সন্ধ্যার সময় হঠাৎ করে বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পরা শুরু হলো।
বাংলাদেশের আবহাওয়ার এখন আর কোন ঠিক ঠিকানা নেই। ভাদ্র মাসের তাল পাকা গরমেও শ্রাবন মাসের ঢল নামছে। আমি বৃষ্টি দেখে দৌড়ে পাশের এক চায়ের দোকানে চট করে ঢুকে গেলাম। ছোট্ট একটি ছাউনির নিচে প্রায় চোদ্দ-পনের জন মানুষ। আমি একটু ঠেলেঠুলে ভিতরের দিকে ঢুকলাম। ঝমঝম না - টাসটাস শব্দে বৃষ্টি পরেছে। পানির ফোটার সাইজও মাশাল্লাহ বয়লার মুরগীর মতো, হাইব্রিড। যারা বাইরের দিকে দাঁড়িয়ে সবার প্যান্ট প্রায় অর্ধেক কাদার ছিটা লাগছে। বৃষ্টির ফোটা কাদা ছিটাচ্ছে। আর তারা মুখ দিয়ে বিচিত্র ভাবে বিরক্তি প্রকাশ করছে। আমি ভিতরে ঢুকে ভেবেছিলাম বেঁচেছি- কাদা ছিটবেনা। এখন দেখছি হালকা ভেজা মানুষের শরীর থেকে পাকস্থলী বের হয়ে আসার মতো চুকা চুকা (টক টক) গন্ধ আসছে। মাথা ঝিমঝিম করছে আমার গন্ধে। মানুষের শরীরের গন্ধে তাহলে সত্যিই নেশা ধরানো ব্যাপার আছে! কবি সাহিত্যিকরা যে একেবারে অনভিজ্ঞ না সেটা বেশ বুঝতে পারলাম। চায়ের দোকানদারটি অর্ডার বোধক দৃষ্টিমেখে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।
চায়ের দোকানদাররা বাংলাদেশে সাধারনত জাতীয় মামা উপাধি ক্যারি করে, তাই আমিও তাকে বললাম - মামা একটা চা দেন। একটু কাঁচা পাত্তি উপরে ছিটা দিয়া দিয়েন। উনি ঘোলা ময়লা পানিতে (গজনি ছবিতে যেমন দেখায়) কাপ চুবিয়ে কাপে লিকার ঢালতে লাগলো। আমার পেট হালকা পাঁক দিয়ে উঠলো {বমির উদ্রেক(সুশীলদের জন্য )}।
মনকে এবার একটু অন্যদিকে ফেরানো দরকার মনে হলো।
লোকজন এখানে পার্লামেন্ট বসিয়ে দিয়েছে। সবাই বিরোধী দল। এখানের পার্লামেন্টে সরকার দল ওয়াক আউট করেছে। সব কিছু নিয়েই সমালচনা হচ্ছে। সেইখানেও কেউ একমত না। মনে হচ্ছে ঐক্যমত এখানে - না ঘার কা না ঘাট কা। আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগলো। বেশ মজার তর্ক জমেছে।
মামা নেন।
আমি চমকে চায়ের দোকানদারের হাত থেকে চায়ের কাপটা হাতে নিলাম। লোকজনের কথা শুনতে শুনতে আনমনে চুমুক দিলাম। আহ্ ! চা'টা বেশ লাগছে। আয়েশ করে আরেকটা চুমুক দিয়ে কথা শুনতে লাগলাম।
= এক বুড়ো মুখে পানঃ এমুন দিনে কেউ হালায় এইরম বৃষ্টি দেখছে ? দেশটা যাইতাসে হালায় কোন মিহি- এটা বলতে বলতে পানের পিক বৃষ্টির পানিতে ফেললো। সেই লাল পিক দোকানে দাঁড়ানো লোকের দিকেই ভেসে আসতে লাগলো।
= এক ভদ্রলোক সার্ট ইন করাঃ আরো আওয়ামিলীগেরে ভোট দেন এই কথা বলেই সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁঝালো গলায় বললো- আরে মিয়া এইটা কী করলেন ? কমনসেন্স নাই আপনের। ধুর মিয়া। ধুর। পিক এই দিকে ভাইসসা আসতাসে। ধুর।
= এক লম্বা লোকঃ এটা গ্রীন হাউজ এফেক্ট ভাই। আম্রিকাই এর জন্য দায়ী। দেখেননা কী গরম পরে। দেশে ঝড়-বাদলের ঠিকঠিকানা নাই। বলে চারদিকে সমর্থনের জন্যে তাকাতে লাগলো।
= আরেক লোক চশমা পরাঃ চশমার কাঁচ মুছতে মুছতে - এটার সাথে আওয়ামিলীগের কী সম্পর্ক? আপনারা সব কিছুতেই রাজনীতি টেনে আনেন। এটা ঠিক না মোটেই।
= সার্ট ইন করা ভদ্রলোকঃ এইটা কোনও নির্বাচন হইছে ? আপনেই বলেন? গ্যাসে কেউ ভোট দিতে?
