কাজের বুয়া বিয়ে করবো? লাজুক স্বরে বলল আমি আমার বউকে দিয়ে কোন কাজই করাবো না।
সোহেলের মা বলল বিয়ের আগেই এই অবস্থা? আর শয়তান আমাকে যে বুয়ার মতো খাটাইয়া মারিস।
তোর বিয়ের পরেও আমিই ঘানি টানবো?
আরে চাকরীটা পেতে দাও খালি। বাবুর্চি রাখবো। কুক। শেফ। তুমি খালি অর্ডার দিবা। এটা খাবো। সেটা খাবো। আর বাবুর্চি শুধু টেবিলে খানা লাগিয়ে দিবে। সোহেলের ছোট বোন বলল আমি তিনবেলা গরুর মাংস খাবো।
সোহেলের এক বন্ধু বলল দোস্ত আমাদের কি দিবি?
সোহেল বলল যা তোদের সবাইকে একটা করে দামী মোবাইল ফোন।
সোহেলের আরেক বন্ধু বলল আন্টিকে শাড়ি টারি বেশি করে কিনে দিবি। আন্টির সব পুরানো কাপড় চোপর।
সোহেল বলল আরে আম্মুতো তখন মহেন্দ্রসিং ধনি। আমার সবইতো আম্মুর। আম্মুর ফ্ল্যাটে তখন সারাক্ষন স্টার প্লাসের মতো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজবে। আর আম্মু স্টার প্লাসের মহিলাদের মতো সবসময়ই সেজে গুজে থাকবে।
রাতে সেই আধা কেজি মাংসের তেহারি কি চমৎকার তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া হল। সালাদ বলতে শুধু পেয়াজ আর কাচা মরিচ। একজন আবার খাওয়া শেষ হতেই দৌড় দিয়ে একলিটারের সেভেন আপ নিয়ে এল বাকীতে।
সেটা দেখে সোহেলের মা বলল আহা আহা এসবের আবার কি দরকার ছিল।
ছোট ছোট গ্লাশে করে সেই সেভেন আপ কাড়াকাড়ি করে খাওয়া। হাতাহাতি করতে গিয়ে অনেকখানি পরে গেল। আহ কি চমৎকার রাতটাই না ছিল কাল...
হাঁটতে হাঁটতে সোহেল বিজয় স্বরনী চলে এসেছে। চোখটা কখন যেন ঝাপসা হয়ে গেছে। সোহেলের মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে -
আচ্ছা সুখ কাকে বলে?
দূঃক্ষ কাকে বলে?
কালকেও আমার এই চাকরীটা ছিল না। অথচ কি অসম্ভব আনন্দ ছিল। আজও চাকরিটা আমার নেই কিন্তু সহ্য করতে পারছিনা কেন?
বাসায় গিয়ে কি বলবো? মাত্র বিশ মিনিট দেরী হওয়ার কারনে ভাইবাটাই দিতে পারিনি। একটা ছোট স্বপ্ন আমাদের বাসাটাকে কাল কিভাবেইনা বদলে দিয়েছিল। অথচ আজ আমার মতো ব্যার্থ কে আছে।
ঠিক এমন সময় হঠাৎ একটা হ্যাচকা টান। কানের পর্দা ফাটানো হর্ন। কোন কিছু বোঝার আগেই সোহেল ছিটকে পড়লো ফুটপাথে। একটা লোক সোহেলকে গালি দিয়ে বলল চক্ষু কি মিয়া গোয়ার তলে ঢুকাইয়া হাঁটেন? মিয়া কানা। আমি যদি আপনেরে টান না দিতাম এতক্ষনে গাড়ির চাক্কার তলে থাকতেন।
বুকে ছেপ দেন। দোকানডায় বহেন। দোকানের ছেলেটা পানি দিয়ে বলল নেন পানি খান।
অনেকেই তাকিয়ে আছে সোহেলের দিকে। ছোট খাট একটা জটলার মতো। এক লোক বললো মাথা নিচা কইরা হাঁটলে গাড়ির তলেতো পরবোই। একজন বলল দোষ আমাগো আমাগো। আমরা আন্ধার মতো চলি তাই এক্সিডেন্ট হয়। আরেক লোক বলল বাস অলাগোও দোষ আছে। সিগনাল পার হইলে অরা বেহুশ হইয়া গাড়ি টানে।
সোহেল স্থানু হয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে। ওর মনে পড়ছে একদিন এক বুড়ি এক পিচ্চি মেয়েকে নিয়ে রাস্তা পার হতে নিয়েছিল। হঠাৎ এমন একটা বাস এসে বুড়িটাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। পুরো ঘটনাটা ঘটেছিল সোহেলের চোখের সামনে। বুড়ির মগজ ফেটে অনেকটা দুরে ছিটকে গিয়ে কাঁপছিল।
সেইরকম একটা অপ্রস্তুত মৃত্যু ওকে হালকা বাতাস দিয়ে গেল?
জীবন এত পলকা?
সোহেল লম্বা একটা শ্বাস নিল।
আস্তে আস্তে ওকে ঘিরে ভিড় পাতলা হয়ে এসেছে। সোহেল দোকানের ছেলেটিকে একটা সিগেরেট দিতে বলল। সিগেরেট ধরাতে গিয়ে লক্ষ্য করলো দুই হাতই কাঁপছে। দোকানদার ছেলেটা বলল মামা চা দেই একটা কাঁচা পাত্তি দিয়া। গরম গরম চুমুক দেন। ভাল লাগবোনে।
সোহেল চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আর সিগেরেটে টান দিয়ে চোখ বড় বড় করে চারপাশ দেখছে।
আকাশ চকচকে নীল।
এখনো গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া।
আইল্যান্ডের উপর একটা ভিক্ষুক মা তার কোলের বাচ্চাটিকে ফেলে দেওয়া পপকর্নের প্যাকেট থেকে পপকর্ন খাওয়াচ্ছে। জ্যামে আটকে পরা গাড়িতে একটা পিচ্চি মেয়ে বেলি ফুল বিক্রি করছে। মেয়েটির মুখ ভর্তি হাসি।
বাসের কন্ট্রাক্টর ড্রাইভারকে বলছে ওস্তাদ বায়ে প্লাস্টিক।
এক সার্ট প্যান্ট ইন করা লোক চন্দ্রিমার গাছের আড়ালে খুব তৃপ্তি নিয়ে হালকা হচ্ছে। এক পাগল দেয়ালে হেলান দিয়ে মাটিতে বসে আছে। ঠোটের কোনে ঘাঁ। নখ কালো কালো ময়লা। হলুদ দাত। একটা পলিথিনের থেকে তরকারি নিয়ে মাটিতে রাখা পাউরুটি দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। আবার ঝোলা থেকে বোতল বের করে পানিতে চুমুক দেয়।
সোহেল উঠে দাড়ায়। আবার হাঁটা শুরু করতে হবে। মিরপুর এখনো অর্ধেক পথ বাকী...
- অনি
প্রিয় অনি,
ReplyDeleteআমি "কিয়া হ্যায় যো পেয়ার তো পারেগা নিভানা" এই গানের লিরিক খুঁজতে গিয়ে আপনার ব্লগে এলাম।
https://www.facebook.com/story.php?story_fbid=10213349198506368&id=1290679781
আপনার লেখাটা দারুণ হয়েছে। বেশ ভাল লেগেছে।
আমি এটাকে কপি করে আপনার কারটেসি সহ আমার ওয়ালে দিতে পারি?
জানাবেন, প্লিজ।
ধন্যবাদ
হাফিজ