Sunday, 6 September 2015

অফিস থেকে বাসায় ফিরেছি নটার দিকে।
আম্মু সাড়ে নটার দিকে এসে বললো -
তোর কাছে একটা রিকোয়েস্ট, আজ রাতে জোড়ে গান শুনিস না। আসেপাশের বাসা থেকে অবজেকশন আসতে পারে। আমি উত্তর দেয়ার আগেই আম্মু চলে গেল। আমি শুয়ে শুয়ে পা নাচাচ্ছি। RLS restless leg syndrome. আমি গান না শুনে থাকতে পারিনা। আমাকে হয় গান শুনতে হবে আর নাহয় নিজের গুনগুন করতে হবে। আর হেড ফোনেই হোক আর সাউন্ড বক্সে আমাকে গান জোড়ে শুনতে হবে। এখন কি করি। নিজে গান বন্ধ করলে ঠিক আছে। কিন্তু যদি চাপে পরে বন্ধ করতে হয় তখন আর ভাল্লাগেনা। এর মধ্যে কম্পিউটার নেট নেই কয়েকদিন। লাইন কাটা। সময়ের অভাবে ওদের ডাকা হচ্ছেনা। যেহেতু কাল ছুটি বাসায়ই থাকবো তাই সার্ভিস প্রভাইডার কে ফোন দিলাম। তারা জানালো- স্যার আপনার এলাকাতেই আমাদের আর লাইন নাই।
আমিতো হতভম্ব - বলে কী?
আমি বললাম কেন?
তারা বলল আপনাদের এলাকা যাদের তারা লাইন দিবে। আমাদের এলাকা ভিন্ন। আপনি ওদের অফিসে যোগাযোগ করেন। ওরা সন্ত্রাস। আমাদের সাথে গ্যাঞ্জাম চলছে।
আমি মনে মনে বললাম বাহ।
আমি ৩.৫ এমবি লাইন চালাই। আনলিমিটেড। কোনও ডিস্টার্ব নেই। 1080p আমি without buffering দেখি। এখন আমার কী হবে? যারা জোড় করে অন্যের ব্যাবসা বন্ধ করে তাদের কাস্টমার হওয়া কতটুকু সেইফ হবে। এইসব ভাবতে ভাবতে মনে হল এক কাজ করি - বই পড়ি। খটমট জ্ঞানের বই না। ইন্টারেস্টিং কোন বই যেটা পড়ে বর্তমানের মেজাজ খারাপ ভাবটা কাটবে। আমার রুমে নিজের জন্য একটা ছোট লাইব্রেরি আছে। সেখানে খুজে খুজে একটা বই পেলাম যেটার নাম পড়ে মনে হল ইন্টারেস্টিং। নাম - সোলেনানিয়া যাদুকরের যাদু রহস্য বা বৃহত তন্ত্রোক্ত সাধনায় তান্ত্রিক ক্রিয়াকান্ড মঞ্জুরী। বইয়ের নামই বইয়ের মলাটের অর্ধেক। ওটা টেনে নিয়ে বিছানায় গেলাম। ভাবছি একটু তন্ত্রমন্ত্র শিখি। তখনি বিদ্যুৎ চলে গেল। আমি মনে মনে আবার বললাম - বাহ! বাহ বাহ!!
রাগে চুপ করে আছি। হঠাৎ শরীর ঝাকি খেয়ে উঠল পটকা ফাটার আওয়াজে। ধাতস্থ হতে হতে মাইকে শুরু হল বয়ান। সবেবরাতের বয়ান।
হুজুর বয়ান করছেন ইব্রাহীম কে তার দাসী প্রতিদিন চল্লিশ মন ফুল দিয়ে বিছানা করে দিত। আর ইব্রাহীম সেখানে ঘুমাতেন। পরের দিন আবার চল্লিশ মন ফুলের নতুন বিছানা। আমি বয়ান শুনতে শুনতে ভাবছি আহারে আহারে কি সত্যি বয়ান। মসজিদের মুসল্লিরা ধন্য। থাক ওনারা বয়ান শুনুক। আমি বারান্দায় বসে একটা সিগেরেট ধরাই। আর ভাবি চল্লিশ মন ফুলের পাপড়ি আসলে কতটুকু...
বারান্দায় গিয়ে আবার অবাক!
আকাশে বিশাল এক চাঁদ উঠেছে।
আমি জানিনা আজ পূর্নিমা কিনা। তবুও মনে হল আজ ফুলমুন। কালো মেঘের ফাকে ধোয়া মোছা চকচকে চাঁদ। জোছনায় পিচ্ছিল হয়ে আছে আকাশ আর মেঘের শরীর। আমি সিগেরেট ধরাতে ভুলে গেলাম। মাইকেও যেন কোন শব্দ নাই।
চাঁদটা আমাকে যেন বলছে - অনি সত্য কায়ার চেয়ে ছায়ার মায়া বেশি। বোঝ?
আমি সিগেরেট জ্বালালাম।
চেয়ারে বসলাম।
এই চাঁদ দেখেছেন গৌতম বুদ্ধ, দেখেছেন রবীন্দ্রনাথ, দেখেছেন হুমায়ুন, এখন আমার মনে জিজ্ঞাসা চাঁদ তাদের কে কি বলেছিল?

আমার ফোন বাজে আমি যাই।

- অনি
রাত - ১১:১৬
০২/০৬/১৫

No comments:

Post a Comment