= চশমা পরা ভদ্রলোকঃ ঠোট শক্ত করে বলল- বিএনপি নির্বাচনে গেলো না কেন ভাই ?
= লম্বা লোকটিঃ আমি কোথায় আওয়ামিলীগ টানলাম ?
= চশমা পরা ভদ্রলোকঃ বিরক্ত হয়ে বলল- আরে ভাই আপনাকে বলিনাই।
= এক যুবক টী-সার্ট পরাঃ মাথার ভেজা চুল টানতে টানতে বলল- বিএনপি শেষ। নির্বাচন করুক আর না করুক। এরা যুদ্ধাপরাধীদের সাথে আছে। জামাত না ছাড়লে এই দলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। মুসলিম লীগের মতো হবে।
= এক চাচা মিয়াঁঃ ঐ পোলা, তুমি মুক্তিযুদ্ধের কী জানো ? জন্মইতো হয়নাই তোমার। হোনো, মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামিলীগ করেনাই । বিএনপিই মুক্তিযুদ্ধ করছে। সব আওয়ামি শালারা ভারতের দাদা'দের গোলাম। আর বিএনপির শহীদ জিয়া হচ্ছে সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা।
= শুকনা লোক উনিও চশমাওয়ালাঃ হতভম্ব গলায় বলল- চাচা শেখ মুজিবেরে ভুইলা গেলেন ? আওয়ামিলীগ কোন আন্দোলন করেনাই একাত্তুরে ? মুজিব বাহিনীর নাম শোনেন নাই? সে যে এই দেশটারেই জন্মদিলো ? সে যে জাতির পিতা ভুইলা গেলেন? আপনেতো চাচা রাজাকার। আজব পাবলিক। আজব।
= এক হুজুরঃ আমি কোন রাজনীতি করিনা। কোন রাজনৈতিক কথাও আমি বলতে চাইনা। শুধু একটা কথা বলি- আমাদের জাতির পিতা হচ্ছে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)। শেখ মুজিব আমাদের জাতির পিতা না। এটা নাফরমানি। হিন্দুয়ানি। গান্ধীবাদ। এই কথা কওয়ার সাহস কারো নাই। তবু একজন মুসলমান হিসেবে আমি শেখ মুজিবেরে জাতির পিতা মানুম না। মুসলমানের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)।
= আমিঃ মামা একটা সিগেরেট দেন। ব্যানসন সুইচ। আর কাপটা নেন।
= এক চাচা মিয়াঁঃ (শুকনা চশমাওয়ালাকে) - থুতু ছিটিয়ে- তুমিতো একটা বেয়াদব। শাহবাগি। তোমরাতো ব্লগার। নাস্তিক। দেশ থাইক্যা ধর্ম উঠায়ে দিতে চাও। তোমাগো হিসেবেতো আওয়ামিলীগের বিপক্ষে কিছু কইলেই রাজাকার।
চশমাওয়ালা শুকনা লোকটাঃ আপনে স্যাকুলারিজম বোঝেন? ডেমোক্রেসি বোঝেন? ৭২ এর সংবিধান কী ছিল জানেন ? আন্দাজে পক পক করেন। চুপ থাকেন মিয়া।
= লম্বা লোকটিঃ হুজুরকে- মানে ? আমিতো হিন্দু । আমার জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) হয় কেমনে ? আর হুজুর আপনের পাকিস্তানের জাতির পিতা জিন্নার বেলায় সব ঠিক আছে ?
= সার্ট ইন করা ভদ্রলোকঃ আরে মুক্তযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ করেন , দেশে এখন জালিম সরকার। মুক্তিযুদ্ধ কইরা এদেশটা কি পাইছে ? এর চেয়ে পাকিস্তানই ভালোছিল।
= চশমা পরা ভদ্রলোকঃ পাকিস্তান এক ব্যার্থ রাষ্ট্র। বাংলাদেশটারে যখন চুইস্যা খাইছে তখন আপনে কই আসিলেন ? করাচী ? আমরা ওগো চেয়ে বহুত ভালো আছি। যান দুনিয়ার খবর লইয়া দেখেন।
= হুজুরঃ ইন্ডিয়া আমাগো মুসলমানে-মুসলমানে বিভেদ করছে। রবীন্দ্রনাথ , এই হিন্দু লোকটাও চায় নাই মুসলমানের একটা দ্যাশ হোক। আফসোস হ্যার লেখা গান আমাগো জাতীয় সংগীত। উর্দুতে একটা লাইন লিখতে দিলে পারবো না অথচ হ্যারে দিসে নোবেল প্রাইস।
= চশমাওয়ালা শুকনা লোকটাঃ ভাই কথা বলতে হলে জাইন্যা আসেন আগে। আপনেগরে কিছু কইয়া লাভ নাই। আপনাগো ব্রেন ওয়াশ।
= পান মুখে বুড়োঃ আরে হালায় বাচুম আর কয়দিন। আল্লা আল্লা কইরা দুনারতে যাইতে পারলেই হইছে। আল্লার এবাদত বন্দিগি করুম। আল্লায় দেখবো, প্যাঁচাল বাড়াইয়া লাভ নাইক্কা। থামেন ।
= আমিঃ দেখি মামা আরেকটা সিগেরেট। সুইচ। কত হইছে ?
= এক ফোন ব্যাবহারকারিঃ ফোনে চিৎকার করে কাকে যেন বলছে- হ, আরে হ, না না, বৃষ্টি। দুনিয়ার প্যারা। জ্যাম। দেখি আমু। চায়ের দোকানে আটকা। রাখ রাখ। হ। কল দিমুনে। আইচ্ছা। আইচ্ছা।
সবাই চুপ দেখে চা'ওয়ালা মামা হাসতে হাসতে বলল- আইচ্ছা এত যে সবাই কথা কইলেন পারলে কন দেহি এই দেশটার নাম কী ?
কেউ কোন উত্তর দিলো না। সবার ভাবটা এমন এতো সহজ প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা মুর্খামি।
আমি একেবারেই চুপ ছিলাম তাই হয়তো বললাম কেন- বাংলাদেশ ?
চা'ওয়ালা ভাংতি টাকা দিতে দিতে হাসি মুখে বললো- আপনেরা অনেক শিক্ষিত লোকেই জানেন না। আমারে এক স্কুল পড়ুয়া মামায় টেকার মইদ্দে দেহাইছে।
এই দেশের নাম হইলো- গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
আমি উত্তর শুনে বেকুব হইয়া গেলাম।
বৃষ্টি ধরে এসেছে। একে একে সবাই বাইরে নেমে গেলো...
- অনি।
২০/০৮/১৫
রাত- ১১ঃ৮
বাংলাদেশের আবহাওয়ার এখন আর কোন ঠিক ঠিকানা নেই। ভাদ্র মাসের তাল পাকা গরমেও শ্রাবন মাসের ঢল নামছে। আমি বৃষ্টি দেখে দৌড়ে পাশের এক চায়ের দোকানে চট করে ঢুকে গেলাম। ছোট্ট একটি ছাউনির নিচে প্রায় চোদ্দ-পনের জন মানুষ। আমি একটু ঠেলেঠুলে ভিতরের দিকে ঢুকলাম। ঝমঝম না - টাসটাস শব্দে বৃষ্টি পরেছে। পানির ফোটার সাইজও মাশাল্লাহ বয়লার মুরগীর মতো, হাইব্রিড। যারা বাইরের দিকে দাঁড়িয়ে সবার প্যান্ট প্রায় অর্ধেক কাদার ছিটা লাগছে। বৃষ্টির ফোটা কাদা ছিটাচ্ছে। আর তারা মুখ দিয়ে বিচিত্র ভাবে বিরক্তি প্রকাশ করছে। আমি ভিতরে ঢুকে ভেবেছিলাম বেঁচেছি- কাদা ছিটবেনা। এখন দেখছি হালকা ভেজা মানুষের শরীর থেকে পাকস্থলী বের হয়ে আসার মতো চুকা চুকা (টক টক) গন্ধ আসছে। মাথা ঝিমঝিম করছে আমার গন্ধে। মানুষের শরীরের গন্ধে তাহলে সত্যিই নেশা ধরানো ব্যাপার আছে! কবি সাহিত্যিকরা যে একেবারে অনভিজ্ঞ না সেটা বেশ বুঝতে পারলাম। চায়ের দোকানদারটি অর্ডার বোধক দৃষ্টিমেখে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।
চায়ের দোকানদাররা বাংলাদেশে সাধারনত জাতীয় মামা উপাধি ক্যারি করে, তাই আমিও তাকে বললাম - মামা একটা চা দেন। একটু কাঁচা পাত্তি উপরে ছিটা দিয়া দিয়েন। উনি ঘোলা ময়লা পানিতে (গজনি ছবিতে যেমন দেখায়) কাপ চুবিয়ে কাপে লিকার ঢালতে লাগলো। আমার পেট হালকা পাঁক দিয়ে উঠলো {বমির উদ্রেক(সুশীলদের জন্য )}।
মনকে এবার একটু অন্যদিকে ফেরানো দরকার মনে হলো।
লোকজন এখানে পার্লামেন্ট বসিয়ে দিয়েছে। সবাই বিরোধী দল। এখানের পার্লামেন্টে সরকার দল ওয়াক আউট করেছে। সব কিছু নিয়েই সমালচনা হচ্ছে। সেইখানেও কেউ একমত না। মনে হচ্ছে ঐক্যমত এখানে - না ঘার কা না ঘাট কা। আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগলো। বেশ মজার তর্ক জমেছে।
মামা নেন।
আমি চমকে চায়ের দোকানদারের হাত থেকে চায়ের কাপটা হাতে নিলাম। লোকজনের কথা শুনতে শুনতে আনমনে চুমুক দিলাম। আহ্ ! চা'টা বেশ লাগছে। আয়েশ করে আরেকটা চুমুক দিয়ে কথা শুনতে লাগলাম।
= এক বুড়ো মুখে পানঃ এমুন দিনে কেউ হালায় এইরম বৃষ্টি দেখছে ? দেশটা যাইতাসে হালায় কোন মিহি- এটা বলতে বলতে পানের পিক বৃষ্টির পানিতে ফেললো। সেই লাল পিক দোকানে দাঁড়ানো লোকের দিকেই ভেসে আসতে লাগলো।
= এক ভদ্রলোক সার্ট ইন করাঃ আরো আওয়ামিলীগেরে ভোট দেন এই কথা বলেই সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁঝালো গলায় বললো- আরে মিয়া এইটা কী করলেন ? কমনসেন্স নাই আপনের। ধুর মিয়া। ধুর। পিক এই দিকে ভাইসসা আসতাসে। ধুর।
= এক লম্বা লোকঃ এটা গ্রীন হাউজ এফেক্ট ভাই। আম্রিকাই এর জন্য দায়ী। দেখেননা কী গরম পরে। দেশে ঝড়-বাদলের ঠিকঠিকানা নাই। বলে চারদিকে সমর্থনের জন্যে তাকাতে লাগলো।
= আরেক লোক চশমা পরাঃ চশমার কাঁচ মুছতে মুছতে - এটার সাথে আওয়ামিলীগের কী সম্পর্ক? আপনারা সব কিছুতেই রাজনীতি টেনে আনেন। এটা ঠিক না মোটেই।
= সার্ট ইন করা ভদ্রলোকঃ এইটা কোনও নির্বাচন হইছে ? আপনেই বলেন? গ্যাসে কেউ ভোট দিতে?
= চশমা পরা ভদ্রলোকঃ ঠোট শক্ত করে বলল- বিএনপি নির্বাচনে গেলো না কেন ভাই ?
= লম্বা লোকটিঃ আমি কোথায় আওয়ামিলীগ টানলাম ?
= চশমা পরা ভদ্রলোকঃ বিরক্ত হয়ে বলল- আরে ভাই আপনাকে বলিনাই।
= এক যুবক টী-সার্ট পরাঃ মাথার ভেজা চুল টানতে টানতে বলল- বিএনপি শেষ। নির্বাচন করুক আর না করুক। এরা যুদ্ধাপরাধীদের সাথে আছে। জামাত না ছাড়লে এই দলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। মুসলিম লীগের মতো হবে।
= এক চাচা মিয়াঁঃ ঐ পোলা, তুমি মুক্তিযুদ্ধের কী জানো ? জন্মইতো হয়নাই তোমার। হোনো, মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামিলীগ করেনাই । বিএনপিই মুক্তিযুদ্ধ করছে। সব আওয়ামি শালারা ভারতের দাদা'দের গোলাম। আর বিএনপির শহীদ জিয়া হচ্ছে সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা।
= শুকনা লোক উনিও চশমাওয়ালাঃ হতভম্ব গলায় বলল- চাচা শেখ মুজিবেরে ভুইলা গেলেন ? আওয়ামিলীগ কোন আন্দোলন করেনাই একাত্তুরে ? মুজিব বাহিনীর নাম শোনেন নাই? সে যে এই দেশটারেই জন্মদিলো ? সে যে জাতির পিতা ভুইলা গেলেন? আপনেতো চাচা রাজাকার। আজব পাবলিক। আজব।
= এক হুজুরঃ আমি কোন রাজনীতি করিনা। কোন রাজনৈতিক কথাও আমি বলতে চাইনা। শুধু একটা কথা বলি- আমাদের জাতির পিতা হচ্ছে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)। শেখ মুজিব আমাদের জাতির পিতা না। এটা নাফরমানি। হিন্দুয়ানি। গান্ধীবাদ। এই কথা কওয়ার সাহস কারো নাই। তবু একজন মুসলমান হিসেবে আমি শেখ মুজিবেরে জাতির পিতা মানুম না। মুসলমানের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)।
= আমিঃ মামা একটা সিগেরেট দেন। ব্যানসন সুইচ। আর কাপটা নেন।
= এক চাচা মিয়াঁঃ (শুকনা চশমাওয়ালাকে) - থুতু ছিটিয়ে- তুমিতো একটা বেয়াদব। শাহবাগি। তোমরাতো ব্লগার। নাস্তিক। দেশ থাইক্যা ধর্ম উঠায়ে দিতে চাও। তোমাগো হিসেবেতো আওয়ামিলীগের বিপক্ষে কিছু কইলেই রাজাকার।
চশমাওয়ালা শুকনা লোকটাঃ আপনে স্যাকুলারিজম বোঝেন? ডেমোক্রেসি বোঝেন? ৭২ এর সংবিধান কী ছিল জানেন ? আন্দাজে পক পক করেন। চুপ থাকেন মিয়া।
= লম্বা লোকটিঃ হুজুরকে- মানে ? আমিতো হিন্দু । আমার জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) হয় কেমনে ? আর হুজুর আপনের পাকিস্তানের জাতির পিতা জিন্নার বেলায় সব ঠিক আছে ?
= সার্ট ইন করা ভদ্রলোকঃ আরে মুক্তযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ করেন , দেশে এখন জালিম সরকার। মুক্তিযুদ্ধ কইরা এদেশটা কি পাইছে ? এর চেয়ে পাকিস্তানই ভালোছিল।
= চশমা পরা ভদ্রলোকঃ পাকিস্তান এক ব্যার্থ রাষ্ট্র। বাংলাদেশটারে যখন চুইস্যা খাইছে তখন আপনে কই আসিলেন ? করাচী ? আমরা ওগো চেয়ে বহুত ভালো আছি। যান দুনিয়ার খবর লইয়া দেখেন।
= হুজুরঃ ইন্ডিয়া আমাগো মুসলমানে-মুসলমানে বিভেদ করছে। রবীন্দ্রনাথ , এই হিন্দু লোকটাও চায় নাই মুসলমানের একটা দ্যাশ হোক। আফসোস হ্যার লেখা গান আমাগো জাতীয় সংগীত। উর্দুতে একটা লাইন লিখতে দিলে পারবো না অথচ হ্যারে দিসে নোবেল প্রাইস।
= চশমাওয়ালা শুকনা লোকটাঃ ভাই কথা বলতে হলে জাইন্যা আসেন আগে। আপনেগরে কিছু কইয়া লাভ নাই। আপনাগো ব্রেন ওয়াশ।
= পান মুখে বুড়োঃ আরে হালায় বাচুম আর কয়দিন। আল্লা আল্লা কইরা দুনারতে যাইতে পারলেই হইছে। আল্লার এবাদত বন্দিগি করুম। আল্লায় দেখবো, প্যাঁচাল বাড়াইয়া লাভ নাইক্কা। থামেন ।
= আমিঃ দেখি মামা আরেকটা সিগেরেট। সুইচ। কত হইছে ?
= এক ফোন ব্যাবহারকারিঃ ফোনে চিৎকার করে কাকে যেন বলছে- হ, আরে হ, না না, বৃষ্টি। দুনিয়ার প্যারা। জ্যাম। দেখি আমু। চায়ের দোকানে আটকা। রাখ রাখ। হ। কল দিমুনে। আইচ্ছা। আইচ্ছা।
সবাই চুপ দেখে চা'ওয়ালা মামা হাসতে হাসতে বলল- আইচ্ছা এত যে সবাই কথা কইলেন পারলে কন দেহি এই দেশটার নাম কী ?
কেউ কোন উত্তর দিলো না। সবার ভাবটা এমন এতো সহজ প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা মুর্খামি।
আমি একেবারেই চুপ ছিলাম তাই হয়তো বললাম কেন- বাংলাদেশ ?
চা'ওয়ালা ভাংতি টাকা দিতে দিতে হাসি মুখে বললো- আপনেরা অনেক শিক্ষিত লোকেই জানেন না। আমারে এক স্কুল পড়ুয়া মামায় টেকার মইদ্দে দেহাইছে।
এই দেশের নাম হইলো- গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
আমি উত্তর শুনে বেকুব হইয়া গেলাম।
বৃষ্টি ধরে এসেছে। একে একে সবাই বাইরে নেমে গেলো...
- অনি।
২০/০৮/১৫
রাত- ১১ঃ৮
No comments:
Post a Comment